শিরোনাম: পঁগা-পন্ডিত

গল্পকার: Author Avatar শংকর ব্রহ্ম

পঁগা-পন্ডিত
শংকর ব্রহ্ম

অনেকদিনের একান্ত ইচ্ছে (বিয়ের পর থেকেই) তারা হানিমুনে যাবে। কিন্তু যাই যাই করেও, অর্থের সংকুলান করে উঠতে না পারায়, যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি। হানিমুনের ইচ্ছে পুরণ করতে না পারায়, শেষপর্যন্ত স্বামী স্ত্রী দু’বছর পর একদিন বেরিয়ে পড়ল আলিপুর চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে।
তারা (স্বামী আর স্ত্রী) সেখানে গিয়ে দেখল হাতী, ঘোড়া, সাপ, কচ্ছব, ময়ূর, বাঘ, হরিণ, জিরাফ, জেব্রা,পরীযায়ী পাখি প্রভৃতি আরও অনেক কিছু।
শেষে তারা মাঠের এক জায়গায় বসে, বাড়ি থেকে করে নিয়ে যাওয়া লুচি আর আলুর দম খেল পরিতৃপ্তির সঙ্গে। সঙ্গে মিষ্টি। শেষে ফেরার সময় তারা দেখল, একটি বাঁদর তার সঙ্গীনির সাথে খেলছে, খুনসুটি করছে নানা রকম।
সেই দৃশ্যটা দেখে স্ত্রী মুগ্ধ হয়ে স্বামীকে বলল, “দেখ,দেখ কী চমৎকার ভালোবাসা ওদের মধ্যে, তুমি কি কখনও আমার সঙ্গে এমন আচরণ করো, বলো?”
অভিমানী সুর স্ত্রীর গলায়।
স্বামী তাকে কিছু না বলে নীরবে হাঁটতে লাগল,আর সিগ্রেট টানতে লাগল।
এরপর তারা গেল একটা সিংহের খাঁচার সামনে। দেখল একটা সিংহ খাঁচার একপাশে চুপচাপ বসে আছে। আর সিংহীটাও অদূরে বসে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।
স্ত্রী দেখে বললঃ “আহ! ভালোবাসার কী নির্মম পরিণতি, ঠিক যেন তোমার আমার মতো।” স্বামী এতক্ষণ চুপচাপ স্ত্রীর পাশে হাঁটছিল। এবার, নীচু হয়ে ঝুঁকে মাটি থেকে একটা ঢিল তুলে নিয়ে নীরবতা ভঙ্গ করে স্ত্রীকে বলল, “ধরো, এই পাথরের টুকরাটা সিংহীর দিকে ছুঁড়ে মারো তো, তারপর দেখো কী হয়।”
স্বামীর কথা শুনে বউটি পাথরের টুকরোটা ছুঁড়ে মারল সিংহীটার গায়ের দিকে। সিংহটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। সঙ্গীনিকে বাঁচানোর জন্য গর্জে উঠল বারবার।
তারপর স্বামী আর একটা ঢিল মাটি থেকে তুলে নিয়ে বলল, “এবার এই পাথরের টুকরোটা মেয়ে বাঁদরীটার দিকে ছুঁড়ে মারো। দেখ কী ঘটে ! পুরুষ বানরটার আচরণ লক্ষ্য কর।”
তার স্ত্রী পাথরের টুকরোটা বাঁদরীর দিকে ছুঁড়ে মারল। দেখা গেল ছুঁড়ে মারার আগেই বাঁদরটা আত্মরক্ষার্তে নিজে ছুটে পালিয়ে গেল। সঙ্গীনির দিকে ফিরেও তাকাল না।
স্বামী বলল, “মানুষ তোমার সামনে যা প্রকাশ করে, তা দেখে প্রভাবিত হয়ো না কখনও। অনেক মানুষ আছে যারা তাদের লোক দেখানো কৃত্রিম আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করে অন্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। আবার অনেক মানুষ আছে যারা তাদের ভেতরে গভীর অনুরাগ- ভালবাসা থাকা সত্বেও তা প্রকাশ করে নাা, লুকিয়ে রাখে। আর বর্তমানে সিংহদের চেয়ে বাঁদরদের সংখ্যাই একটু বেশি।” শুধু চোখ কান খোলা রেখে চললেই সেটা টের পাবে। সব মনদিয়ে শুনে স্ত্রী, স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললো, বাবা তুমি কতো জানো ! যেন পগা পন্ডিত একেবারে !

এখন পর্যন্ত গল্পটি পড়া হয়েছে ১৮ বার
যদি গল্পটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন