এয়ারপোর্টের অপোজিটে ওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে আছে অনিমেষ।এয়ারপোর্টের চৌরাস্তার সিগন্যাল পার হয়ে দক্ষিণ দিকে ৭/৮ গজ দুরে এসে থামলো একটি কালো গাড়ি।অনিমেষ গাড়িটি দেখামাত্রই ঝটিতে গাড়িটির দিকে ছুটে গেলো।অনিমেষ গাড়িটির কাছে যেতেই বাম পাশের পেছনের দরোজা খুলে গেলো।অনিমেষ ঢুকে পড়লো গাড়ির ভেতরে।ঢুকেই নমষ্কার জানালো।যাকে নমষ্কার জানালো তার নাম অজিত দেবনাথ।দেবনাথের চোখে কালো সানগ্লাস।ঠোঁটের উপর পুরু গোঁফ।পরনে পাঞ্জাবি আর ব্ল্যাক জিন্স।
অজিত নমষ্কারের জবাবে নমষ্কার না বলে শুধু অনিমেষের দিকে এক নজর তাকিয়ে স্মিথ হেসে বাইরের দৃশ্যের দিকে মনোযোগ দিলো।
অনিমেষও বাইরের দৃশ্যের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার ভান করলো।অজিত দেবনাথও যে বাইরের দৃশ্যের দিকে তাকাবার ভান করে আছে – সেটা অনিমেষের বুঝবার কথা নয়।
প্রথমে একটি মিষ্টির দোকান থেকে ১০ কেজি মিষ্টান্ন কিনে অজিত দেবনাথ অনিমেষকে বললো- আর কিছু লাগবে?
অনিমেষ জানে ‘আর কিছু লাগবে’ এটা শুধু জিজ্ঞেস করার উদ্দেশেই জিজ্ঞেস করা।অনিমেষের জন্য সমীচীন নয় ‘হ্যাঁ,লাগবে’ বলা আর এটা অজিতদাও জানেন।শুধু শুধু নাটক!
অনিমেষ বললো- জ্বি না, স্যার।যা নিয়েছেন, চলবে।
অজিতকে মনে হলো সে অনিমেষের উত্তরে খুশি হয়েছে।
গাড়িটি গন্তব্যে এসে পৌঁছোলো রাত ৩.৩৩- এ।
রহিমা বেগম অপেক্ষায় অস্থির হয়ে পায়চারি করছিলেন।কলিং বেল বাজার পর রহিমা নিজেই দরোজা খুলে অজিত দেবনাথকে নমষ্কার জানালো।
অজিতও নমষ্কার জানালো রহিমাকে।
রহিমার চোখমুখ সারা শরীর ঝলমল করছে।সে অজিতকে বললো- দাদা আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে নিন।
অজিত ফ্রেশ হলে রহিমা অজিতকে সরাসরি ডাইনিং-এ নিয়ে এলো।টেবিলে সাজানো ১৫ থেকে ২০ আইটেম।অজিতের খাদ্যখানায় রেস্ট্রিকশন আছে।সে রেস্ট্রিকশনের চৌদ্দগুষ্ঠি খগেন করে দিয়ে প্রায় সব আইটেমই একটু একটু করে চেখে দেখলো।
রহিমা অজিতবাবুর পাতে খাবার তুলে দিচ্ছিলো আর উসখুস করছিলো।রহিমা চাইছিলো খেতে খেতে ডাইনিংয়েই আলাপ সেরে নিতে কারণ দাদা আগামীকালই চলে যাবেন।সময় অল্প,তাই দেরি না করাই শ্রেয়।দাদা সম্ভবত রহিমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছেন।বুঝতে পেরে বললেন- আমি এসেছি মূলত লোকেশনগুলি দেখতে।খুব শীঘ্রই তোমার ডাক আসবে।যে-কোনো সময়।তৈরি থেকো।
রহিমা তড়িঘড়ি করে বললো- জ্বি দাদা, আই এম অলওয়েজ রেডি।
খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হলে রহিমা দাদাকে নিয়ে গেলেন একদম পশ্চিম পাশের রুমে।
-দাদা আপনি তাহলে রেস্ট নিন।
অজিতবাবু বললো- ওকে।
অজিতের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি আর কেমন এক চাহনি।সেই হাসি আর চাহনির অর্থ রহিমা জানে।রহিমাও হাসির প্রত্যুত্তরে হাসি দিয়ে বেরিয়ে এলো।
মনিষা মনিষা।
মনিষা আশেপাশেই ছিলো।
-জ্বি ম্যাডাম।
রহিমা মনিষাকে অজিতের কক্ষের দিকে ইশারা করলো।মনিষাকে আগে থেকেই রহিমা প্রস্তুত করে রেখেছিলো।
মনিষা যখন অজিতবাবুর কক্ষে ঢুকলো অজিত পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছিলো।মনিষা স্পষ্ট দেখতে পেলো পত্রিকার অক্ষরগুলি বাংলা ভাষার নয়।
অজিত মনিষাকে দেখেছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না।নাকি দেখেও না দেখার ভান করছে।মনিষা কি দাঁড়িয়েই থাকবে নাকি বসবে! অনুমতি ছাড়া বসবে কি করে।কী একটা অবস্থা! ধুর।
অজিত মনিষার দিকে তাকালো।হেসে দিয়ে বললো- আরে মনিষা, এসেছো!বোসো।
যেনো মনিষাকে সে কতোকাল ধরে চেনে।মনিষা জানে তাকে কোথায় বসতে হবে।সবই পুরনো নাটক।চিরচেনা অভিনয়।তবুও বার বার একই অভিনয় করে যেতে হয়।অজিতের চোখ দেখে মনিষা বুঝতে পারে মনিষাকে অজিতের পছন্দ হয়েছে।না, ভুল হলো- মনিষাকে নয়,পছন্দ হয়েছে জলন্ত আগুনের মতো মনিষার তীব্র শরীর,শরীরের ভাঁজ।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন