শামসুর রাহমান

কবিতা - একটি কলমের পথযাত্রা

লেখক: শামসুর রাহমান

ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই আমার কলম
চোখ কচলাতে কচলাতে টেবিল থেকে গলিপথে
নেমে গেলো। কী খেয়াল হলো ওর, সে
হেঁটে হেঁটে একটা পুরোনো দিঘির কিনারে পৌঁছে
পদ্মকে প্রশ্ন করলো, ‘পদ্ম, তুমি কি আমার কেউ হবে!’
পদ্ম মাথা নেড়ে সাফ জবাব দিলো,
‘অসম্ভব, তুমি আমার কেউ নও। আশাহত
কলম ধরলো অন্য পথ।

হাঁটতে হাঁটতে কলম হাজির হলো
রূপসী এক গাছের কাছে। কলমের ব্যাকুল সওয়াল,
‘তুমি কি আমাকে নিবিড় ভালবাসবে ? গাছ
মৃদু হেসে বলে, ‘আমার ভালোবাসা তোমাকে
ছায়ায় রূপান্তরিত করবে। তুমি সইতে পারবে সেই
রূপান্তরের যন্ত্রণা?’ কলম সেখান থেকে বিদায় নেয় নীরবে।

আমার কলম এবার ক্লান্ত শরীরে গিয়ে বসলো
নদীর কিনারে। নদীর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে
সে প্রশ্ন করে, ‘ওগো নদী, তুমি কি
আমার হতে পারবে?’ নদী প্রখর ধারায় বয়ে
যেতে যেতে বলে, ‘আমি কারও জন্যে অপেক্ষা করতে জানি না।
ক্লান্ত কলম সত্তায় নৈরাশ্য নিয়ে শুরু করে পথ চলা।

আখেরে পথের ধুলোকে জিজ্ঞেস করে আমার
পথচারী কলম, ‘ওগো ধুলো তুমি কি আমার
প্রিয়তমা হবে?’ ধুলো জবাব দেয়, ‘হ্যাঁ, হতে
পারি এক শর্তে, যদি আমাকে স্বর্ণচূড় বানাতে পারো। সেই থেকে
আমার পরিশ্রমী কলম দিনরাত ধুলোকে সোনা
বানানোর সাধনা করছে। সফল হচ্ছে কি হচ্ছে না, বোঝা দায়!

১৩২
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন