তিস্তা নদী
তিস্তা নদী
বিপুল চন্দ্র রায়

গল্প - তিস্তা নদী

লেখক: বিপুল চন্দ্র রায়
প্রকাশ - বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ধরণ: জীবনবাদী, প্রকৃতি

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর কথা মনে উঠলেই একটি নদী আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তার নাম তিস্তা নদী। তিস্তা আমার প্রিয় নদী। আমাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঠিক তিস্তা নদীর পাশেই। তিস্তা নদীর রূপ একেক সময় একেক রকম।তিস্তা নদী আমার জীবনের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে আছে। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়:

দু’পাশে ধানের ক্ষেত সরু পথ
সামনে ধূ ধূ নদীর কিনার
আমার অস্তিত্বে গাঁথা।
আমি এই উদাত্ত নদীর
মুগ্ধ এক আবোধ বালক।

গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড উত্তাপে যখন জল শুকিয়ে যায়,তখন দুই পাশে জেগে ওঠে ধূ ধূ কাঁদাময় বালুচর। সেই চরে কৃষকেরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে। যেমনঃ আলু,পেঁয়াজ,মরিচ, বাদাম ও সোনালি পাট ইত্যাদি।
আমরা সকলে গরু-ছাগল চরাতে নিয়ে যাই সেই চরে। দুপুরবেলা নদীতে হৈচৈ করে গোসল করি। চরের কোলায় মাছ ধরি। যেমনঃ
বৈরাতী,বালাচাটা ও পুঁটি ইত্যাদি।
এপার থেকে ওপার সাঁতরে নদী পার হই। নদীর বুক চিরে যখন বড় বড় নৌকা চরে যায়,পালতোলা নৌকা মাঝির ভাওয়াইয়া গান,আমরা চোখ তাকিয়ে থাকি। দাদুর মুখে শুনেছি,এ নদীতে এক সময় শুশুক ছিল। কিন্তু এখন আর শুশুক দেখা যায়না,তবে মাঝে মধ্যে হঠাৎ দেখা যায়,শুশুক ভেসে ওঠে আবার ডুব দেয়।
বর্ষাকালে নদী প্রাণ ফিরে পায়। তখন তিস্তা নদী কানায় কানায় ভরে যায়। এসময় নদীতে প্রচন্ড স্রোত থাকে,বড় বড় ঢেউ তীওে এসে আঘাত হানে। অনেক সময় নদীর জল বেশি বেড়ে গেলে দুই পাশের গ্রাম ফসলের মাঠ সব ডুবে যায়। ও তীব্র স্রোতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ভিটেমাটি সহ ফসলের মাঠ। এ সময় নদীর রূপ দেখলেই আমার ভয় কওে,কী রাক্ষসী রূপ মনে হয় রাক্ষসী নদী।
শরৎকালে তিস্তা নদী আবার অন রূপ ধরে। তখন নদীর উঁচু চরে কাশফুল ফোটে। কাশবনের ভিতর অনেক পাখি বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। সন্ধ্যাবেলা যখন পাখিরা বাসা ফিরে আসে তখন পাখির কলকাকলীতে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। ঘাটে সারি সারি নৌকা বাঁধা সেই নৌকার পাটাতনে শুয়ে বন্ধুরা মিলে সন্ধ্যার আকাশ দেখি,আকাশে অপরূপ দৃশ্য। সেই দৃশ্য দেখে আনন্দে মন ভরে যায়।
শীতকালে তিস্তা নদীকে অনেকটা রহস্যময় লাগে, শীতকালে অনেক বেলা পর্যন্ত তিস্তা নদীর বুকে কুয়াশা জমে থাকে। এসময় নদীতে নতুন চরজাগা শুরু হয়। নদীমাতৃক দেশে তিস্তা নদী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে,এ নদী বাংলাদেশের অন্য নদীর থেকে উত্তরবঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তা নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে, তাছাড়াও তিস্তা নদী দিন দিন দূষিত হয়ে যাচ্ছে,যা আমাদেও খুব কষ্ট দেয়। তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করেই এর দুই তীরে মানুষের বসবাস গড়ে উঠেছে। আমি তিস্তা নদী কে ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না। তিস্তা নদীকে খবু ভালোবাসি।যেন আমার জীবেরই অংশ তিস্তা নদী।

বিপুল চন্দ্র রায়
লেখক ও সাহিত্যিক
রাজারহাট-কুড়িগ্রাম,রংপুর,বাংলাদেশ।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৯৩ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন