বাংলায় বামেরা এক ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দিয়েছে
বাংলায় বামেরা এক ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দিয়েছে
নন্দ দুলাল মন্ডল

আলোচনা - বাংলায় বামেরা এক ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দিয়েছে

লেখক: নন্দ দুলাল মন্ডল
প্রকাশ - মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

কমিউনিস্ট হতে গেলে কি নাস্তিক হতে হবে?
বা নিপীড়িত মানুষের ধর্ম ও ধর্ম বিশ্বাসকে অস্বীকার করতে হবে এমনটাই বোধহয় সেই ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি এ দেশের, বিশেষত বাংলা বামেদের কাছ থেকে।
জানিনা এসব নিয়ে কথা বলার জন্য আমি কতটুকু যোগ্য। তবুও একটু অবাধ্য হয়ে দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছি আরকি।
ধর্ম ও নাস্তিকতা নিয়ে বাংলার বামেদের যে ধারণা আমি দেখেছি খানিকটা  মার্ক্স পড়ার পরে কোথাও গিয়ে তা মনে হয় মার্ক্স এর সাথে পুরোপুরি মেলে না।
ক্যাপিটালিজম এ ক্যাপিটাল ই ঈশ্বর। তারা বারেবারে নিজ সুবিধার্থে ধর্মকে বারে বারে নতুন  রূপ দিয়েছে। তারা ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্ম কে প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম বানিয়েছে। হিন্দু ধর্মে বেদ উপনিষদে জায়গা নিয়েছে গীতা । আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন ১৭৭৫ সালের আগে গীতা বলে তেমন কোনো মুদ্রিত বই ছিল না। ওয়ারেন হেস্টিং কিভাবে সেটাকে একটি বইয়ের রূপ দিয়েছে। কিংবা ইসলামের সুদ(হারাম) কে বাস্তব জীবনে সেবায় পরিনত করেছি। কত মুসলিম আজ নির্দ্বিধায় সুদ দেওয়া নেওয়া করছে। এই সুদ দেওয়া নেওয়া খারাপ না ভালো সেই প্রসঙ্গে আমি যাচ্ছি না। আমি বলতে চাইছি কিভাবে নীরবে এর মেটামরফোসিস ঘটেছে এবং সেই রুপান্তর  আদেও কি আমাদের স্পর্শ করছে?
আমরা দেখেছি মহাভারতে বারেবারে যে ধর্ম শব্দের ব্যবহার হয়েছে তার অর্থ প্রচলিত প্রতিষ্ঠানিক ধর্ম(হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান ইত্যাদি) নয়।  তার অর্থ রাজনৈতিক শাস্র, নীতিশাস্ত্র, আইনশাস্র ইত্যাদি। সেই সময় আইন এবং বিচার ব্যবস্থাকেই মূলত বোঝানো হতো, এবং এই কারনেই বোধহয় আদালতে বিচারককে ধর্মাবতার বলে সম্বোধন করা হয়।
তাই মার্ক্স নিজেও বারে বারে প্রশ্ন করেছিলেন প্রাচ্যের ইতিহাস কেন সব সময় ধর্মের ইতিহাস হিসেবে হাজির হয়?
গামসি তার প্রিজন নোটস এ লিখছেন – \” The principle elements of common sense are furnished by religion, and so the relationship between religion and common sense is much more intimate than that between common sense and the philosophical systems of the intellectuals \”
লেনিন বারে বারে ধর্মীয় অসঙ্গতি শব্দটি ব্যবহার করেছেন,ধর্ম নয়।
আসলে সমস্যা হচ্ছে জার্মান বস্তবাদ আর ভাববাদের জটিল বিষয় গুলো মার্ক্স যেভাবে একটা নতুন দিকে উন্মোচন করেছেন তা বুঝতে কোথাও গিয়ে ব্যর্থ বাংলার বামপন্থীরা। তারা ফরেরবাখের দর্শনকেই মার্ক্সবাদ বলে যে ভুল করেছিলেন তার মাশুল বর্তমান নব বামেরাও দিচ্ছে বলেই আমার ধারণা।
বাংলার বামেদের মধ্যে ধর্ম বিষয়ে একটা কথা খুব প্রচলিত –
\” ধর্ম হচ্ছে আফিমের মতো \”
এ বিষয়ে বলার আগে একটা ছোটো গল্প জানা দরকার, ১৮০৪ এ মার্ক্স এর জন্মের ঠিক কয়েক বছর আগেই জার্মান ফ্রেডারিখ স্ট্রুনার আফিম থেকে এ যাবতকালের শ্রেষ্ঠ পেইনকিলার আবিস্কার করে ।
এরপরে মার্ক্স বহু বলেন ধর্ম হচ্ছে নির্যাতিত জীবের দীর্ঘশ্বাস, হৃদয়হীন জগতের হৃদয়, আত্মাহীন অবস্থার আত্মা, তাই জনগণের কাছে এটা হচ্ছে আফিমের মতো। বাংলার যে নাস্তিক বামেরা মনে করে ধর্ম ব্যক্তির মাথা থেকে এসেছে, তারা ধর্মকে কাউন্টার করতে গিয়ে ধর্ম প্রবর্তক কে আক্রমণ করে বসে বারে বারে। তারা প্রমাণ করতে চাত প্রতিটি ধর্ম প্রবর্তকই এক একজন প্রতারক।
আর এখানেই বোধহয় তারা সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।
আসলে ধর্ম এই জগতের চেতনা, যা উল্টানো একটা জগৎ। তাই জগৎ  উল্টানোর জন্য সেই জগতের চেতনাও উল্টানো । চেতনার এই উল্টে থাকাটা চেতনার সমস্যা নয় বরং সমস্যা উল্টে থাকা জগতের। তাই সোজা করতে হলে সর্ব প্রথম জগৎ কে করতে হবে।
তাই ব্যক্তিগত ভাবে কোথাও গিয়ে মনে হয় এই বাংলার বামেরা মার্ক্স কে বোঝেনি। এসি ঘরে থেকে শ্রমিকের আন্দোলনের পথ দেখানো বামেরা বোধহয় এই কারনেই তাদের গ্রহণ যোগ্যতা হারাচ্ছে ক্রমশ । ধর্ম ও ধর্মীয় রিচুয়ালস উদাসীন একজন ব্যক্তি হিসেবে সব শেষে আমি বলতে চাই এ বাংলার বামপন্থী নেতাদের থেকে ধর্ম প্রচারক চৈতন্য মহাপ্রভু, গুরুচাঁদ ঠাকুর অনেক নিখুঁত বাম ছিলেন বলেই আমার মনে হয় বারেবারে । ধর্মীয় ভাবে হলেও তিনি শ্রেণী হারা মানুষের জন্য যে বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিলেন তা এ বাংলার দাম্ভিক বামেরা কিনারা করতে পারবেনা। তার জন্যই হয়তো জনগণের কাছে তার গ্রহণ যোগ্যতা ছিলো মারাত্মক।

~নন্দ দুলাল মন্ডল
মেদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা

#তথ্যসূত্র :\”ধর্ম ও নাস্তিকতা নিয়ে বাঙালি কমিউনিস্টদের ক্রান্তি পর্ব\” – পিনাকী ভট্টাচার্য,উইকিপিডিয়া,

১৪৩
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন