শিরোনাম: প্রতিপালন

গল্পকার: Author Avatar সমরেশ মজুমদার

কি আশ্চর্য, তোমার ওই মিডল ক্লাস মানসিকতা এখনও গেল না! স্বপ্ন নিজের নির্লোম পায়ে ক্রিম বোলাতে বোলাতে ঝাঁঝিয়ে উঠল।

নবকুমার ভি সি আর বন্ধ করে বলল, তুমি বুঝতে পারছ না, সিম্পলি উই কান্ট অ্যাফোর্ড ইট রাইট নাউ। তা ছাড়া অ্যাম্বাসাডারটা তো কোনও ট্রাবল দিচ্ছে না।

তোমাদের শ্যামবাজারের বাড়িতে তো জায়গা ছিল, তাহলে সানি পার্কে উঠে এলে কেন? তোমার কোনও পূর্বপুরুষ কালার টিভি, ভি সি আর, ফ্রিজ, কার্পেট ব্যবহার করেছেন?নবু, আজকের যুগে যে মিনিমাম নিড না মেটালে নয় তার বাইরে আমরা যাচ্ছি না।

স্বপ্ন উঠে দাঁড়াল। তার ধবধবে সাদা নাইটির প্রান্ত হাঁটুর সামান্য নিচে সঙ্কুচিত হওয়ায় পায়ের গোছে হাঁসের ডিমের আদল আসছিল। সেদিকে তাকিয়ে নবকুমার তারিফ করল। তার বউটি যাকে বলে সত্যিকারের সুন্দরী। অবশ্য তাদের পরিবারের মেয়েরা দেখতে খারাপ নয়। কিন্তু বাঙালি মেয়েরা এত শরীর ঢেকেঢুকে রাখতে ভালোবাসে যে তাদের সৌন্দর্যটাই মাঠে মারা। যায়।

স্বপ্নর শরীরে হাঁটলেই ছন্দ আসে। কে বলবে তেত্রিশে পড়ল ও! তেষট্টির আগে টসকাবার। কোনও চান্স ও নেবে না। ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে নবকুমার তড়িঘড়ি বলল, ডার্লিং ইউ নো, প্রায় চার হাজার বেরিয়ে যাচ্ছে প্রতি মাসে ধার শোধ করতে। এই ফ্ল্যাটের টাকা শোধ করার পর মারুতি কিনলে হত না?

তুমি একটু ড্যাশি হও তো নবু। ওই বুড়ি অ্যাম্বাসাডার নিয়ে ক্লাবে যেতে আমি লজ্জায় মরে যাই। মিসেস মিত্তির ঠাট্টা করছিলেন সবার সামনে। এটাকে বিক্রি করলে আর হাজার পঞ্চাশেক লাগবে। ওয়েল, তুমি যদি না পারো।

না-না, তা বলছি না। কিন্তু–।

নবু, ধরো আমি যদি চাকরি না করতাম, ধরো আমার গোটা-তিনেক বাচ্চা থাকত, তাহলে তুমি কি করতে? ওই শ্যামবাজারের বারোয়ারি বাড়ির এক ঘরের অন্ধকূপে বাকি জীবন কাটাতে বলতে তো? স্বপ্ন এগিয়ে এল নবকুমারের কাছে। একটা আঙুল নবকুমারের চিবুকে রেখে। বলল, আমরা একটু আরাম করে বাঁচতে চাই, চাইনা? একটা থার্ড ইনকামের ধান্দা লাগাও না! তোমার কলিগ গুপ্তাকে দেখেও শিখলে না?

গুপ্তা তো লেফট অ্যান্ড রাইট ঘুষ নেয়।

আঃ, এটাও একটা মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট। যাক, এখন তৈরি হয়ে নাও। আধ ঘণ্টার মধ্যে বের হব। তুমি কি এজেন্সির সঙ্গে কথা বলেছ? তাহলে বলে ফেলো। স্বপ্না চলে গেল ঘর ছেড়ে। সেই যাওয়া মনভরে দেখল নবকুমার। তার আট বছরের বিবাহিতা স্ত্রী, অথচ প্রতিদিন নতুন দেখছে। বলে মনে হয়।

এজেন্সিতে ফোন করল নবকুমার, মেডিকেল চেক আপ হয়েছে এ-মাসে?

মিস্টার সেন বললেন, কোনও প্রবলেম নেই স্যার। ডক্টর খাসনবীশ চার সপ্তাহ অন্তর দেখছেন। একটু আন্ডারওয়েট, এখনও তো সময় রয়েছে।

নবকুমার বলল, বড্ড অভাবী পরিবার থেকে সিলেক্ট করেছেন আপনি। গতবার যখন গিয়েছিলাম তখন রোগা লিকলিকে বাচ্চাগুলোকে দেখে স্বপ্নার শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল। শরীরের জন্যে একদিন অফিসে অ্যাবসেন্ট হওয়াও এখন অ্যাফোর্ড করা যাচ্ছে না।

মিস্টার সেন দুঃখিত গলায় বললেন, খব দুঃখিত স্যার। তবে এখনও তো সব শ্রেণির মানুষ যথেষ্ট আধুনিক হয়নি, তবে বছর দশেকের মধ্যে আমরা আরও একটু সচ্ছল পরিবার পাব বলে আশা করছি।

মাই গড! নবকুমার চমকে উঠল, তখন আমার কোনও প্রয়োজন থাকবে না। আচ্ছা ডাক্তার খাসনবীশের সঙ্গে আমাদের দেখা করার কোনও প্রয়োজন আছে?

না, না, স্যার। ওসব আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। আপনাদেরটা নিয়ে এটা আমাদের একশ আটত্রিশটা কেস। প্রতিটি সাকসেসফুল।

থ্যাঙ্কু। থ্যাঙ্কু।

রিসিভার নামিয়ে রেখে রুমালে মুখ মুছতে গিয়ে চমকে উঠল নবকুমার। ওপাশের দরজা থেকে রেড জিন্স আর হলুদ শার্ট পরে বেরিয়ে এল স্বপ্ন। দু-লাফে দূরত্ব ঘুচিয়ে হাত বাড়াল নবকুমার, ওফ, ভেনাস কোথায় লাগে।

স্বপ্নার ভুরু বেঁকে গেল আরও, যত সেকেলে উপমা। নো, তুমি আমাকে এখন ছোঁবে না। ফ্রেসনেশটা মেজাজে রাখতে চাই।

বুড়ি অ্যাম্বাসাডারটাকে গলির মুখে রেখেনবকুমার আবার বলল, ডার্লিং, তুমি এবার না হয় গাড়িতেই অপেক্ষা করো। আমি ওকে ডেকে আনছি বরং।

ভারী ব্যাগটানবকুমারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্বপ্ন হাঁটতে লাগল কথার জবাব না দিয়ে। বাধ্য হয়ে সমতা রাখতে পা চালাতে হল। প্রায় বস্তি টাইপের এই গলির মানুষগুলো প্রতিবারের মতো এবারও স্বপ্নকে যেন গিলে খাচ্ছে। এই নিয়ে তিনবার হল এখানে। এই মানুষগুলো কি আন্দাজ করছে তা তারাই জানে। মিস্টার সেন যখন প্রথমবার এখানে নিয়ে এসেছিলেন তখন বলেছিলেন, পাঁচ পাবলিককে নিয়ে কখনও চিন্তা করবেন না।

চার-চারটে উদোম, আধা-উদোম শিশু বারান্দায় শুয়ে-বসে ছিল। ওদের দেখামাত্র চিৎকার করে প্রায় নাচতে লাগল, এসেছে, এসেছে, এসেছে।

নবকুমার স্বপ্নার দিকে তাকাল। স্বপ্নর নাকে ততক্ষণে রুমাল উঠে গেছে। বড় বাচ্চাটা ততক্ষণে নবকুমারের ব্যাগ আঁকড়ে ধরতে চাইছে, কি এনেছ গো, দাও না গো, বড্ড খিদে লেগেছে।

নবকুমার ব্যাগটাকে সরিয়ে নিয়ে বলল, তোদের মা কোথায়?ডাক তাকে।

সেই সময় ভেতরের দরজায় নারী এসে দাঁড়াল। ওদের দেখল। তারপর নিচু স্বরে ডাকল, আসুন।

আশেপাশের কৌতূহলী দৃষ্টি এড়াতে ওরা ভেতরে গেল। ঘুপচি ঘর। গতমাসে একটা টেবিলফ্যানের ব্যবস্থা এজেন্সিকে বলে করিয়ে দেওয়ায় তবু স্বস্তি। একটা ছোট বেঞ্চি সামনে এগিয়ে দিতে ওরা দুটিতে পাশাপাশি বসল। স্বপ্ন লক্ষ করল, নারীর কণ্ঠার হাড় বড় বেশি প্রকট। নবকুমারের চোখে পড়ল, নারীর মধ্যভাগ স্ফীততর।

স্বপ্ন জিজ্ঞাসা করল, ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছ, না বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছ?

নারী উত্তর দিল না। মাথা নিচু করল। স্বপ্ন ঝাঁঝিয়ে উঠল, এরকম করলে তো চলবে না। তোমার জন্যে আমাদের রাতের ঘুম চলে যাচ্ছে। ডাক্তার বলেছেন, তোমার শরীরে রক্ত নেই। রক্ত হওয়ার জন্যে এত সব কিনে দিচ্ছি, প্রতি মাসে পাঁচশো করে মাইনে দিচ্ছি, আর তোমার কি কোনও কর্তব্য নেই?

নারী বলল, মাঝে-মাঝে খাই। আসলে ওরা সামনে থাকলে–।

স্বপ্ন ঠোঁট বেঁকাল। তারপর নবকুমারকে বলল, দেখেছ কি চেহারা হয়েছে। চোখের তলায় কালি, হাতগুলো সরু-সরু। এজেন্সিকে বলো না, ওকে এখান থেকে কোথাও নিয়ে যেতে। অন্তত এই কয় মাস!

এই সময় একটা শুঁটকো লোক বিড়ি টানতে-টানতে দরজায় এসে দাঁড়াতেই নারী তার ঘোমটা আরও বাড়িয়ে দিল। লোকটা হাতজোড় করল, ওহো নমস্কার। কি ভাগ্যি! দিন আমাকে ওগুলো দিন। নবকুমারের হাত থেকে ব্যাগটা সরিয়ে নিল সে।

নবকুমার জিজ্ঞাসা করল, এজেন্সি আপনাদের ঠিকমতো টাকা দিচ্ছে তো?

তা দিচ্ছে। কিন্তু তাতে চলে না। রেট বড় কম। ওই যে আমার চার মেয়ে দেখছেন, ভালো করে খাবার দিতে পারি না ওদের মুখে। তবে আমি তো দেখছি, আমার চার মেয়ে হওয়ার সময় ওর। চেহারা এত খোলতাই হয়নি।

নবকুমার স্বপ্নার দিকে তাকাল কথাটা শুনে, স্বপ্ন সেটা উপেক্ষা করে বলল, শোনো, পেট ভরে। খাবে, রাত্রে দুপুরে ঘুমাবে। এখন কিছুদিন ঘরের কাজকর্ম করতে পারো, কিন্তু পরের মাসে মেডিকেল চেক আপে যেন ইমপ্রুভমেন্ট দেখতে পাই। এই ব্যাগে কমপ্ল্যান, আপেল, আঙুর আছে। কাউকে না দিয়ে নিজে খাবে, বুঝলে?

নারী ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলতেই ওরা বাইরে বেরিয়ে এল। স্বপ্ন নিচু গলায় নবকুমারকে কিছু বলতেই সে নারীর স্বামীকে একপাশে ডাকল, দেখুন মশাই, কিছু হলে তো আমরা এজেন্সিকে ধরব। কিন্তু পঞ্চাশটা টাকা আলাদা রাখুন। আপনি একটু যত্নটত্ন করবেন। ওজন আর রক্ত বাড়াতেই হবে ওর।

শুঁটকো লোকটি হাত কচলাল, আপনারা অনর্থক চিন্তা করছেন। ফোর টাইমস এক্সপেরিয়েন্সড। কোনও অসুবিধে হবে না দেখবেন।

নবকুমার বলল, আর একটা কথা, উনি নার্সিংহোম থেকে না ফেরা পর্যন্ত ওঁকে আপনি কোনওভাবে বিরক্ত করবেন না। বুঝতে পারছেন?

আমি বিরক্ত তো করি না। হ্যাঁগো–।

দাঁড়ান-দাঁড়ান। চেঁচাচ্ছেন কেন? বিরক্ত মানে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বলছি।

অ। কিন্তু সেসব তো চুক্তির মধ্যে ছিল না। লোকটি মাথা নাড়াতে লাগল।

ছিল না?

না। সেনবাবুকে জিজ্ঞাসা করবেন।

কিন্তু আমার স্ত্রীর ইচ্ছা।

পূর্ণ করব। আরও পঞ্চাশ বেশি পড়বে মাসে।

ঠিক আছে, ঠিক আছে।

গাড়িতে ওঠার পর নাক থেকে রুমাল সরাল স্বপ্ন, এই এজেন্সিটা খুব বাজে। তোমার পছন্দের ওপর ভরসা করেই অন্যায় হয়েছিল আমার।

নবকুমার গাড়ি চালাতে-চালাতে ঢোঁক গিলল, কিন্তু ওদের তো খুব নাম।

ছাই নাম। হাভাতে হাড়জিরজিরে আধবুড়িটাকে জোগাড় করেছে। গতমাসে যা দেখেছি তার চেয়েও শরীর ভেঙেছে। এইভাবে চললে নার্সিংহোমে যাওয়ার আগেই–। তখন আমি কি করব? কাকে নিয়ে থাকব? প্রায় ডুকরে উঠল স্বপ্ন।

বাঁ হাতটা ধীরে-ধীরে স্বপার কাঁধে রাখল স্পিড কমিয়ে নবকুমার, ওঃ নার্ভাস হয়ো না ডার্লিং। শুনেছি আমার ঠাকুমার ঠাকুমা হাড়জিরজিরে অবস্থায় দশবার সক্ষম হয়েছিলেন।

এক ঝটকায় সরে গেল স্বপ্ন, ওই পেডিগ্রি বলেই তো তোমার এই অবস্থা!

মারুতি এসে গেল। সানি পার্কের গ্যারাজ থেকে বুড়ি অ্যাম্বাসাডারটাকে চল্লিশ হাজারে বিদায় করার পরেও মাসে আরও দেড় করে আয় কমে গেল নবকুমারের। এখন সকালে চা এবং ব্রেকফাস্ট ছাড়া কিচেনের কোনও ব্যবহার হয় না। দুপুরে লাঞ্চ যে-যার অফিসে, রাত্রে ক্লাবে সই করে ডিনার। সামনে অবশ্য নার্সিংহোমের বিরাট খরচ আসছে। স্বপ্নার বাসনা নার্সিংহোমটা যেন খানদানি হয়। ডাক্তারের সঙ্গে সে ব্যবস্থা করে ফেলেছে। এজেন্সিকে যে টাকা দিতে হচ্ছে। নার্সিংহোম তার চেয়ে কম নিচ্ছে না। পরের মাসে স্বপ্না যায়নি। একাই ঘুরে এসে রিপোর্ট দিয়েছিল নবকুমার। নারীকে এবার একটু স্বাস্থ্যবতী মনে হয়েছিল তার। নিতম্ব এবং বুকের ভার যেন বেড়েছে। কথাটা শোনার পর স্বপ্না বলেছে, তোমার আর যাওয়ার দরকার নেই। মিস্টার সেন যা করার করবেন।যেহেতু স্বপ্ন এখন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, রাত্রে ভালো ঘুম হচ্ছে না, তাই ও নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন করেনি নবকুমার।

আজ রাত্রে সমস্ত হৃদয় জুড়ে কল্লোল। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না সে। নতুন ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ঘন-ঘন সিগারেট খাচ্ছিল নবকুমার। আগামীকাল সকালে অপারেশন। ডাক্তার কোনও রিস্ক নিতে চাইছেন না। নারীকে পরিচ্ছন্ন করে নার্সিংহোমে ভরতি করা হয়েছে গতকাল। কিন্তু প্রসব বেদনার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। স্বপ্নও চেয়েছিল সিজার হোক। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশু যে কষ্ট পায় তা ওই নারীর কারণে হোক সে চাইছে না। কিন্তু নারীর শরীরে রক্তাল্পতা, রক্তচাপ প্রতিকূল বলে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন ডাক্তার। এজেন্সির মিস্টার সেন। অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন স্বাভাবিক প্রসবের সময় প্রসূতির ক্ষতি হলে কোনও দায়িত্ব নেই। কিন্তু সিজারের কারণে যদি কিছু হয় তাহলে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ করতে হবে। স্বপ্ন বলেছিল, নিজে হলে তো আমি সিজার চাইতাম। ওর বেলাতেও তাই হোক। অতএব ডাক্তার ঝুঁকি নিচ্ছেন।

নবকুমার মাটির অনেক ওপরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল। আকাশ তারায়-তারায়। জমজমাট। কে যেন বলেছিল পূর্বপুরুষরা উত্তরাধিকারীর জন্মের আগে তারার মতো চেয়ে থাকেন। নবকুমার আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসল, আগামীকাল আমরা বাবা-মা হচ্ছি। আর সেই সময় ভেতর থেকে স্বপ্নার গলা ভেসে এল, নবু!

স্বপ্নার হাতে টেলিফোন। তার পরনে দুধরঙা স্বচ্ছনাইটি। শরীরে সামান্য মেদেরও জায়গা হয়নি। খাপখোলা তলোয়ারের মতো ঝকঝকে, আকর্ষণীয়া। স্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়াতেই টেলিফোনে হাত চাপা পড়ল, হরিবল! আমার পক্ষে বোঝানো অসম্ভব, তুমি বোঝাও।

কে?

তোমার মা। আমাদের বাচ্চা হবে খবরটা দেওয়া দরকার। আফটার অল উনি ঠাকুমা। রিসিভারটা রেখে পাশের কটে গড়িয়ে পড়ল স্বপ্ন। লোভ সামলাতে পারল না নবকুমার। একটা হাত আলতো করে স্বপ্নর কোমরের চৌহদ্দিতে ঘুরিয়ে নিয়ে পেটের ওপর রাখল। হ্যাঁ, এটুকু করতে দিতে ওর আপত্তি হয় না।

কে বলছ? মা? রিসিভার তুলে প্রশ্ন করল নবকুমার। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ। ডাক্তার প্রেডিক্ট করেছে, নাতি হবে তোমার। না-না, তোমার বউমা ক্যারি করছে না। দ্যাখো ক্যারি করাটা বড় কথা নয়। আমার আর তোমার বউমার রক্ত নিয়ে ও আসছে, এটাই বড় কথা। তুমি আশীর্বাদ করছ তো? নবকুমার উত্তরটা শোনার জন্যে অপেক্ষা করল, না-না, এটা পছন্দ-অপছন্দের প্রশ্ন নয়। তোমার বউমার পক্ষে ক্যারি করা ফিজিক্যালি এবং ইকনমিক্যালি অসম্ভব। বাস্তবকে অস্বীকার করে কি লাভ। বাচ্চা ক্যারি করলে ওর শরীরের কমপ্লিকেশন বেড়ে যাবে। শী উইল লুজ হার ফিগার। আর অন্তত মাসছয়েক ওকে বাড়িতে বসে থাকতে হবে। সেটাও অসম্ভব। হ্যাঁ, মারুতি কিনেছি আমরা। কি বললে?না-না, ডাক্তার এবং এজেন্সি প্রতি মুহূর্তে নজর রাখছে। আমার স্পার্ম, ওর ওভাম থেকেই শিশু আসছে, এ ব্যাপারে ক্যারিয়ারের কোনও ভূমিকা নেই। জাস্ট ওর ওভারিতে প্লেস করে দেওয়া হয়েছে। আফটার অল উই আর পেইং ফর ইট। মা মা মা–যাচ্চলে! লাইনটা কেটে গেল। নবকুমার স্বপ্নার দিকে তাকাল।

স্বপ্ন চোখ বন্ধ করে বলল, দিজ ওল্ড পিপল আর রিয়েলি ক্রেজি। আধুনিক ব্যাপারগুলো ওদের মাথায় কবে ঢুকবে কে জানে।

দারুণ সেজেছে আজ স্বপ্না। নার্সিংহোম থেকে সোজা অফিসে চলে যাবে। নবকুমারের মনে পড়ল ছেলেবেলায় মা বিয়েবাড়িতে যাওয়ার সময়েও এত সুন্দর সাজতে জানতেন না। ডাক্তার খাসনবীশ ওদের দেখামাত্র অগ্রিম অভিনন্দন জানালেন, যা ভয় পেয়েছিলাম তা নয়, অপারেশন আটকাবে না। মিনিট চল্লিশেক অপেক্ষা করুন।

স্বপ্ন বলল, একটু তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয়। সাড়ে এগারোটায় একটা কনফারেন্স আছে।

এজেন্সির মালিক মিস্টার সেন এসে গেলেন, খুব তো চিন্তা করছিলেন। আরে আমার পছন্দ খারাপ নয়। চার-চারটে বাচ্চার মা। এসব ধকল কিছুই নয়।

ওরা নারীর সঙ্গে দেখা করতে গেল। একদিন নার্সিংহোমের তোয়াজ খেয়েই যেন চেহারা পালটে গেছে। পেট এখন পরিপূর্ণ। মিনমিনিয়ে বলল, আমার তো এমনিতেই হয় কর্পোরেশনের হাসপাতালে। পেট কাটবে কেন?

স্বপ্ন বলল,কোনও অসুবিধে হবে না তোমার। একদম ফিট হলে তবেই বাড়ি যাবে।

নারী চোখ বন্ধ করল, এবার বড় জ্বালাচ্ছে।

স্বপ্ন চমকে জিজ্ঞাসা করল, জ্বালাচ্ছে মানে? কে জ্বালাচ্ছে?

নারী পেটে হাত রাখল, এইটে। কাল সারারাত লাথি মেরেছে।

স্বপ্ন হাসল, তা তো মারবেই। ফরেন ল্যান্ডে কে বেশিদিন থাকতে চায় বলো। তুমি সকালে দুধটুধ খেয়েছ তো?

ডাক্তার খাসনবীশ বললেন, ওসব চিন্তা করবেন না। ভি আই পি ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে।

স্বপ্নার বুকে ঢিপঢিপ, নবকুমারের হাতুড়ি পড়ছিল। অপারেশন চলছে। নবকুমারকে মিস্টার সেন বললেন, ওর স্বামী এসেছে। বাইরে থাকতে বলেছি।

ও। নবকুমার কি বলবে ভেবে পেল না।

আজই বাকি পেমেন্ট করে আপনাকে বিল পাঠিয়ে দেব।

এই সময় ডাক্তার বেরিয়ে এলেন, কনগ্রাচুলেশন। আপনাদের পুত্র হয়েছে।

স্বপ্ন সব ভুলে নবকুমারকে জড়িয়ে ধরল। নবকুমারের মনে হল, এত আরাম সে কখনও পায়নি। স্বপ্ন ছিটকে গেল ডাক্তারের কাছে, আমার ছেলেকে দেখব ডাক্তারবাবু।

ডাক্তার বললেন, দাঁড়ান। ওয়াশ করানো হচ্ছে। আট পাউন্ড ওজন। রিয়েল হেলদি।

নারীর চেতনা খুব দ্রুত ফিরে এল। সে মুখ ফিরিয়ে নার্সকে দেখতে পেয়েই ডাকল, আচ্ছা আমার কী হয়েছে?

নার্স গম্ভীর গলায় জবাব দিল, ছেলে।

নারীর মুখে স্বৰ্গীয় আনন্দ ফুটে উঠল। তার শরীর মন্থন করে একটি শব্দ বেরিয়ে এল, আঃ!

নার্স চমকে মুখ ফেরাল, কী হল?

নারী বলল, পর-পর চারটে মেয়ে হওয়ায় সবাই আমাকে খুব বদনাম দিচ্ছিল। এবার তো ছেলে হল। হল তো! আমার ছেলেকে নিয়ে আসুন, একটু দেখব।

নার্স দোনমনা করল। তারপর পাশের কট থেকে শিশুটিকে তুলে এনে নারীর সামনে ধরল। অপলকে নারী তাকে দেখল। তার মুখে ঈশ্বর তখন নিজের শ্রেষ্ঠ সুখের ছবি আঁকবার চেষ্টা করছিলেন। নার্স বলল, দেখা হল?

নারী আলতো আঙুলে কোনওমতে শিশুকে স্পর্শ করে বলল, নাকটা আমার মতো হয়েছে।

ডক্টর খাসনবীশ বললেন, এভরিথিং অলরাইট, তবে আমি শিশুকে আরও দুদিন নার্সিংহোমে রাখতে চাই।

একটু আগেইনবকুমার এবং স্বপ্ন সন্তানদর্শন করে এসেছে। দুজনেই আবেগে টগবগ করছে এখন। ডাক্তারের কথাটা শুনে স্বপ্ন আঁতকে উঠল, ওমা! কেন? নো ডক্টর, আই অ্যাম ডাইং ফর হিম। এখনই নিয়ে যাই।

দুটো দিন ধৈর্য ধরুন না। তদ্দিনে পৃথিবীর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাক। কেমন দেখলেন?

একদম স্বপ্নার মুখ বসানো। নবকুমার জবাব দিল।

মাতৃমুখী পুত্রসন্তান সুখী হয়। ডাক্তার জবাব দিলেন।

নাকটা কিন্তু ওর মতো। ওদের বংশের যা ধারা। স্বপ্ন বলে উঠল, রং কেমন হবে ডাক্তার? আমার খুব ভয় করছে।

ভয় করছে কেন?

মানলাম আমার আর নবুর ক্রিয়েশন কিন্তু এনভায়রনমেন্টের একটা প্রভাব আছে তো? দশ মাস ওই রোগা-অশিক্ষিত মেয়েটার শরীরে থেকে ও আবার কোনও ব্যাড হ্যাবিট আর্ন না করে বসে! স্বপ্ন শিউরে উঠল।

ডাক্তার হাসলেন, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে একমাত্র মা-বাবার রক্তের কাছেই ঋণগ্রস্ত থাকে। ওই দশ মাস তার স্মৃতি তো চিরদিনের মতোই অন্ধকারে। যেমন ধরুন, নার্সারিতে গেলে দেখতে পাবেন বীজ থেকে চারাগাছ তৈরি করতে একটা টেম্পরারি বেডের প্রয়োজন হয়। এইটে সেই রকম। দুদিন পরে আপনাদের সন্তান আপনারা নিয়ে যাবেন, আপনারা যেভাবে মানুষ করতে চাইবেন তাই হবে।

নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে আসার মুখে ওরা দাঁড়িয়ে গেল। সেই শুঁটকো লোকটা বিড়ি টানছে। ওদের দাঁড়াতে দেখে এগিয়ে এল, সেন সাহেব বলে গেলেন ভালো আছে। আপনাদের সঙ্গে কথা হয়েছে?

স্বপ্ন বেমালুম জবাব দিল, না, ডাক্তার নিষেধ করল। ঘুমাচ্ছে।

ও। ছেলে হয়েছে শুনলাম! লোকটি হাসল।

হ্যাঁ! নবকুমার বলল, আমরা সব টাকাপয়সা মিটিয়ে দিচ্ছি। তুমি ওকে সুস্থ হলে নিয়ে যেও। আচ্ছা চলি ভাই।

তা তো যাবেন কিন্তু এদিকে যে একটা মুশকিল হয়ে গেল!

কি মুশকিল?

পেট কাটতে বললেন কেন? একবার পেট কাটলে দু-বছরের মধ্যে পেটে বাচ্চা নেওয়া যায় না। শুনছি সামনের বছর থেকে রেট ডাবল হয়ে যাবে। এক বছর বেকার থাকব, এই ক্ষতিপূরণটা আপনারা করে দেবেন। লোকটা হাত কচলালো।

নবকুমার স্বপ্নার দিকে তাকাল। স্বপ্ন বলল, তুমি আবার ওকে ক্যারি করাবে?

সেইজন্যেই তো আমরা আছি।

বেশ, আমি মিস্টার সেনের সঙ্গে কথা বলব। ওরা দ্রুত মারুতিতে উঠে বসল।

লিফটম্যান একটা কিশোরীকে দিয়েছে। সে শিশুকে দেখাশোনা করত ওরা বাড়িতে থাকলে। অফিসে বের হওয়ার সময় মিসেস পালিতের ক্ৰেশে দিয়ে যাবে ওকে। ফেরার সময় নিয়ে আসবে। সমস্যা হল মিসেস পালিত দু-মাসের নিচের বাচ্চাদের রাখেন না। এই দু-মাস কী করা যায়?বারো বছরের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কিশোরীকে স্বপ্না বারংবার জিজ্ঞাসা করেছে, সে দু মাস ম্যানেজ করতে পারবে কিনা! কিশোরী মাথা নেড়েছে। গ্রামের বাড়িতে সে কত শিশুকে ঘুম। পাড়িয়েছে। স্বপ্না অবশ্য তাতে ভোলার পাত্রী নয়। সে ডক্টর খাসনবীশের কাছ থেকে শিশুর পরিচর্যা-পদ্ধতি বিস্তারিত লিখে নিয়ে এসেছে। শনিবার-রবিবার তার ছুটি থাকে, অতএব শনিবার সকালেই শিশুটিকে নিয়ে আসা হল।

বাড়িতে যেন উৎসব। নতুন ফ্ল্যাটে শিশুর কান্না, স্বপ্নর ব্যস্ততা, নবকুমারের খুব ভালো লাগছিল। স্বপ্ন সমস্ত শরীর একটা সাদা অ্যাপ্রনে জড়িয়ে পাতলা করে বেবিফুড গুলে শিশুর মুখে বোতলটা ধরে বলল, সোনামণিটা, খেয়ে নাও!

শিশু দু-বার ঠোঁট ফোলাল, জিভ ছোঁয়াল এবং ঘুমিয়ে পড়ল। স্বপ্না খুব নিরাশ হল। নবকুমার বলল, ডার্লিং, ঠিক তোমরা স্বভাব পেয়েছে। তুমি যেমন খাবারের নামেই আঁতকে ওঠো–।

স্বপ্ন বলল, ডোন্ট বি সিলি। আমাকে ফিগার রাখতে হয়। একে তো খাওয়াতেই হবে। একটু পরে চেষ্টা করব। কি মিষ্টি দেখতে, না?

কোলে নিও না। তোমার শাড়ি নষ্ট করবে।

করুক। স্বপ্ন আরও ঝুঁকে পড়ল।

তিনটে নাগাদ ডাক্তার ছুটে এলেন। স্বপ্ন উদভ্রান্ত, নবকুমার কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

শিশুটিকে দেখে ডাক্তার বললেন, একটু ভুল হয়ে গিয়েছে।

দু-জনেই একসঙ্গে জানতে চাইল, কী?

নার্সকে বলে দিইনি যে ওকে যেন মায়ের দুধ না খাওয়ায়। এই ক-দিনে সেই অভ্যেসটা হয়ে যাওয়ায় ও বেবিফুড খেতে চাইছে না।

স্বপ্ন এবং নবকুমার পরস্পরের দিকে তাকাল। এই সময় বাচ্চাটা ককিয়ে কেঁদে উঠতেই। কিশোরী বোতলটা মুখে ধরতেই সে প্রতিবাদ করল। এখন আর ওর কান্না থামছে না। স্বপ্ন পাগলের মতো ডাক্তারকে একটা রাস্তা বের করতে বলল। এত কষ্টের সন্তান যদি না খেয়ে মরে যায়, তাহলে?

ডাক্তার খাসনবীশ বললেন, ব্রেস্ট মিল্ক আর বেবিফুড একসঙ্গে অভ্যেস করাতে হবে। প্রথমটাকে বন্ধ করলে তখন দ্বিতীয়টাকে খেতে আপত্তি করবে না। দেখি কি করা যায়। আপনি বরং একবার এজেন্সিকে ফোন করুন।

নবকুমার মিস্টার সেনকে ধরল, একটি মেয়ে দিন যে আমাদের বাচ্চাকে খাওয়াতে পারে। মানে বুকের দুধের দরকার।

মিস্টার সেন টেলিফোনে বললেন, দিনে কুড়ি টাকা দিতে হবে।

তাই সই।

স্বপ্ন বলল, বলে দাও, একটু ভদ্র-সভ্য যেন হয়।

মিস্টার সেন শুনে বললেন, নিশ্চয়ই-নিশ্চয়ই। এ রেওয়াজ তো চিরকাল এদেশে আছে।

দরজা খুলে শুঁটকো লোকটাকে দেখে চমকে উঠল নবকুমার, কী ব্যাপার?

বুকের দুধ দরকার, সেন সাহেব বলেছেন।

হ্যাঁ, কিন্তু–।

হাঁটাচলা করছে, সেলাই কেটে দিয়েছে যখন, তখন ওকেই নিয়ে এলাম।

নবকুমার দেখল নারী কিছুদূরে জড়সড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে। অগত্যা সে ভেতরে আসতে বলল। স্বপ্ন জিজ্ঞাসা করল, এত বড় অপারেশনের পর হাঁটাচলা করছ?

শুঁটকো বলল, গরিব মানুষের সব করতে হয়।

শিশু মাতৃদুগ্ধের স্পর্শ পেতেই আপ্লুত হল। স্বপ্না ঝাঁঝিয়ে উঠল, নবু, অন্য ঘরে যাও। নবকুমার দ্রুত পাশের ঘরে চলে গেল। স্বপ্ন তাকে অনুসরণ করল, একে পাঠানো উচিত হয়নি। নিজের ছেলে বলে ক্লেইম করে না বসে।

ব্রেস্ট মিল্ক দরকার যে। নবকুমার বিড়বিড় করল, কনসিভ না করলে যে শরীরে মিল্ক তৈরি হয় লো, নাহলে তো তুমিই–।

নবু! ধমকে উঠল স্বপ্না, বড্ড স্ল্যাঙ বলছ তুমি আজকাল।

শিশু ঘুমিয়ে পড়লে শুঁটকো বলল, এবার আমরা উঠি।

আবার কখন আসবে?

রাত্রে তো আসা সম্ভব নয়। তাহলে তো ওকে রেখে যেতে হয়।

মাঝে-মাঝেই দরকার হবে যে।

তা হবে। তবে খাওয়া-পরা ছাড়া চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি করলে চল্লিশটাকা পড়বে। জানিয়ে দিয়ে শুঁটকো চলে গেল।

নারীর থাকার ব্যবস্থা করে দিল স্বপ্ন। শুধু খাওয়ানোর সময় ছাড়া নারী যেন বাচ্চার কাছে আসে জানিয়ে দিল।

মধ্যরাত্রে শিশু কেঁদে উঠতেই নবকুমার লাফিয়ে বিছানা ছাড়ল। ওপাশের বিছানায় শোওয়া স্বপ্ন জিজ্ঞাসা করল, কোথায় যাচ্ছ?

ও কাঁদছে।

স্বপ্ন এবং নবকুমার শিশুর পাশে এসে দাঁড়াল। দুটো মুষ্টিবদ্ধ হাত, শিশু কেঁদে চলেছে। স্বপ্ন বলল, আজ পাঁচবার খেয়েছে। ওর সঙ্গে কনট্র্যাক্ট, পাঁচবার খাওয়াবে। এ দেখছি সর্বভুক।

নবকুমার বলল, নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে তাই কাঁদছে। ওকে ডাকো না।

স্বপ্ন পাশের ঘরে ঢুকে দেখল নারী অঘোরে ঘুমাচ্ছে। তাকে জাগিয়ে প্রস্তাবটি নিবেদন করতেই সে মুখ ফেরাল, ছিবড়ে করে দিল, ছিবড়ে করে দিল।

মানে? হকচকিয়ে গেল স্বপ্ন।

এর আগে চার-চারটে আমাকে ছিবড়ে করেছে। ওদের মুখে তো বুকের দুধ ছাড়া কিছু দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। এও আমাকে শেষ করবে। কিন্তু আমার তো দিনে পাঁচবার, কোটা পূর্ণ হয়ে গেছে আজ। নারী পাশ ফিরে শুলো।

কিন্তু ও যে কাঁদছে! আঁতকে উঠল স্বপ্ন।

কাঁদুক। নারী আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

এখন পর্যন্ত গল্পটি পড়া হয়েছে ২০ বার
যদি গল্পটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন