রাজা মেহেদী

কবিতা - ঘর

লেখক: রাজা মেহেদী

একটা বোলতা সকাল থেকে জানালায় ভন ভন করছে।
ঘরের গোপন কোণে সে তার যে গুপ্ত ঘর নির্মাণ করেছিল
কেউ সেটা গোপনেই ধ্বংস করে দিয়েছে।
তাই সকালের ভন ভন আওয়াজে
আজ আর নেই সুরের সুরধ্বনি,
সারা ঘর তন্ন তন্ন করে সে
নিজের ঘর খুঁজে পেতে চাইছে।

জানালার কার্নিশে একটা মুনিয়া পাখি
হাওয়ার উপর ভর দিয়ে বার বার ঘরের ভিতর উঁকি দিতে চাইছে।
ঘর দেখার জন্য নয়;
সে তার সঙ্গী হারিয়ে সঙ্গহীন হয়ে
পাগলের মত জানালার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত
ডানা কাঁপিয়ে গুনগুন শব্দে দিশেহারা হয়ে
তার খাঁচার সঙ্গীকে ফিরে পেতে চাইছে।

ঘরের ভিতরে ঘুঘুটা চুপটি করে আড়ায় বসে আছে।
আগের মত সে আজ আর গলা ফুলিয়ে সুর বুনছে না,
বাইরে থেকে কাঠের টুকরো এনে
সে আজ আর ঘরের ভিতর ঘর তৈরি করছে না।
একটু আগেই দুরন্ত টাকাচোরা পাখি
তার ঘর ভেঙে কেড়ে নিয়েছে তার সব সুর।
তাই ঘর ছেড়ে একাকী চুপটি করে বসে
নতুন করে ঘর বুনতে চাইছে।

ঘরের সেই দুষ্টু বিড়ালটাও আজ উঠোনে বসে।
খাওয়ার সময় সে আর পাশে এসে বিরক্ত করছে না,
কাঁটা মাছের গন্ধ পেয়েও নিঃশব্দে সে বসে;
তার বিরক্ত না করাটা আজ যেনো বেশি বিরক্তিকর।
এই তো কিছুদিন ধরে সে শুধু ঘর খুঁজেছে,
গোপনে নিজের ঘর পেয়ে মা হওয়ার সুখ পেয়েছে,
একে একে সব সন্তান হারিয়ে সে আজ ঘরছাড়া।
চাঁচা পেটের কষ্ট ভুলিয়ে ঘরের বাইরে বসে
সে নতুন করে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

শুধু ঘর নয়;
ঘরের ভিতরের ঘরও ধ্বংস হয়,
শেষ হয় নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন।
তবুও বেঁচে থাকতে হয়, স্বপ্ন দেখতে হয়,
সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও
আবার ঘর বাঁধতে হয়।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ১৮৯ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন