বর্তমান

কবিতা - দ্রাঘিমার বিবর্ণ গন্ধ

বর্তমান

একটা স্তব্ধতা, যাতে কুকুরের ঘাড়ে নেমে আসে হেমন্ত,
তার ঠোঁটে গুঁজে দেয়া হয় ডোবা চাঁদের জিরাফ—
আর ঘ্রাণ? সে তো নিঃশ্বাস নয়, একধরনের মৃত পাখির অভিমান,
যা দেহহীন ছায়ার গলায় বাঁধে লুণ্ঠিত ছুরি।

চোখের নিচে একটা নীল পরিখা ছিল,
সেখানে শব্দেরা তুমুল আত্মহত্যা করত
প্রতিটি ব্যঞ্জনের জিভে আটকে থাকত
একটি ভোর না-জাগা কন্যার গর্ভজট।

দ্বিপদের মজ্জা ছিঁড়ে খেত
এক গৃহহীন তন্দ্রাচোর—
যার নাম ছিল না, কেবল ধ্বনি,
একটা ছেঁড়া চিঠির ভেতরে রাখা শুয়েপড়া ঘুম।

পেছনের অলিন্দে একটা দরজাহীন চৌকাঠে ঝুলত
একটা পঁচে যাওয়া কফিন, যার পেট ফেটে বেরিয়ে আসত
ঘুমহীনতার ব্যথা,
আঙ্গুলে-আঙ্গুলে মেখে থাকা
নক্ষত্রের পুরোনো বিষ।

একটা মুখহীন অবয়ব প্রতিদিন পাথর খেত—
না অভুক্ত ছিল, না তৃপ্ত,
তবু তার দাঁতের ফাঁকে আটকে ছিল
একটা ভাঙা নীরবতা,
যা অনেককাল আগেই
এক কবির কণ্ঠ ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।

তাকে কেউ ডাকত না,
তবু সে ফিরত,
ঘরে-ঘরে—
ঘড়ির কাঁটা হয়ে, মৃত পত্রিকার পেছনের শেষ শিরোনাম হয়ে,
কিংবা শরীরজুড়ে কুঞ্চিত একটি অদৃশ্য
স্বপ্ননিষিদ্ধ দীর্ঘশ্বাস হয়ে।

ব্যাখ্যাতীত, অথচ স্পষ্ট—
এই ছিল তার পরিচয়।

নাম ছিল না,
শুধু ঘূর্ণি,
কিংবা একঘেয়ে ডুবে থাকা
ভবিষ্যতের হাঁপানিতে চাপা পড়া
একটা হাড়-চিমটে যন্ত্রণা।

এবং সে ছিল—
তোমার নয়, আমার নয়—
একটা পরিত্যক্ত দ্রাঘিমা,
যা আয়নার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছিল
ঠিক মৃত্যুর পাশের ঘরে।

১২৯
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন