শিরোনাম: চার বোকা
গল্পকার: শংকর ব্রহ্ম
চার বোকা
শংকর ব্রহ্ম
পিতা হুমায়ুনের মৃত্যুর পর মাত্র তেরো বছর বয়সে আকবর রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন। আকবর বাদশাহের মনে মাঝে মধ্যে উদ্ভট সব পরিকল্পনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো। আর তা পুরণ করার দায় বর্তাতো বীরবলের উপর। বীরবল, ছিলেন আকবরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও প্রিয়পাত্র।
একবার তিনি বীরবলকে হুকুম দিলেন,
তাঁর রাজ্যের এমন চারজনকে ধরে নিয়ে আসতে, যারা সবচেয়ে বোকা। বীরবল সম্রাটের কাছে কিছুদিন সময় চেয়ে নিয়ে বোকা লোক খুঁজতে বের হলেন। রাস্তায় বেরিয়ে বীরবল দেখলো, বোকা লোক পাওয়া যতটা সহজ ভেবেছিল, ততোটা সহজ কাজ নয়।
অনেক খোঁজা খুঁজির পর একদিন দেখতে পেলেন, একজন সুসজ্জিত সম্ভ্রান্ত পুরুষ বিরাট কাঁসার থালায় করে নতুন কিছু ঝলমলে কাপড়-চোপড়, পান ও মিষ্টি নিয়ে কোথায়ও যাচ্ছে। কৌতুহলী হয়ে বীরবল লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো, ও ভাই, তুমি এসব জিনিস নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
লোকটি বলল, আমার তালাকপ্রাপ্ত বউ অন্য একজনকে বিয়ে করে সাথে এখন ঘর-সংসার করছে। সম্প্রতি তাদের একটা সন্তান হয়েছে। তার জন্যে এই উপহার নিয়ে যাচ্ছি।
বীরবল ভাবলো এই হতভাগাটার মতো দ্বিতীয় কোন বোকা লোক এই রাজ্যে বোধহয় আর নেই। বীরবল তার নাম-ঠিকানা নোটবই বের করে লিখে নিলো।
আর একদিন বীরবল দেখলো একটা লোক মহিষের পিঠে চড়ে যাচ্ছে কিন্তু ঘাসের একটা বিরাট বোঝা লোকটার মাথায়। বীরবল তাকে জিজ্ঞেস করল, ও ভাই, তুমি যখন মহিষেরই পিঠে যাচ্ছো, তবে আর ঘাসের বিশাল বোঝাটা নিজের মাথায় নিয়ে বইছো কেন?
লোকটা বললো, আজ্ঞে হুজুর , আমার মহিষ গর্ভবতী। তার পিঠে বেশী ওজন দেয়াটা এখন ঠিক হবে না। আমাকে পিঠে নিয়ে হাঁটতেই মহিষটার কষ্ট হচ্ছে। তাই ঘাসের বোঝা মহিষের পিঠে না দিয়ে আমার মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছি। বীরবল ভাবলো এই মহিষ-অলা আর এক বোকারহদ্দ। তার নাম-ঠিকানাও লিখে নিলেন বীরবল তার নোট বইয়ে।
কয়েকদিন পরে বীরবল এই দু’জন লোককে নিয়ে আকবর বাহশাহের দরবারে হাজির হলো । বললো, হুজুর সারা রাজ্য খুঁজে বোকাদের ধরে নিয়ে এলাম আজ রাজদরবারে ।
সম্রাট তাদের দেখে বললেন, এখানে তো মাত্র দু’জন আছে দেখছি। আমি বলেছিলাম চারজন বোকাকে ধরে আনতে।
বীরবল দু’হাত জোড় করে বললো, জাহাপনা,
মার্জনা করবেন, বোকাদের খুঁজে খুঁজে ধরে আনতে গিয়ে আমি হয়েছি তৃতীয় বোকা।
আর বোকাদের ধরে আনতে আদেশ দিয়ে, আপনি হয়েছেন চতুর্থ বোকা। সব মিলে আমরা হলাম চার বোকা।
বীরবলের এই রসিকতায় হা হা হা করে হেসে উঠলেন সম্রাট আকবর। হাসি যেন তার আর থামে না। বীরবলের রসিকতায় এমন খুশি হয়েছেন সম্রাট। তারপর বীরবলের কাছে ওই দু’জন বোকার কাহিনী শুনে সম্রাট আকবর আরও একবার হাসলেন, দরাজ গলায়- হো হো হো হো……। তারপর তাদের দু’জন অনেক দামী উপহার দিয়ে বিদায় জানালেন।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন