ধ্বংসস্তূপের জরায়ুতে
এক দেবী থিতিয়ে আছেন —
পাঁজরের ফাটলে গুঁজে রাখা শ্লোকের ছাই,
স্তনের অর্ধেক ভূগর্ভে পচনশীল,
বাকি অর্ধেক —
শুকনো রক্তের কলঙ্কে জারিত বিবশ মহাকাব্য।
প্রাচীরের প্রতিটি ফাটলে
আশ্রয় নিয়েছে শকুনের ঠোঁট-বাক্য,
যেখানে একদিন ক্রুশ দাঁড়িয়ে থাকতো,
এখন সেখানে ঝুলছে চামড়া-খচিত অন্ধ ঈশ্বর,
যার মূত্রনালী দিয়ে প্রবাহিত হয়
ভুলে যাওয়া উপাসনার মৃত জল।
গির্জার প্রাচীরের প্রতিটি ইট
স্মৃতির মরিচা ধরা নখরে খোদাই করা —
একবার কোনো ঈশ্বর বলেছিল,
“আমার স্বপ্ন ভেঙে গেলে পাথর জন্ম নেয়।”
সেই পাথরের গর্ভেই এখন কান্না পোতা।
আর দেবী?
সে যেন এক উচ্ছিষ্ট দেহভস্ম,
যাকে কোনো সাধু কুম্ভ মেলায় ভুলে রেখে গেছে।
প্রতিটি শেওলায়,
অথবা ধূলোর আড়ালে জেগে থাকা ফাটলে
যেখানে প্রার্থনার ছাই জমে,
তুমি যদি কান পেতে শোনো —
শুনতে পাবে শিশিরের মতো
এক ঈশ্বরের নাভিমূল ফুঁড়ে আসা হাহাকার।
এই কান্না দেবীর নয়,
এটা এক পাপমগ্ন পাণ্ডুলিপির শিরা ছিঁড়ে ফেলা রক্তধ্বনি —
যেখানে যৌনাঙ্গ আর ঈশ্বরের নাম
একই বাক্যে মিশে গিয়েছিল একদিন।
দেবী কাঁদেন,
কারণ তার কোনো উপাসক নেই —
যারা এসেছিল, তারা সবাই
মোমবাতির আলোয় নিজের ছায়ায় ধ্বংস হয়েছে।
তারা দেবীকে ছিঁড়েছে
শ্লোকের মতো, স্তনের মতো,
জিহ্বায় রেখে রেখে চেটে খেয়েছে তার প্রার্থনা।
আর আজ, এই ভাঙা গির্জার নিচে
দেবীর কান্না ছড়িয়ে আছে বালির রন্ধ্রে,
মাটির নাভি ফুঁড়ে উঠে আসে
নষ্ট পাঁজরের ঈশ্বরবর্জ্য।
সেই কান্না শোনার জন্য
তোমাকে শুয়ে পড়তে হবে
একদা দগ্ধ উপাসনার কবরের উপর —
যেখানে রাত্রি আর প্রার্থনার ভ্রূণ একসাথে পচে
জন্ম দেয় মৃত সূর্যের।
শুনবে তখন —
দেবী কীভাবে নিজের জরায়ুতে
একজন বিশ্বাসঘাতক ঈশ্বরকে জন্ম দিয়েছিলেন,
আর সেই ঈশ্বরই
তার স্তন কেটে তারই রক্তে লিখেছিল
মৃত্যুর মহাগীত।
তখন তুমি বুঝবে,
এই কান্না আসলে তোমারই —
যখন তুমি এক নিঃসঙ্গ রাতে
নিজের দেবতার নাম ভুলে গেলে
অথবা তার শরীরের গন্ধকে কামনা করলে।
এই মহাকাব্য শেষ হয়েও শেষ নয়।
কারণ প্রতিটি পাথরের জরায়ুতে এখনো জন্ম নেয় এক দেবী —
সে কাঁদে না আর চোখ দিয়ে,
সে কাঁদে তোমার ফেলে যাওয়া ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করে।
এই কান্না মুছে ফেলতে চাইলে
তোমাকে ফিরে যেতে হবে
নিজের ধ্বংসস্তূপের নিচে,
সেই ভাঙা প্রার্থনার ভিতর,
যেখানে তুমি নিজেই একদিন
দেবীকে হত্যা করেছিলে
শুধু তার স্তনের রক্তে তোমার নাম লিখতে।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন