তোমার যোগ্য গান বিরচিব ব’লে,
বসেছি বিজনে, নব নীপবনে,
পুষ্পিত তৃণদলে |
শরতের সোনা গগনে গগনে ঝলকে ;
ফুকারে পবন, কাশের লহরী ছলকে ;
শ্যাম সন্ধ্যার পল্লবঘন অলকে
চন্দ্রকলার চন্দনটিকা জ্বলে |
মুগ্ধ নয়ান, পেতে আছি কান,
গান বিরচিব ব’লে ||

তবু অন্তরে থামে না বৃষ্টিধারা :
আর্দ্র, ধূসর, বিদেহ নগর,
মত্সর প্রেত-পারা,
প্রকৃতির লীলা আরবি কুহেলিকানাতে,
ইঙ্গিতে যেন চায় অভিযোগ জানাতে ;
তন্ময় ধ্যান ভেঙে যায় তার হানাতে |
প্রচ্ছদে ওই ছায়াপাত করে কারা ?
কী নাম শুধাই —উত্তর নাই ;
ঝরে শুধু বারিধারা ||

মুখে এক বার তাকায়ে নির্নিমেষে,
শূন্যোদ্ভব দেব, না দানব,
আবার শূন্যে মেশে |
বুঝি তারা শুধু কুজ্ ঝটিকার চাতুরী :
তবু তুলনায় ধন্ধ জাগায় মাথুরই ;
প্রতীকপ্রতিম তাদের কাস্তে, হাতুড়ি
ফসল মুড়ায়, মানমন্দির পেষে |
মূর্ত নিষেধ, মূক নির্বেদ
তাকায় নির্নিমেষে ||

কখনও কখনও মনে হয় যেন চিনি—
বিদ্যুতে লেখা হেন রূপরেখা
চীনে পটে বন্দিনী |
স্পেনেও হয়তো অমনই অঙ্গভঙ্গি
চিত্রার্পিত অসংহতির সঙ্গী ;
সেখানেও আজ নিভৃত বিলাস লঙ্ঘি,
পশে উপবনে পরদেশী অনীকিনী |
স্পেন থেকে চীন প্রদোষে বিলীন ;
অথচ তাদের চিনি ||

ভালোবেসেছিল তারাও, আমার মতো,
সীমাহীন মাঠ, আকাশ স্বরাট,
তারারাশি বাতাহত |
গড্ডালিকার সহবাসে উত্যক্ত,
তারা খুঁজেছিল সাযুজ্য সংরক্ত ;
কল্পতরুর নত শাখে সংসক্ত
শুক্ল শশীরে ভেবেছিল করগত |
নগরে কেবল সেবিল গরল
তারাও, আমার মতো ||

কিন্তু শূন্যে ছড়ায়ে ঊর্ণাজাল,
মধুমক্ষীরে উপহাসে ঘিরে
জাগ্রত মহাকাল |
জনপ্রাণীও পারে না তা থেকে পলাতে ;
পোড়ে মৌচাক আধিদৈবিক অলাতে ;
নৈমিত্তিক সব্যসাচীর শলাতে
অপসৃত হয় গুপ্তির জঞ্জাল |
কানামাছি উড়ে ; ত্রিভুবন জুড়ে
কালের ঊর্ণাজাল ||

তাই আমাদের সমাহিত অভিসারে
ঘটে দুর্গতি, মৌন অরতি
সংকেত প্রতিহারে ;
বিপ্রলব্ধ বিশ্বমানের বিষাদে
অঙ্গুলি তুলি, দেখায় অলখ নিষাদে |
বুঝেও বুঝি না নিরাকার আঁখি কী সাধে,
প্ররোচিত করে ত্যাগে, না অঙ্গীকারে |
মাগে প্রতিশোধ, মানায় প্রবোধ,
অনিকেত অভিসারে ||

তার স্বাধিকার আগে ফিরে দিতে হবে ;
নতুবা নগর, তথা প্রান্তর,
ভ’রে রবে বাসী শবে |
অশক্য পিতা ; বলীর কন্ঠলগ্ন
মাতা বসুমতী ব্যভিচারে আজ মগ্ন ;
ক্ষাত্র শোণিতে অবগাহি, জামদগ্ন্য
তবু পাতিবে না স্বর্গরাজ্য ভবে |
স্বীয় শক্তিতে হবে যোগ দিতে
শুদ্ধির তাণ্ডবে ||

২৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন