ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

বাধিয়াছে দলাদলি লাগিয়াছে গোল।
বিধবার বিয়ে হবে বাজিয়াছে ঢোল॥
কত বাদী প্রতিবাদী করে কত রব।
ছেলে বুড়া আদি করি মাতিয়াছে সব॥
কেহ উঠে শাখাপরে কেহ থাকে মূলে।
করিছে প্রমাণ জড়ো পাঁজি পুতি খুলে॥
একদলে যত বুড়ো আর দলে ছোঁড়া।
গোঁড়া হয়ে মাতে সব দেখে নাক গোড়া॥
লাফালাফি দাপাদপি করিতেছে যত।
দুই দলে খাপাখাপি ছাপাছাপি কত॥
বচন বচন করি কত কথা বলে।
ধর্ম্মের বিচাপথে কেহ নাহি চলে॥
“পরাশর” প্রমাণেতে বিধি বলে কেউ।
কেহ বলে এ যে দেখি সাগরের ঢেউ॥
কোথা বা করিছে লোক শুধু হেউ হেউ।
কোথা বা বাঘের পিছে লাগিয়াছে ফেউ॥
অনেকেই এইমত লতেছে বিধান।
“অক্ষতযোনির” বটে বিধাহ-ধিধান॥
কেহ বলে ক্ষতাক্ষত কেবা আর বাছে?
একেবারে তরে যাক্‌ যত রাঁড়ী আছে।
কেহ কহে এই বিধি কেমনে হইবে।
হিঁদুর ঘরের রাঁড়ী সিঁ’দুর পরিবে।
বুকে ছেলে কাঁকে ছেলে ছেলে ঝোলে কোলে।
তার বিয়ে বিধি নয় উলু উলু ব’লে॥
গিলে গিলে ভাত থায় দাঁত নাই মুখে।
হইয়াছে আঁত খালি হাত চাপা বুকে॥
ঘাটে যারে নিয়ে যাব চড়াইয়া খাটে।
শাড়ীপরা চুড়ি হাতে তারে নাকি খাটে॥
শুনিয়া বিয়ের নাম “কোনে” সেজে বুড়ী।
কেমনে বলিবে মুখে “থুড়ী থুড়ী থুড়ী”॥
পোড়ামুখ পোড়াইয়া কোন্‌ পোড়ামুখী।
“দুখী” “সুখী” মেয়ে ফেলে কেঁচে হবে খুকী॥
ব্যাটা আছে যার তার বেলগাছ এঁচে।
তুড়ী মেরে থুড়ী ব’লে সে বসিবে কেঁচে॥
গমনের আয়োজন শমনের ঘরে।
বিবাহের সাধ সে কি মনে আর করে॥
যেখানে সেখানে শুনি এই কলরব।
বালার বিবাহ দিতে রাজি আছে সব॥
সকলেই এইরূপ বলাবলি করে।
ছুঁড়ীর কল্যাণে যেন বুড়ী নাহি তরে॥
শরীর পড়েছে ঝুলি চুলগুলি পাকা।
কে ধরাবে মাছ তারে কে পরাবে শাঁখা॥
জ্ঞানহারা হয়ে যাই নাহি পাই ধ্যানে।
ফে পাইবে “সৎবাপ” মায়ের কল্যাণে।

২৭৩
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন