দ্বিতীয় গীত।
বাউলের সুর।
॥ রাগিণী ভৈরবী – তাল পোস্তা॥
ওগো মা, বিক্টোরিয়া, কর্ গো মানা,
কর্ গো মানা।
যত তোর, রাঙা ছেলে, আর যেন মা !
চোক রাঙেনা, চোক রাঙে না॥
প্রজা লোকের জাতি ধর্ম্মে,
কেহ যেন জোর করে না।
যেন সেই প্রতিজ্ঞা বজায় থাকে,
দিয়েছ মা, যে ঘোষণা।
ও মা, জাতিভেদে, ভজন সাধন,
ধর্ম্মমতে আরাধনা।
মহা অমূল্য ধন ধর্ম্মরতন,
এমন ধন তো আর পাবে না।
যত মিশনারি এ দেশেতে,
এসে করে কি কারখানা।
তারা ঈশুমন্ত্র কানে ফুঁকে,
শিশুকে দেয় কুমন্ত্রণা।
ফেরে হাটে, ঘাটে, বাটে, মাঠে,
নানা ঠাটে, ফন্দি নানা।
বলে দিশি কৃষ্ণ ছেড়ে তোরা,
ঈশুখ্রীষ্ট কর ভজনা!
ওমা হেদো বনে কেঁদো চরে,
তার ভয়েতে প্রাণ বাঁচে না।
তার পাশে “হুমো” হুতুমথুমো,
ঘুমো ছেলের জাত রাখে না।
যত শাদা জুজু জোটে বুড়ী,
“ছেলেধরা” প্রতি জনা।
এরা জননীর কোল শূন্য কোরে,
কেড়ে নিচ্ছে দুধের ছানা।
সদা ধর্ম্ম ধর্ম্ম কোরে মরে,
ধর্ম্ম-মর্ম্ম কেউ বোঝে না।
হোরে পরের ধর্ম্ম, ধর্ম্ম হবে,
এইটী মনে বিবেচনা॥
যেন আপন ধর্ম্ম আপ্ নি পালে,
পরের ধর্ম্ম নাশ করে না।
এদের ধর্ম্ম-পথের স্বাধীনতা,
রেখোনা মা, আর রেখোনা।
কেমন কুহক জানে এরা,
উপদেশে করে কাণা।
ওমা বংশ পিও ধংস কোরে,
কত ছেলে খেলে খানা।
নয় তোমার অধীন, স্বাধীন এরা,
কেমন কোরে কোর্ব্বে মানা?
ওমা, আমরা সেটা বুঝ্ তে পারি,
খোট্টা লোকে তা বোঝে না।
তুমি সর্ব্বেশ্বরী যদি তাদের,
চোক রাঙায়ে কর মানা।
তবে টুপি খুলে, আড্ডা ভুলে,
পালিয়ে যাবার পথ পাবে না।
নগর কমিশনর যাঁরা,
তাঁদের একি বিবেচনা।
এ কি প্রাণে সহে যাঁড় দিয়ে মা,
ময়লা-ফেলার গাড়ী টানা।
ও মা. দুগ্ধ বিনে মরি প্রাণে,
হিণদু লোকের প্রাণ বাঁচে না।
যত শাদা লোকের অত্যাচারে,
গরু বাছুর আর বাঁচে না।
যত দেশের গরু ভুট কোরেছে,
টেবিল পেতে খেয়ে খানা।
এরা ধাড়ী শুদ্ধ দিচ্ছে পেটে,
আস্ত ভগবতীর ছানা।
একে রামে রক্ষে নাইকো,
সুগ্রীব তার হল সেনা।
যত দিশি ছেলে কোপ্ চে উঠে,
চাল চেলেছে সাহেবানা।
কারে কৰ দুঃখের কথা,
কান পেতে মা কেউ শোনে না।
যারে দেবতা বলে পুজা করি,
তাতেই হোলো বিড়ম্বনা।
যারা লাঙল চষে, গাড়ী টানে,
করে কত হিত সাধনা।
আর দুগ্ধ দিয়ে জীবন বাঁচায়,
তৃণ খেয়ে প্রাণধারণা।
“গরু তরু” কল্পতরু,
এমন তরু আর হবে না।
ফলে “গরুগাছে” দধি, দুগ্ধ,
সর, নবনী, ঘৃত, ছানা।
মনের দুঃখে বুক ফাটে মা,
বোল্ তে গেলে মুখ ফোটে না।
যে গাছের ফলে সৃষ্টি চলে,
এমন গাছে দিচ্ছে হানা।
ওমা, গোহত্যাটা উঠ্ য়ে দেহ,
অতয় পদে এই বাসনা।
মাগো সফল গরু ফুর্ য়ে গেলে,
দুগ্ধ খেতে আর পাব না।
খাবার দ্রব্য অনেক আছে,
তাই নিয়ে মা চলুক খানা।
ওমা, এমন ত নয় গরুর মাংস
না খেলে পর প্রাণ বাঁচে না॥
স্বোণার বাঙাল, করে কাঙাল,
ইয়ং বাঙাল যত জনা।
সদা কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে,
কাণে লাগায় ফোঁস ফোঁসনা॥
এরা, না “হিঁন্দু” না “মোছোলমান”,
ধর্ম্মধনের ধার ধারে না।
নয় “মগ”, “ফিরিঙ্গী” বিষম “ধিঙ্গী”,
ভিতর বাহির যায় না জানা।
ঘরের ঢেঁকি, কুমীর হোয়ে।
ঘটায় কত অঘটনা।
এরা লোণা জল, ঢোকালে ঘরে,
আপন হাতে কেটে খানা।
অগাধ বিদ্যার বিদ্যাসাগর,
তরঙ্গ তায় রঙ্গ নানা।
তাতে বিধবাদের “কুলতরী”,
অকুলেতে কুল পেলে না।
কুলের তরী থাকলে কুলে,
কুলের ভাবনা আর থাকে না॥
সে যে অকূল-সাগর, দারুণ ডাগর,
কালা পানি বড় লোণা।
যখন সাগরে ঢেউ উঠেছিলো,
তখনি গিয়েছে জানা॥
এরা দফ্ রা খেয়ে নফ্ রা যত,
কোরে বসে কি এক্ খানা।
তখন কর্ত্তারা কেউ শুনলেন্ না তো,
লক্ষ লক্ষ হিঁদুর মানা॥
এরা বাঘেরে করিলেন শিকার,
কাঁদে করি ইদুঁর ছানা॥
তদবধি রাজ্যে তোমার,
উঠেছে এক কূরটনা।
ওমা, আমরা বুঝি মিছে সেটা,
অবোধে প্রবোধ মানে না॥
“কালবিল”* কাল্ বিল্ কোরেছেন,
হিঁদুর তাতে ঘোর যাতনা।
তুমি রাঁড়ের বিয়ে তুলে দিয়ে,
ছিঁড়ে ফেলো আইনখানা॥
ওমা, যে পাপে হোক্ প্রজা মরে,
চার টাকা দর, চাল্ মেলে না।
দেখ অনাহারে, প্রজা মরে,
না খেয়ে আর প্রাণ বাঁচেনা॥
ওমা, যত বাবু, হোলো কাবু,
আর চলে না বাবুয়ানা।
যারা আঙ্গুর পেস্তা দিত ফেলে,
তারা এখন চিবোয় চানা!
বড়মানষী দূরে থাকুক,
ভালো কোরে পেট চলে না।
এখন্ কেমন্ কোরে চড়বে গাড়ী,
জোটেনাকো ঘোড়া দানা !
শাসন পালন করেন যাঁরা,
হোলেন তাঁরা কালা কাণা।
ওমা, না খেয়ে সব প্রজা মরে,
নাইকো সেটী দেখা শোনা।
কত বার মা পোড়েছিলো,
দরখাস্ত কত খানা।
বলেন “ফিরি টেরেড” বনद কোর্ত্তে,
কোনো কালে কেউ পারে না॥
চেলের বাজার শস্তা কর,
পূরাও গো মা সব বাসনা।
তবে দুঃখী লোকের আশীর্ব্বাদে,
আপদ বিপদ আর রবে না॥
শিব সস্তেন কোর্চ্ছি তোমার,
মহামন্ত্র আরাধনা।
আছে মহারথী সেনাপতি,
ভগবতীর উপাসনা॥
দুর্গানামের দুর্গ গেঁথে,
রেখেছি মা “সেলেখানা”।
তাতে গুলি গোলা, সকল তোলা,
ভক্তি অস্ত্র আছে শাণা॥
আছে মনশিবিরে সজ্জা কোরে,
সংখ্যা হয় না কত সেনা।
আছে জোড়া ঘোড়া সত্য ধর্ম্ম,
উড়ে যাবে ধরে ডেনা॥
এই ভারত কিসে রক্ষা হবে,
ভেবো না মা, সে ভাবনা।
সেই “তাতিয়া তোপির” মাথা কেটে,
আমরা ধোরে দেব “নানা”॥
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন