রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কবিতা - অৰ্জ্জুন ও চিত্রাঙ্গদা (চিত্রাঙ্গদা)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

চিত্রাঙ্গদা

কি দেখিছ বীর!

অৰ্জ্জুন

দেখিতেছি পুষ্পবৃন্ত
ধরি’, কোমল অঙ্গুলিগুলি রচিতেছে
মালা; নিপুণতা চারুতায় দুই বােনে
মিলি, খেলা করিতেছে যেন, সারাবেলা
চঞ্চল উল্লাসে, অঙ্গুলির আগে আগে।
দেখিতেছি, আর ভাবিতেছি।

চিত্রাঙ্গদা

কি ভাবিছ?

অৰ্জ্জুন

ভাবিতেছি অমনি সুন্দর করে’ ধরে’
সরসিয়া ওই রাঙা পরশের রসে
প্রবাস-দিবসগুলি গেঁথে গেঁথে প্রিয়ে
অমনি রচিবে মালা; মাথায় পরিয়া
অক্ষয় আনন্দহার গৃহে ফিরে’ যাব।

চিত্রাঙ্গদা

এ প্রেমের গৃহ আছে?

অর্জ্জুন

গৃহ নাই?

চিত্রাঙ্গদা

নাই
গৃহে নিয়ে যাবে? বােলাে না গৃহের কথা।
গৃহ চির বরষের; নিত্য যাহা থাকে তাই
গৃহ নিয়ে যেয়াে। অরণ্যের ফুল যবে
শুকাইবে, গৃহে কোথা ফেলে’ দিবে তা’রে,
অনাদরে পাষাণের মাঝে? তা’র চেয়ে
অরণ্যের অন্তঃপুরে, নিত্য নিত্য যেথা
মরিছে অঙ্কুর, পড়িছে পল্লবরাশি,
ঝরিছে কেশর, খসিছে কুসুমদল,
ক্ষণিক জীবনগুলি ফুটিছে টুটিছে
প্রতি পলে পলে,—দিনান্তে আমার খেলা
সাঙ্গ হ’লে ঝরিব সেথায়, কাননের
শত শত সমাপ্ত সুখের সাথে। কোনাে
খেদ রহিবে না কারাে মনে।

অর্জ্জুন

এই শুধু?

চিত্রাঙ্গদা

শুধু এই। আর কিছু নয়। বীরবর
তাহে দুঃখ কেন! আলস্যের দিনে যাহা

ভালাে লাগে, আলস্যের দিনে তাহা শেষ
করে’ ফেল। সুখেরে রাখিলে ধরে’-বেঁধে’
তা’র বেশি একদণ্ড কাল, দুঃখ হ’য়ে
ওঠে। যাহা আছে তাই লও, যতক্ষণ
আছে ততক্ষণ রাখ। কামনার কালে
যতটুকু চেয়েছিলে, তৃপ্তির সন্ধ্যায়
তা’র বেশি আশা করিয়াে না।
দিন গেল।
এই মালা পর গলে। শ্রান্ত মাের তনু
ওই তব বাহুপরে টেনে লও বীর।
সন্ধি হােক অধরের সুখ-সম্মিলনে
ক্ষান্ত করি’ মিথ্যা অসন্তোষ। বাহুবন্ধে
এস বন্দী করি দোঁহে দোঁহা, প্রণয়ের
সুধাময় চির-পরাজয়ে।

অর্জ্জুন

ওই শােন
প্রিয়তমে, বনান্তের দূর লােকালয়ে
আরতির শান্তিশঙ্খ উঠিল বাজিয়া।

২১
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন