কথোপকথন-৬

দর্পণ কবীর দর্পণ কবীর

ঃ খ্রীষ্টপূর্বের আগে, প্রাগ ঐতিহাসিক যুগে কিংবা
মানব সভ্যতার সূচণা লগ্নে, প্রথম যখন মানুষ পাথরে পাথর ঘঁষে
জ্বালাতে শিখলো আগুন। সেদিনই তোমার খোঁপায় বনফুল গুঁজে আমিও
উদাস হয়েছিলাম অন্যরকম ভাবালুতায়। তখনো ইতিহাস বেত্তার
জন্ম হয়নি বলে লেখা হয়নি অপ্রকাশিত প্রেমের উপাখ্যান। তাই না?

ঃ তাই নাকি? আর?

ঃ তোমার সঙ্গে কতবার দেখা হলো! কতবার জন্ম হলো আমাদের!
জন্ম-জন্মান্তর হলো খান্ডব দহন! জন্মান্তরের অভিশাপ করে যাচ্ছি বহন।

ঃ জন্ম থেকে জন্মান্তর আমাদের হয়েছে দেখা! যেমন?

ঃ তুমি ছিলে গ্রীসের রাণী ক্লিওপেট্রা। আমি ছিলাম তোমার প্রেম পাগল
সিজার। তোমার জন্য সে-কী যুদ্ধ করেছি অবলীলায়! ভালোবাসা
কখনো কখনো কত ধ্বংস-যুদ্ধের জন্ম দেয়! কিংবা মোগল সম্রাট
আকবরের শাসনামলে তুমি ছিলে আনার কলি, আমি শাহাজাদা সেলিম।
আবার তুমি যখন রাজরাণী মমতাজ,আমি তখন বাদশাহ শাহজাহান।
তোমাকে উৎসর্গ করতে নিছক একটা তাজমহল বানিয়ে ভালোবাসার
বৈষায়িক মূল্য দিয়ে তাবৎ মানুষকে বোকা বানিয়ে দিয়েছিলাম।
ঐ তাজমহল এখন ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন! ভালোবাসার জন্য
যুদ্ধ-প্রলয় এবং নান্দনিক সৃষ্টি, আমিই তো করেছি! পথের ভিখারীও
ছিলাম, তুমি কাঙালীনি। মজনু ছিলাম, তুমি লাইলী, তুমি শিরি যেই আমি ফরহাদ..।
ফিরে ফিরে আসার নিয়তির ফাঁদ!

ঃ তোমার কথা বিশ্বাস করতে ভালো লাগছে আমার! হয়তো
তোমার কথাই ঠিক। তোমার সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন জনমে ভিন্ন
পরিচয়ে আমার হয়েছে দেখা। ও সব যদি সত্যিও হয়, তা নিয়ে
আমার উচ্ছ্বাস নেই। এই যে তুমি কবি, আর আমি তোমার
কাব্য প্রেমে বিমোহিত এক নারী, এটাই ভীষণ আনন্দের! অতীতের
কথা অতীতে থাকুক পড়ে! কী হবে ওসব হিসেব করে?

ঃ কিন্তু অতৃপ্ত আত্মা বারবার আসে ফিরে। অপার্থিব
ভালোবাসা আমাকে বারবার তোমার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়,
জন্ম থেকে জন্মান্তর! কল্পনায়ও পেখম ছড়ায় অদৃশ্য
অনুতাপ, স্পর্শ করো, ঘুচে যাক অভিশাপ!

ঃ না, না। কল্পনাকে টেনে এনে কী লাভ? কবি, তুমি
কবিতার মধ্যেই থাকো বন্দি। এটাই হোক আমাদের সন্ধি।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ১১৯ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন