আমার চোখের তলদেশে
আল মাহমুদ
একদা এমন ছিল যে, আমার চোখই ছিল সমস্ত দুঃখের আকর।
এমন কি একটা করুণ উপন্যাসও পড়তে পারতাম না আমি।
বুক ঠেলে কান্না উঠে আসতো চোখে। গাল বেয়ে নামতো ধারাজল।
উপচানো চোখ নিয়ে আমি লজ্জায় মুখ লুকাতাম।
একটা সামান্য বই নিয়ে আমার এ অবস্থা দেখে
পড়ার টেবিলে বোনেরা পাথর হয়ে যেতো। আম্মা
থমকে দাঁড়াতেন। আর আব্বা ঘরে থাকলে
সোজাসুজি বিহ্বল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে
কি যেন ভাবতে ভাবতে মসজিদে চলে যেতেন।
কিন্তু তাদের চোখ থাকতো সবর্দাই নির্জলা পাথর।
দুঃখ পেলে তারা একেবারেই কাঁদতেন না, এমন নয়।
সন্তপ্ত অথবা সন্তানহারা হলে তারাও কাঁদতেন। তাদের
চোখও ফেটে যেতো। একবার আমার কনিষ্ঠতমা বোন
নিউমোনিয়ায় মারা গেলে আম্মা অনেকদিন
কেঁদেছিলেন। সে কান্না, আমি ভুলিনি।
আমার মাকে শোকাভিভূতা ভাবলেই দৃশ্যটি
চোখের ওপর এসে দাঁড়ায়। কিন্তু আবহমান কালের মধ্যে
তারা ছিলেন বাম্পহীন। নির্জল, নির্মেষ।
আমার কৈশোর আমাকে আর্দ্র করে রেখেছিল।
আর আমার চোখ ছিল গ্রাসে ভিজানো
ইছবগুলের দানার মতো জলভরা।
এখন কিছুই পাল্টে গেছে।
যে চোখ ছিল ঝিলের ভিতর উত্থিত ফোয়ারার মতো।
এখন তার তলদেশে চকচকে বালি।
আজকাল আমার মার সাথে আমার কদাপি দেখা হয়।
মাঝে মাঝে আসেন। গ্রাম থেকে নিয়ে আসেন সরু চাল।
গাঁওয়া ঘি। খাঁটি সর্ষের তেল আর বিশুদ্ধ অনুতাপময় কান্না।
তার ধারণা শহরের ভেজালে আমার স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে।
আমার ছেলেরা ঠিকমতো বাড়ছে না।
যেমন আমি ভাবি, গ্রাম থেকে শুদ্ধ মানুষের স্রোত এসে
একদিন শহর দখল করে নেবে। তেমনি।
আমরা দুদিক থেকে দুজনকে দেখি।
আমার মার শুধু অভিযোগ আর অভিযোগ
একবার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। একবার বোন আর
বহমান কালের বিরুদ্ধে। তারপর
অবিরল কান্না।
আমার বাপ নেই। থাকলে
তিনিও কি কাঁদতেন?
তবু আমার জননী বাপাকুল চোখে কেন আমার
চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকেন?
আমি অবশ্য সান্ত্বনাচ্ছলে তাকে ধমক লাগাই।
তার কান্না থামে না।
তাকে সংসার চালাবার মতো টাকা দিই। কিন্তু
আমার চোখ শুকনো থাকে। যেন
সকালের সংবাদপত্রের দুটি জাজ্বল্যমান
আন্তর্জাতিক হেডলাইন।
এমন কি একটা করুণ উপন্যাসও পড়তে পারতাম না আমি।
বুক ঠেলে কান্না উঠে আসতো চোখে। গাল বেয়ে নামতো ধারাজল।
উপচানো চোখ নিয়ে আমি লজ্জায় মুখ লুকাতাম।
একটা সামান্য বই নিয়ে আমার এ অবস্থা দেখে
পড়ার টেবিলে বোনেরা পাথর হয়ে যেতো। আম্মা
থমকে দাঁড়াতেন। আর আব্বা ঘরে থাকলে
সোজাসুজি বিহ্বল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে
কি যেন ভাবতে ভাবতে মসজিদে চলে যেতেন।
কিন্তু তাদের চোখ থাকতো সবর্দাই নির্জলা পাথর।
দুঃখ পেলে তারা একেবারেই কাঁদতেন না, এমন নয়।
সন্তপ্ত অথবা সন্তানহারা হলে তারাও কাঁদতেন। তাদের
চোখও ফেটে যেতো। একবার আমার কনিষ্ঠতমা বোন
নিউমোনিয়ায় মারা গেলে আম্মা অনেকদিন
কেঁদেছিলেন। সে কান্না, আমি ভুলিনি।
আমার মাকে শোকাভিভূতা ভাবলেই দৃশ্যটি
চোখের ওপর এসে দাঁড়ায়। কিন্তু আবহমান কালের মধ্যে
তারা ছিলেন বাম্পহীন। নির্জল, নির্মেষ।
আমার কৈশোর আমাকে আর্দ্র করে রেখেছিল।
আর আমার চোখ ছিল গ্রাসে ভিজানো
ইছবগুলের দানার মতো জলভরা।
এখন কিছুই পাল্টে গেছে।
যে চোখ ছিল ঝিলের ভিতর উত্থিত ফোয়ারার মতো।
এখন তার তলদেশে চকচকে বালি।
আজকাল আমার মার সাথে আমার কদাপি দেখা হয়।
মাঝে মাঝে আসেন। গ্রাম থেকে নিয়ে আসেন সরু চাল।
গাঁওয়া ঘি। খাঁটি সর্ষের তেল আর বিশুদ্ধ অনুতাপময় কান্না।
তার ধারণা শহরের ভেজালে আমার স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে।
আমার ছেলেরা ঠিকমতো বাড়ছে না।
যেমন আমি ভাবি, গ্রাম থেকে শুদ্ধ মানুষের স্রোত এসে
একদিন শহর দখল করে নেবে। তেমনি।
আমরা দুদিক থেকে দুজনকে দেখি।
আমার মার শুধু অভিযোগ আর অভিযোগ
একবার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। একবার বোন আর
বহমান কালের বিরুদ্ধে। তারপর
অবিরল কান্না।
আমার বাপ নেই। থাকলে
তিনিও কি কাঁদতেন?
তবু আমার জননী বাপাকুল চোখে কেন আমার
চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকেন?
আমি অবশ্য সান্ত্বনাচ্ছলে তাকে ধমক লাগাই।
তার কান্না থামে না।
তাকে সংসার চালাবার মতো টাকা দিই। কিন্তু
আমার চোখ শুকনো থাকে। যেন
সকালের সংবাদপত্রের দুটি জাজ্বল্যমান
আন্তর্জাতিক হেডলাইন।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৮৫ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন