তুমি চইলা গিয়া ভালাই করসো
থাইকা গেলে নিসঃঙ্গতা আমারে
বুড়া আঙ্গুল দেখাইতে পারতো না
দিন শেষে মনে হইতো
বাসায় ফিরা লাগবো
সারেং বউয়ের মতো আমার লইগাও
অপেক্ষা করতাসে মিষ্টি একটা বউ
আমার কুনু রুটিন নাইকা
টাইমের ব্যাপারে আমি চিরদিন টেরবেটর
তুমি থাকলে রুটিন মাইনা চলার
প্যারা লইতে হইতো
চইলা গিয়া প্যারা থাইকা বাঁচায়া দিলা
তুমি থাইকা গেলে
নিয়মিত বাজারে যাইতে হইতো
আমি শালার মাছ খাই
কিন্তু কুনটা কী মাছ- চিনি না
তোমার লইগা বাজারে গিয়া
বোকার লাহান জিগাইতে হইতো:
ভাই এইটা কি নলা
নাকি কাইলাবাউশ
একটা রেগুলার চাকরি পাওয়ার লইগা
কতো জনের হাত পাও ধরতে হইতো
গরিব হইলে কি হইবো
আমগো কি ব্যক্তিত্ব নাই
তুমি থাকলে ব্যক্তিত্বের মায়রে বাপ
কইয়া ছোট লোকগুলার কাছে
গলা নিচু কইরা চাকরির কথা কয়া
পরাজয়ের গ্লানি লইয়া
নিজেরে ধিক্কার দিতে হইতো
বড়ো বাঁচান বাঁচাইয়া দিলা
রাইতের বেলা জাইগা থাকি
আকাশের তারাগুলি আমারে গুনে
নিজেরে কবি কবি লাগে
মনে মনে কই হে অধম মানুষেরা
তোমরা আমারে না চিনলে কি হইবো
আকাশের নক্ষত্রগুলান
আমারে ঠিকই চিনে
তুমি থাইকা গেলে এইসব হাইথট
ব্যাপার স্যাপার ক্যামনে হইতো -কও
এখন আমি স্বাধীন বাঙ্গালির চাইতেও
বেশি স্বাধীন
আমার কুনু পিছুটান নাই
আমার লইগা কেউ অপেক্ষা করে না
শুধু মাঝরাইতে পকেট দরজা দিয়া
ঢুকবার টাইমে
রাস্তার পুরান কুত্তাটা কিঁউ কিঁউ
কইরা উঠে
তুমি থাইকা গেলে মাঝরাইতের নেশা
আমারে পাইতো না
মনে হইতো জীবনের হিসাবগুলা
মিলা যাইতাসে
মিলা গেলে আমি আর আমি
হইতে পারতাম না
তুমি চইলা গিয়া ভালাই করসো
থাইকা গেলে পোড়া গন্ধ কারে কয়-
জানা হইতো না
জানা হইতো না – আমারে পায় নাই কেউ
শুধু তুমি পাইসিলা।
৬১৭

তুমি চইলা গিয়া ভালাই করসো: এক স্বাধীন বাঙালির স্বর
যুবক অনার্য রচিত ‘তুমি চইলা গিয়া ভালাই করসো’ কবিতাটি আধুনিক বিরহের এক সাহসী ও আপাত-স্ব-বিরোধিতাপূর্ণ দলিল। এটি প্রথাগত দুঃখবাদী প্রেমের কবিতার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে।
কবিতাটির প্রধান শক্তি হলো এর সরাসরি ও একান্ত নিজস্ব কথ্য ভাষা (colloquialism)। “ভালাই করছো,” “টেরবেটর,” “শালার মাছ,” “মায়রে বাপ”—এই ধরনের শব্দবন্ধগুলি পাঠকের সামনে এক বেপরোয়া, রুটিন-বিমুখ, কিন্তু আত্মমর্যাদাপূর্ণ যুবকের চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলে।
মূল উপজীব্য (Theme): বিচ্ছেদের পর প্রাপ্ত স্বাধীনতা উদযাপন। প্রেমিক তার প্রাক্তনীর অনুপস্থিতিতে বাজারের ঝামেলা, রুটিনের ‘প্যারা’, চাকরির জন্য ছোটলোকদের কাছে ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি এবং মাঝরাতের নেশা থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে দাবি করে। সে নিজেকে “স্বাধীন বাঙালির চাইতেও বেশি স্বাধীন” বলে ঘোষণা করে।
আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সার্থকতা (Conflict and Irony): কবিতার আসল কারিকুরি লুকিয়ে আছে এর গভীর ব্যঙ্গাত্মকতা এবং শেষাংশে। যে আপাত স্বাধীনতাকে সে জয়ী বলে প্রমাণ করতে চাইছে, তার আড়ালে রয়েছে এক চরম একাকীত্ব, যা কেবল আকাশের তারা গোনার মাধ্যমে বা রাস্তার কুকুরের ‘কিঁউ কিঁউ’ শব্দের মাঝে ধরা পড়ে।
বিশেষত শেষ দু’টি পংক্তি: “জানা হইতো না – আমারে পায় নাই কেউ / শুধু তুমি পাইসিলা”—কবিতাটিকে এক অন্য স্তরে নিয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে যে সমস্ত ‘বাঁচান’ বা মুক্তির আনন্দের নিচে চাপা ছিল এক গভীর সত্য: সে এমন একজনকে হারিয়েছে, যে তাকে একমাত্র চিনতে পেরেছিল। এই স্বীকারোক্তিই ‘তুমি চইলা গিয়া ভালাই করসো’—এই শিরোনামের আড়ালের অপূরণীয় ক্ষতিকে আলোকিত করে।
পর্যালোচনা: এটি কেবল একটি প্রেমের কবিতা নয়; এটি ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য, সামাজিক চাপ এবং গভীর সম্পর্কের মূল্যের মধ্যে সংঘাতের এক অনন্য কাব্যিক ভাষ্য।
প্রিয় কবির অসাধারণ একটা কবিতে।।
তুমি থাকলে ব্যক্তিত্বের মায়রে বাপ
কইয়া ছোট লোকগুলার কাছে
গলা নিচু কইরা চাকরির কথা কয়া
পরাজয়ের গ্লানি লইয়া
নিজেরে ধিক্কার দিতে হইতো
বড়ো বাঁচান বাঁচাইয়া দিলা
এই লাইন গুলু অসাধারণ।।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য সৈকত চৌধুরী ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। চির ঋণী হয়ে রইলাম।