মৃত্যু, হাসপাতালে হীরক জয়ন্তী

আবুল হাসান আবুল হাসান

সারারাত হীরক জয়ন্তী নয়, সারারাত শুধু সৃষ্টি হলো!
মৃত্যু আর আশার আতশজালা ভেদ করে
অরেঞ্জ স্কোয়াশের মতো ফেনাওঠা আশেপাশে বৃক্ষদল :
মনে হলো এক একটি সবুজভুক সিংহের বাহিনী!

খেতে আসে হাসপাতালের লম্বা নাকে ভরা অকসিজেন!
খেতে আসে লীভার, যকৃত, সূর্য হৃৎপিণ্ডে লুকোনো আদিম!
সারারাত বৃষ্টি হলো! চুলখোলা সবুজ বৃক্ষের ক্ষীণ কটি অশ্লীল
গহ্বর থেকে
ধুম্রজাত লোনাজল, মাটি ও মর্মের মধ্যে লোহাখনি অন্ধকারে
সমুদ্রের তীব্র লোনা খর স্রোতে বুলালো সুপক্ক মৃত্যু!

তবু ঐ, ঐদিকে নিভন্ত হেডলাইট যেনো পাখির ডানার মতো
কাঁপছে বাতাসে!
সবদিকে অরণের স্বর! একটিও শিশিরের ফণীমনসা নেই!
কেবল মানুষ সর্বাঙ্গে মৃত্যুর কাঁটা
গলগণ্ডে ধুতুরার বীজ নিয়ে শুয়ে আছে রাতে!
কারো আদি নেই। কারো অনাদিও নেই!
মর্মক্ষুব্ধ চৈতন্যের বিশুদ্ধ অগ্নির কাছে প্রত্যেকের মৃত্যুর দলিল
ধীরে ধীরে বাজেয়াফত স্বাধীনতা চুক্তির মতোন পুড়ছে!
ধানের মতোন ঝরছে অভাবের যুবতী শরীর!

একদিন ছিল! যে বৃক্ষটি হাঁটতে পারেনা, হাতে সেলাইন
লবণাক্ত জলের পৃথিবী হয়ে যাব প্রাণ এখনো জীবিত :
তারও ছিল সবল সুঠাম দেহ। গ্রামে ইক্ষুক্ষেত, ধান!
ধবল গাভীর ওলানের মতো ঘন লেবুর পাতার বনে গুচ্ছ গুচ্ছ লেবু!
একদিন ছিল পলিমাটি :
ওগো দাত্রী শস্যকন্যা, সুখী হোক সমস্ত পৃথিবী!

একদিন ছিল প্রত্যূষের প্রবহ প্রসন্ন মন্ত্র,
আকাশের গোলক আগুন ধীরে জ্বলে উঠে পৃথিবীকে প্রাপ্য
মেটাতে।

কিন্তু আজ সেই শুদ্ধি নেই–

বৃদ্ধের মৃত্যুর পাশে খালি অকসিজেন নল, খালি সেলাইন!
মৃত্যুর প্রখর প্রাণে সে জানে না,
কত কোটি বঙ্গদেশ অভাবে ও অবক্ষয়ে তারই মতো মরছে অহরহ
সারারাত বৃষ্টির মরুর জ্বালা! আত্মার আতস কাঁচ ভেদ করে বৃক্ষগুলি
সবুজ জিরাফগলা তুলে আজ খেতে আসে উচ্ছিষ্ট মৃত্যুকে!

কাছে দূরে গীর্জাঘড়ি, পাখির শব্দের স্বর তবুও বৃষ্টিতে ভাসে :
কোনদিকে হিমালয়, বরফের উঁচুচাওয়া রবীন্দ্র ঠাকুর,
তবুও বৃষ্টি আসে জোরে!

এ বৃষ্টি কি নবজন্ম?
কিছুই জানিনা শুধু অকসিজেনের নল নাকে নিয়ে বসে থাকি জাগাতুর!
আর শব্দে টের পাই? একলক্ষ জিরাফ, হলুদ সাপ, সিংহের সবুজ দল
সমস্ত জীবন ভেঙ্গে ঢুকে যাচ্ছে আমার ভিতরে।

সস্ত শান্তি ভেঙ্গে ঢুকে যাচ্ছে মানুষের মনীষার শেষ বৈশিকে!
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৮৮ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন