উত্তাল আবেগে অঝোরে কবিতা লিখে যাচ্ছিলাম।

আর ঐসব খসড়া কবিতাই পড়ে শোনাচ্ছিলাম তোমাকে।

অনেক কবিতাই শুনে স্তব্ধ হয়ে যেতে তুমি।

কথা বলতে পারতে না।

আমি জোর করে দু-একটা মন্তব্য শুনতাম তোমার কাছ থেকে।

আমাদের কথা চলছিল

সকালে দুপুরে বিকেলে রাতে_সব সময়।

মুখোমুখি আর টেলিফোনে আর সেলফোনে।

কোথায়-কোথায়-না আমরা মিলেছি পরস্পর।

একটিই লক্ষ্য ছিল : লোকচক্ষুর অগোচর হয় যাতে

আমাদের কথা কেউ শোনেনি।

দেখেছে-পড়েছে আমার কবিতা।

তুমি-আমিই জেনেছি

কথা আর কবিতা দুটি আলাদা জিনিস।

যে-সব কথা তুমি আমাকে বলেছ,

আমি বলেছি তোমাকে_

তা আমি কাউকে জানাতে পারি না।

লিখতেও পারি না।

চিরকালের মতো সে-সব কথা

তোমার-আমার ভেতরে বন্দি হয়ে থাকবে।

লোকে দেখবে-পড়বে শুধু আমার কবিতা।

কবিতা যে কথার ভেতরের কথা ধরতে পারে না,

সে শুধু জানি তুমি আর আমি।

তারপর এল তোমার-আমার মধ্যে সাগরপাড়ের ব্যাধি।

আমাদের কথা শেষ।

কবিতাও লিখি না আমি আর।

কথার সঙ্গে কবিতার কি তাহলে একটা সাঁকো আছে ভেতরে?

কী জানি।

তোমার সঙ্গে দেখাও হয় না আর।

কথাও হয় না।

আমার সব উত্তালতা এখন স্থির হয়ে গেছে।

যেন কোনো জাদুমন্ত্রবলে।

খাবার সময় খাই।

শোবার সময় শুয়ে পড়ি।

ডাক্তার সাহেব সব নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন।

বারান্দায় বসে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

গাছের কাছে গিয়ে বসে থাকি চুপচাপ।

আমার অতিপ্রিয় রঙ-চাও খাই না আর।

তারপর দেখা হলো তোমার সঙ্গে

তেস্রা জুলাইয়ে।

পরস্পরকে আমরা দেখলাম কি না জানি না।

আমরা বসে থাকলাম দুটি আলাদা সোফায়।

যে আমরা দেখা হলে হতাশ কলকণ্ঠ_

ফুটে উঠত তোমার মুখে জ্যোতি_

আমি যেন টগবগ করে ফুটতাম

কেশর-তোলা একটা ঘোড়ার মতো_

সেই আমাদের ভেতরে এখন স্তব্ধতা।

তোমাকে বলব বলে কত কিছু ভেবে এসেছিলাম_

কিছুই মনে পড়ছিল না।

কিছুই বলতে পারলাম না।

তুমিও না।

এক ঘণ্টা শুধু আমরা নিস্তব্ধ বসে থাকলাম মুখোমুখি।

আমার সামনে খাবার পড়ে থাকল।

রঙ-চা নিথর হয়ে গেল।

রাত্রি থেমে থাকল যেন বাইরে।

ঘণ্টা-মিনিটও নিশ্চল।

সময় হলে তুমি দরোজা খুলে দিলে।

আমি হাত তুললাম।

তুমি হাত তুললে।

আজ সকালবেলা একটা কথা জাগছে মনে।

একসময় আমরা শব্দ দিয়ে অনেক বাক্য তৈরি করেছি,

কবিতা লিখেছি আমি সেও শব্দ দিয়ে।

তেস্রা জুলাইয়ে নৈঃশব্দ্য কথা বলেছিল,

কবিতা লিখেছিল।

পরে পড়বো
৪৯
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন