মন্টুর জীবন
মণিভূষণ ভট্টাচার্য
এই মরা শহরেও পাতা গজায়, ফুল ফোটে, প্রজাপতি ওড়ে
সোনালিরোদ ভ’রে ওঠে দু’ একটা মিষ্টি ফল --- খুব উঁচুতে |
দুপুরের আঁস্তাকুড়ে নেড়িকুত্তার সভাপতিত্বে কাকেরা যখন
অধিবেশন চালায় ---- বাবুদের ছেলেরা লম্বা জুল্ পি, দু’খানা
বাঁধানো খাতা, ডান হাতে ঘড়ি, বাঁ হাতে সিগারেট নিয়ে মা লক্ষ্মীর
চোরাই সিন্দুক থেকে বেড়িয়ে মা সরস্বতীর ফর্সা পায়ে তেল মাখায়,
তখনই
মন্টুর হাত থেকে কাচের গ্লাসটি খ’সে যায় | কালিপদ কোমরের
কষিটা আঁট করতে করতে চেয়ার থেকে উঠে এসে বেদম একটা
লাথি ঝাড়ে মন্টুর পাছায় |
চামচেটা প্লেটে নামিয়ে রেখে, অমৃতবাজার থেকে আহ্লাদী আঁখি তুলে,
চশমা খুলে, ঠোঁটের কোণা থেকে জিভের ডগা দিয়ে আলগোছে
অমলেটের কুচিটুকু সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে অধ্যাপক বলেন,----
‘আঃ, কালি অত জোরে মার কেন, তবে যাই বলো ----
পোলট্রির ডিমে কিন্তু তেমন টেস্ট নেই |’
মন্টু ভাঙা ডিমের খোলা, পচা চা-পাতা, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফুসলানি
এবং আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়ের উপর হুমড়ি খেয়ে গোঙায়--- দু’চোখের
জল গাল বেয়ে নেমে আসে |
‘অ্যাই মন্টে হারামজাদা, অ্যাকটিং রাখ উঠে রুটি কাট |’
মন্টু রুটি কাটে | কোয়ার্টার পাউন্ড রুটি ঠিক মাঝখানে কেটে, সেঁকে,
দুধের সর মাখিয়ে ডি. এম. নাথবাবুকে দেয়---- ডি. এম. অর্থাৎ কিনা
দেবেন্দ্রমোহন ---- মালগাড়িনিঃসৃত লোহার রড বেচে লাল---- এখন
পৌরপিতা |
ভোর পাঁচটায় উনুন ধরিয়ে, ঘুগ্ নির হাঁড়িটা চাপিয়ে, মন্টু ঘুমচোখে
বাসন মাজে |
লালগোলা থেকে সদ্য-নামা ঝুড়ি যার বাজারে--- বরফের মধ্যে মাথা গুঁজে
ল্যাজ উঁচিয়ে দিয়ে ---- ইলিশের চলন্ত ছায়া --- এবং সামনের দোকানে
সুতোর ঝোলা আপেলের দিকে চোখ রেখে মন্টু ডিস কাপ ধোয় |
একে একে বাবুরা আসেন ----অমৃতবাজার এবং আনন্দবাজার টেবিল থেকে
টেবিলে ওড়ে | লম্বা ছুরিটা ময়লা ন্যাকড়ায় দু’ বার ঘসে নিয়ে মন্টু চার হাতে
রুটি কাটে, একটাতে সর মাখায়, আড়তদার
কেশববাবুকে দেয়, অন্যটাতে সর মাখিয়ে শ্রমিক নেতা দীনবন্ধুকে |
মাখন মাখায় হেডমাষ্টার বিপ্লববাবুকে, সর মাখিয়ে রিপোর্টার তরুণ মুখুজ্যেকে,
দুধের সর
নন্দীবাবু, মাখন--- তলাপাত্র, মাখন ---- ঘোষবাবু, সব--- সমাজপতি,
সর, মাখন---- সর মাখন সর মাখন |
বাসি পচা ঘুগ্ নি ছাড়া মন্টুর আর কিছুই থাকে না |
কিন্তু পাঁউরুটি কেটে দু’টুকরো করে দু’জনকে দিয়ে দিলেও তার হাতে আর
একটা জিনিস
থাকে--- ভারতবর্ষের অন্ধকার আকাশে হঠাৎ লাফিয়ে-ওঠা বিদ্যুতের মতো
আট ইঞ্চি লম্বা ঝক্ ঝকে একখানা ছুরি |
সোনালিরোদ ভ’রে ওঠে দু’ একটা মিষ্টি ফল --- খুব উঁচুতে |
দুপুরের আঁস্তাকুড়ে নেড়িকুত্তার সভাপতিত্বে কাকেরা যখন
অধিবেশন চালায় ---- বাবুদের ছেলেরা লম্বা জুল্ পি, দু’খানা
বাঁধানো খাতা, ডান হাতে ঘড়ি, বাঁ হাতে সিগারেট নিয়ে মা লক্ষ্মীর
চোরাই সিন্দুক থেকে বেড়িয়ে মা সরস্বতীর ফর্সা পায়ে তেল মাখায়,
তখনই
মন্টুর হাত থেকে কাচের গ্লাসটি খ’সে যায় | কালিপদ কোমরের
কষিটা আঁট করতে করতে চেয়ার থেকে উঠে এসে বেদম একটা
লাথি ঝাড়ে মন্টুর পাছায় |
চামচেটা প্লেটে নামিয়ে রেখে, অমৃতবাজার থেকে আহ্লাদী আঁখি তুলে,
চশমা খুলে, ঠোঁটের কোণা থেকে জিভের ডগা দিয়ে আলগোছে
অমলেটের কুচিটুকু সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে অধ্যাপক বলেন,----
‘আঃ, কালি অত জোরে মার কেন, তবে যাই বলো ----
পোলট্রির ডিমে কিন্তু তেমন টেস্ট নেই |’
মন্টু ভাঙা ডিমের খোলা, পচা চা-পাতা, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফুসলানি
এবং আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়ের উপর হুমড়ি খেয়ে গোঙায়--- দু’চোখের
জল গাল বেয়ে নেমে আসে |
‘অ্যাই মন্টে হারামজাদা, অ্যাকটিং রাখ উঠে রুটি কাট |’
মন্টু রুটি কাটে | কোয়ার্টার পাউন্ড রুটি ঠিক মাঝখানে কেটে, সেঁকে,
দুধের সর মাখিয়ে ডি. এম. নাথবাবুকে দেয়---- ডি. এম. অর্থাৎ কিনা
দেবেন্দ্রমোহন ---- মালগাড়িনিঃসৃত লোহার রড বেচে লাল---- এখন
পৌরপিতা |
ভোর পাঁচটায় উনুন ধরিয়ে, ঘুগ্ নির হাঁড়িটা চাপিয়ে, মন্টু ঘুমচোখে
বাসন মাজে |
লালগোলা থেকে সদ্য-নামা ঝুড়ি যার বাজারে--- বরফের মধ্যে মাথা গুঁজে
ল্যাজ উঁচিয়ে দিয়ে ---- ইলিশের চলন্ত ছায়া --- এবং সামনের দোকানে
সুতোর ঝোলা আপেলের দিকে চোখ রেখে মন্টু ডিস কাপ ধোয় |
একে একে বাবুরা আসেন ----অমৃতবাজার এবং আনন্দবাজার টেবিল থেকে
টেবিলে ওড়ে | লম্বা ছুরিটা ময়লা ন্যাকড়ায় দু’ বার ঘসে নিয়ে মন্টু চার হাতে
রুটি কাটে, একটাতে সর মাখায়, আড়তদার
কেশববাবুকে দেয়, অন্যটাতে সর মাখিয়ে শ্রমিক নেতা দীনবন্ধুকে |
মাখন মাখায় হেডমাষ্টার বিপ্লববাবুকে, সর মাখিয়ে রিপোর্টার তরুণ মুখুজ্যেকে,
দুধের সর
নন্দীবাবু, মাখন--- তলাপাত্র, মাখন ---- ঘোষবাবু, সব--- সমাজপতি,
সর, মাখন---- সর মাখন সর মাখন |
বাসি পচা ঘুগ্ নি ছাড়া মন্টুর আর কিছুই থাকে না |
কিন্তু পাঁউরুটি কেটে দু’টুকরো করে দু’জনকে দিয়ে দিলেও তার হাতে আর
একটা জিনিস
থাকে--- ভারতবর্ষের অন্ধকার আকাশে হঠাৎ লাফিয়ে-ওঠা বিদ্যুতের মতো
আট ইঞ্চি লম্বা ঝক্ ঝকে একখানা ছুরি |
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ১১৯ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন