টিটু আজ সন্ধে থেকে বাসায়ই ছিলো।কোথাও বের হয় নি।ড্রইং রুমে টিটু জিলম আর রুদ্রর সংগে আছে দিদার।পরিবেশ কিছুটা থমথমে।অনেক্ষণ ধরে কেউই কিছুই বলছে না।নীরবতা ভাঙলো দিদার – কিরে জিলম দমে গেলি নাকি
জিলম কিছু বলে না।
রুদ্র বলে – নিশ্চিত বিরোধী দলের চক্রান্ত
জিলম বলে – বলে কী লাভ!বহির্বিশ্ব তো এসব বুঝতে চাইবে না।
রুদ্র বলে- দুই-চারটাকে ধরে জেলে পুড়ে দে।সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
টিটু বলে- এভাবে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করলে হবে না।প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
জিলম বলে- আইন চলবে আইনের নিয়মে।কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কীভাবে বুঝতে পারছি না।মনে হচ্ছে খেলা মাত্র শুরু।আরও কতো কী হয় কে জানে!
দিদার বলে- যাই হোক না কেনো রাষ্ট্রের মতো বিশাল এক শক্তি তোর সংগে আছে।তুই চাইলেই অনেক কিছু সম্ভব।
কিছুক্ষণ সবাই নীরব।
জিলম মনে মনে ভাবে – সব নষ্টের মূল হলো অই ডাইনিটা।কিন্তু বুঝেও কিছু করা যাচ্ছে না।সবচেয়ে ভালো হতো ওকে জনমের মতো শিক্ষা দিয়ে দিলে।কিন্তু মা তো এসব কখনোই মেনে নেবে না।প্রতিহিংসার রাজনীতি মা পছন্দ করেন না।কিন্তু এসব কথা তো আর বন্ধুদের বলা যায় না।জিলম একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে।
সেদিনের মতো আড্ডা ওখানেই থেমে যায়।জিলমের ম্লান মুখ দেখে কেউ আর কিছুই বলে না।আড্ডা জমে না, সুর্যাস্তের মতো ডুবে যায়।
ইদানিং আশা বেগমের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।এদিকে দেশের অবস্থাও ভালো নয়।মেয়াদও ফুরিয়ে এসেছে।নির্বাচনের বেশিদিন নেই।নির্বাচনের আগেই কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কিনা কে জানে।জিলমকে নিয়ে আশা বেগমের খুব টেনশন হয়।ক্ষমতায় থাকা এবং না থাকা উভয় অবস্থাতেই আশা বেগম অনিরাপদ বোধ করেন। কেনো যেনো শুধু মনে হয় জিলমকে কেউ একদিন সরিয়ে দেবে।ভাবতেই প্রতিবার আত্মা কেঁপে ওঠে চোখে জল চলে আসে।জিলমটা ঠিক পেরে উঠবে তো!জিলম কতোটা টের পায় আশা বেগম জানেন না কিন্তু তিনি প্রতিনিয়ত টের পান ঘরের শত্রু বাইরের শত্রু।কোনো শত্রু কম শক্তিশালী নয়।সবচেয়ে বড়ো কথা জনগণের একটা বৃহৎ অংশই আছে দারুণ অন্ধকারে।তারা আসল শত্রুকে এখনো চেনে নি।কিন্তু এসব কথা তার নিজের জায়গা থেকে জনগণকে সরাসরি বলাও সম্ভব নয়।আন্তর্জাতিকভাবে সমস্যা হতে পারে।শত্রুরা তো ওৎ পেতেই আছে।ক্ষমতায় কেউ চিরদিন থাকে না।আশাও থাকবে না।তাকেও টুডে অর টুমরো চলে যেতেই হবে।কিন্তু সমস্যা হলো যতক্ষণ থাকা যাচ্ছে ততক্ষণও অশান্তি আর অনিশ্চয়তা নিয়েই থাকতে হচ্ছে।এ বড়ো বেশি জটিল সমীকরণ, ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকে কেউ এসব বুঝবে না।রাজনৈতিক জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজ সে এই পজিশনে এসেছে।রাজনীতি মানেই জেল জুলুম হুলিয়া মিছিল মিটিং প্রতিবাদ ধাওয়া পালটা ধাওয়া।কী নিষ্ঠুর আর কুৎসিত এই রাজনীতি।হেমলক বিষের চেয়েও মারণঘাতী বিষ।তারচেয়েও বড়ো কথা এ দেশে রাজনীতির পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে মিথ্যের উপর।প্রতিটি মুহুর্তেই যেনো শুভংকরের ফাঁকি।
আশা বেগম একটা গ্লাসে পানি ঢেলে গ্লাসটা মেঝের উপর ঠাস করে ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেললো।গ্লাসটা আসলে সে নিজেই।সারাটা জীবন তো নিজেকে এভাবেই ভাঙতে হয় যখন রাজনীতিটা হয় এক ভয়ংকর খুনির সংগে ধাওয়া পালটা ধাওয়া খেলা।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন