মানব মন্ডল

শিরোনাম: ধর্ষক

গল্পকার: Author Avatar মানব মন্ডল

হঠাৎ রাজুর চোখে সামনে একটি বহু পুরানো দৃশ্য, ভেসে উঠলো। অনেকটা রাত একা মেয়েটা তাড়াতাড়ি ওর রিক্সা ওঠে বললো তাড়াতাড়ি চলো নিউটালিগঞ্জ। দশ মিনিটের হাঁটা পথ। তরুণী মেয়ে হেঁটে যেতে পারতো হয়তো বাড়ি কিন্তু দিনকাল ভালো নয় বলেই বোধহয় রিক্সায় উঠলো।
এমন সময় ওর মা মায়ের ফোন আসল। মা চ্যাচিয়ে চ্যাচিয়ে বললো। “তুই ভাইকে পড়াশোনা করাবি বলে, নিজে পড়াশোনা ছেড়ে শহরের গিয়ে , টানচ্ছিস ও তো মোবাইল ফোন সারাদিন পরে থাকে তুই ওকে কিছু বলিস না। কেন?”
ও খুব আসতে আসতে বললো ” মা ওকে তুমি কিছু বললো না। ও বলছে এই সেমিস্টার ও ভালো রেজাল্ট করবে। আর চাকুরী পেলে। আমি আবার পড়া চালু করবো তুমি চিন্তা করছো কেন??”
ওই অচেনা মেয়েটা ওদের কথা শুন ছিলো। মেয়েটার নাম অনিতা, ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করছে।অনিতা ঐ রাতেই রাজুর সাথে বন্ধুত্ব করলো। আর রাজুকে কলেজ ভর্তি করে পড়াশোনা শুরু করলো।

রাজু ঘরে খুলে লাইট জ্বালাল। ঘরটা বড় খালি খালি।টপিটার বিয়ে পর আর আসে না। ভাই মুম্বাই সেটেল।মা মারা গেছে এক বছর হলো।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো কন্ঠটা খুব চেনা। অনিতা বলে উঠলো ” বাপ্পার কাছে তোর সব খবর পেলাম। তুই নাকি চাকুরী ছেড়ে দিবি বলচ্ছিস। মদ খাওয়া ধরেছিস। খুব উন্নতি করেছিস যে।কাল কোথাও যাবি না আমি কোলকাতায় ফিরেছি।আমি যাবো কাল, তুই বাড়ি থাকবি।”
রাজু নিরবে উত্তর দিলো , “এটা তোমার বাড়ি অনিতা, তুমি যখন তখন আসতে পারো, এটা তোমার বাড়ি। আর আমি এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাই না। কারণ কেন যেনো মনে হয় একদিন তোমাকে ফিরে আসতেই হবে।”
রাজুর চোখের সামনে আরো একটা দৃশ্য ভেসে উঠলো। নিউজ পেপার চাকুরী চেয়েছে রাজু।রাজু খুব খুশি, সেইদিন প্রথম মাইনে পেয়েছে। অনিতার জন্য একটা শাড়ি কিনেছে। মা বোনের ভাইয়ের জন্যে কিনেছে। কিন্তু অনিতার জন্য পচ্ছন্দ করতে করতে দেরি হয়ে গেছে। অনিতা অনেক বার ফোন করছে। ভীষন রেগে গেছে হয়তো।
অনিতা হাসি মুখে ঘরের দরজা খুলে দিলো। শোবার ঘরে গিয়ে রাজু অবাক। টেপি গয়না গুলো নিয়ে বলছে ,
” অনিতা দিদি তুমি সত্যি বলছো এই সব গয়না আমার। তোমার সব চুরিদার, কাপড়, সব কিছু আজ থেকে আমার, ”
অনিতা হাসি হাসি মুখে বলল ” হাঁ বাবা , সব তোর। আমি তো কাল আমেরিকার চলে যাচ্ছি। আমার এইগুলি কি দরকার।”
আমেরিকা চলে যাচ্ছি কথাটা শুনে রাজুর মাথায় বাজ পড়লো।মা টেপী গয়না দেখতে ব্যাস্ত , রাজু অনিতা পাশের ঘরে নিয়ে গেলো।
রাজু জিজ্ঞেস করল ” আমেরিকা যাচ্ছো মানে, কি বলছো তুমি”
অনিতা বললো ” তুই পাগলামো করিস না। বাবা মারা যাওয়ার পর, তুই আমার ডাক্তারি পরীক্ষা ফিস দিতে,তোর শেষ সম্বল বাস্ত জমিটা বিক্রি করেছিলি। তাই তোর নামে এই বাড়িটা রেখে গেছি। দাদা ইঞ্জিনিয়ার হলো কিন্তু সেটাও এডুকেশন লোনে। কিন্তু পাশ করে ওতো বাবার সাথে যোগাযোগ রাখলো না, মায়ের চিকিৎসা খরচ, আমার পড়াশোনা, বাবাকে অনেক টাকা লোন করতে হয়েছে। তুই আমি কাজ করে শোধ করতে পারবোনা। তাই আগরওয়াল বিয়ে করে আমেরিকা চলে যাওয়াটাই আমার কাছে সেরা এবং এক মাত্র অপশাসন।”

রাজু সাড়া সে রাতটা কেন, দিনেও ঘুমতে পাড়লো না। সাত বছরের সম্পর্কটা নিতান্তই অর্থনৈতিক কারণে ভেঙে গেছিলো ওদের। কিন্তু এখন অনিতাকে মনে প্রাণে ভালো বাসে রাজু। গোটা ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা, এই আট বছরের অপেক্ষা চেয়েও কষ্টকর ।বেশ রাত করেই এলো অনিতা। আজ মান অভিমান পালা ভাঙা, কিছু আদর ভিজে দিতে চাইলো রাজু অনিতা শরীরটাকে। এটা ওদের কাছে নতুন নয়। অনিতা পচ্ছন্দ , দুর্বলতা সব রাজুর চেনা। কিন্তু আজ নিজেকে উজাড় করে দিয়েও, পিঠে চুমু খেতে দিতে চাইছিলো না অনিতা। রাজু জোর করে, অনিতার পিঠে চুমু খেতে গিয়ে থমকে গেলো। অনিতা অঝোর কেঁদে উঠলো।ওর ফর্সা মসৃন পীঠ টায় আজ, বহু কালসিটে দাগ ভরা।
মিষ্টির আগরআল অনেক টাকার মালিক, সমাজের চোখে খুব ভালো মানুষ। মদ , সিগারেট , কোন নেশা ভান করে না। কিন্তু ওনার একটা নেশা নারীর শরীর। পছন্দ হলে যেকোনো দাম দিয়ে কেনা ওর স্বভাব। কিন্তু অনিতার মতো মেয়েরা বিক্রি হয় না। তখন ওনি এক চুটকি সিন্দুরকে অবলম্বন করেন। অনিতার আগে চারটে বিয়ে করছেন ইনি। আবার তার পছন্দ হয়েছে এক উর্তি মডেল কে। অনিতা মনে মনে ঠিক করছে , আগরওলাকে ডিভোর্স দেবে না। আর কোন মেয়েকে সিন্দুর বাহানায় ভোগা করতে দেবে না। এই বাঁধা দেওয়ার ফল।
রাজু ফোন করলো সিদ্দিকীকে ” বন্ধু আজ আমাকে একটা উপকার করতে হবে তোকে। আমি অনিতা খুন করেছি। ওর অনেক যন্ত্রণা, ওকে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছি। তবে আমি মুক্তি চাই। তুই রিপোর্ট বানা আমি ওকে ধর্ষণ করেছি। ও অগরওলে সাথে প্রতিশোধ নিতে কনসিভ করতে চেয়েছিল। তাই আমাকে ধর্ষক হিসেবে, প্রমাণ করতে অসুবিধা হবে না। তুই পুলিশ নিয়ে আয়। আমার গ্রেফতার কর। ধর্ষণ পরে খুন। আমার ফাঁসি চাই। আমি বাঁচতে চাই না অনিতাকে ছাড়া।”

এখন পর্যন্ত গল্পটি পড়া হয়েছে ১৪২ বার
যদি গল্পটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন