শামসুর রাহমান

কবিতা - বিচ্ছন্ন

লেখক: শামসুর রাহমান

এখন তোমরা কেউ আমার কথায় করবে না কর্ণপাত।
এখন তোমরা কবিতার লেজ ধরে
আছড়াতে আছড়াতে অলৌকিক বিস্ফোরণ চাও
রুটিন মাফিক।
এখন তোমরা কেউ আমার কথায় করবে না কর্ণপাত।
এখন তোমরা সব পাড়ায় পাড়ায়
ক্রোধের আগুন জ্বেলে কেবলি উঠছ মেতে গার্হস্থ্য কলহে,
মস্তানি হননে
ফেলে যাচ্ছ রক্তাপ্লুত লাশ
প্রকাশ্যে রাস্তায়।

এখন তোমরা কেউ আমার কথায় করবে না কর্ণপাত।
এখন তোমরা তোমাদের ভুবনকে
দুগ্ধপোষ্য কিন্ডারগার্টেন করে ধূর্ত কোনো হেডমাস্টারের
ছত্রচ্ছায়া চাও।

‘ডালপালা, লতাপাতা, কীটপতঙ্গকে কাছে ডাকে
বলেই না তারা রাঙা আমন্ত্রণ রক্ষায় তৎপর
হয়ে ওঠে ভোর-সন্ধে বুকে নিয়ে’-আমার এ অসমাপ্ত বাক্য
কাঁপে থরথর। ‘থামো হে গাড়ল’ বলে
আমাকে নিক্ষেপ করো গার্বেজ ডাম্পের অন্ধকারে।
আড়ালে হাঙর জেগে ওঠে নানাবিধ,
মাংস কণ্টকিত।

এখন তোমরা কেউ আমার কথায় করবে না কর্ণপাত।
গেরেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে
ছুটছ করুণা প্রেম প্রমুখের পেছনে পেছনে,
সোৎসাহে পরাচ্ছ হাতকড়া কল্যাণকে
ফাঁসি-মঞ্চে লটকাচ্ছ বিবেককে, শান্তিকে করছ একঘরে।

দূরের আকাশ থেকে আসে হাঁস, তাকে
টেনে নিয়ে বুকে ভাবি, বরং শেখাব
ভালোবাসী হয়ে যাবো দূর যৌথ স্মৃতির মায়ায়; বৃক্ষ দেখে
জাগবে নিবিড় ভ্রাতৃভাব।

হায়,
পাথর, পতঙ্গ, গাছ, পশুপাখিদের যা বলি বোঝে না তারা,
তারাও বলে না কিছু আমাকে কখনো।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৬৩ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন