নচিকেতা

আবুল হাসান আবুল হাসান | কাব্য - পৃথক পালঙ্ক

মারী ও বন্যায় যার মৃত্যু হয় হোক। আমি মরি নাই–শোনো
লেবুর কুঞ্জের শস্যে সংগৃহীত লেবুর আত্মার জিভে জিভ রেখে
শিশুর যে আস্বাদ আর নারী যে গভীর স্বাদ
সংগোপন শিহরণে পায়-আমি তাই!

নতুন ধানের ঋতু বদলে পালা শেষে
শস্যিতা রৌদ্রের পাশে কিশোরীরা যে পার্বণে আজো হয়
পবিত্র কুমারী শোনো। আমি তাতে আছি!

আর সব যুদ্ধের মৃত্যুর মুখে হঠাৎ হাসির মতো ফুটে ওঠা পদ্মহাঁস
সে আমার গোপন আরাধ্য অভিলাষ!

বহ্নি রচনার দ্বারা বৃক্ষে হয় ফুল;
ফুলে প্রকাশিকা মধুর মৃন্ময় অবদান শোনা,

ঝর্ণার যে পাহাড়ী বঙ্কিম ছন্দ, কবির শ্লোকের মতো স্বচ্ছ সুধাস্রোত
স্পেনের পর্বত প্রস্তর পথে টগবগে রৌদ্রের যে সুগন্ধি কেশর কাঁপা
কর্ডোভার পথে বেদুঈন!
লোকার বিষণ্ণ জন্ম, মৃত্যু দিয়ে ভরা চাঁদ,
শুধু সবিতার শান্তি-আমি তাই!

হারানো পারের ঘাটে জেলে ডিঙ্গি, জাল ভোলা কুচো মাছে
কাঁচালী সৌরভ–শোনো
সেখানে সংগুপ্ত এক নদীর নির্মল ব্রীজে
বিশুদ্ধির বিরল উত্থানের মধ্যে আমি আছি

এ বাংলায় বার বার হাঁসের নরোম পায়ে খঞ্জনার লোহার ক্ষরায়
বন্যার খুরের ধারে কেটে ফেলা মৃত্তিকার মলিন কাগজ

মাঝে মাঝে গলিত শুয়োর গন্ধ, ইঁদুরের বালখিল্য ভাড়াটে উৎপাত
অসুস্থতা, অসুস্থতা আর ক্ষত সারা দেশ জুড়ে হাহাকার
ধান বুনলে ধান হয় না, বীজ থেকে পুনরায় পল্লবিত হয় না পারুল
তবুও রয়েছি আজো আমি আছি,
শেষ অঙ্কে প্রবাহিত শোনো তবে আমার বিনাশ নেই

যুগে যুগে প্রেমিকের চোখের কস্তুরী দৃষ্টি,
প্রেমিকার নত মুখে মধুর যন্ত্রণা,

আমি করি না, মরি না কেউ কোনোদিন কোনো অস্ত্রে
আমার আত্মাকে দীর্ণ মারতে পারবে না।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৩৮২ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন