সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কবিতা - শেক্সপিয়ারের অপ্রকাশিত প্রেমের কবিতা

লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

অনুবাদকের কথা: গ্যারি টেইলর নামে এক তরুণ গবেষক শেকসপিয়ারের একটি অপ্রকাশিত অজ্ঞাতপূর্ব কবিতা আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছেন। তার ফলে বিরাট উত্তেজনা, কৌতূহল ও আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে সারা বিশ্বের শেকসপিয়ার-প্রেমীদের মধ্যে। চার শো বছর পরেও শেকসপিয়ার এখনও প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হন। শেকসপিয়ারের নামে প্রচলিত বিস্ময়কর, মহৎ রচনাগুলি ঠিক কার লেখা এ নিয়ে সংশয় এখনও পুরোপুরি মেটেনি। স্ট্রাটফোর্ড অন আভ-এর যে-পলাতক বালকটি লন্ডনে এক নাট্যশালার আস্তাবলে ঘোড়ার রক্ষক হয় এবং পরবর্তীকালে অভিনেতা পদে উন্নীত হয়, সেই উইলিয়াম শেক্সপিয়ারই যে অসাধারণ, কালজয়ী নাটকগুলি লিখেছেন তা অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। অত্যুৎসাহী গবেষকরা কখনও মালো, কখনও ফ্রান্সিস বেকন বা অন্য কারুকে ওই সব রচনার পিতৃত্ব দিতে চেয়েছেন। শেকসপিয়ারের কবরও খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। তবু অবধারিত কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এর মধ্যে বহু অন্য লেখকের রচনাও শেকসপিয়ারের নামে চালাবার চেষ্টা হয়েছে। গত তিন শো বছরে অন্তত ৮০টি নাটককে শেকসপিয়ারের নাটক বলে দাবি করা হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র একটাকে সম্ভবত সঠিক পর্যায়ে রাখা যায়। অপরপক্ষে, পণ্ডিতদের ধারণা, শেকসপিয়ারের অন্তত দুটি নাটক হারিয়ে গেছে, তার মধ্যে একটির নাম লাভস লেবার ওন। শেকসপিয়ারের সনেটের সংখ্যা ১৫৪, এ ছাড়া তাঁর তিনটি দীর্ঘ কবিতা, ভিনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস, দা রেপ অফ লিউক্রিস এবং দা ফিনিক্স অ্যান্ড দা টারটল একত্রে ছাপা হয়েছিল একটি সংকলনে। এ ছাড়া তিনি আর কি কোনও ছোট কবিতা লেখেননি?

গ্যারি টেইলরের আবিষ্কারটি চমকপ্রদ হলেও এক কথায় অবিশ্বাস করাও যায় না। মাত্র বত্রিশ বছর বয়েস হলেও এই আমেরিকান যুবকটি শেকসপিয়ার-চর্চায় প্রভূত যোগ্যতার অধিকারী। সব মিলিয়ে দেখার জন্যই তিনি বড়লিয়ান গ্রন্থাগারে শেকসপিয়ারের সব লেখার প্রথম লাইনের সূচি মিলিয়ে দেখছিলেন। সেখানেই তিনি একটি লাইন দেখতে পান, শ্যাল আই ডাই? শ্যাল আই ফ্লাই? এ লাইন তিনি আগে পড়েননি। কোথায় এই লাইন আছে খুঁজতে খুঁজতে গুদাম থেকে একটি খাতা পাওয়া গেল। খাতাটি চামড়ায় বাঁধানো। লাল রিবন দিয়ে বাঁধা। খাতাটি সপ্তদশ শতাব্দীর একটি কাব্য সংকলন, কোনো অভিজাত ব্যক্তি তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য কোনো পেশাদার লেখক দিয়ে তাঁর পছন্দ মতন কবিতাগুলি লিখিয়েছিলেন। এর মধ্যে শেকসপিয়ারের দুটি কবিতা আছে, অন্যটি পরিচিত। কাগজ, কালি, হাতের লেখার বয়েস এখন সহজেই পরীক্ষা করা যায়। সে সব পরীক্ষায় খাতাটি পাশ করেছে। তা ছাড়া কম্পিউটারে রচনা পদ্ধতি পরীক্ষারও ব্যবস্থা আছে। প্রত্যেক লেখকেরই বিশেষ বিশেষ ধরনের শব্দ ব্যবহারের ঝোঁক থাকে, তাঁদের সমগ্র রচনাবলী থেকে এই ধরনের নিজস্ব শব্দ ব্যবহার পদ্ধতি নির্ধারণ করা যায়, কম্পিউটার তা অনায়াসে বলে দিতে পারে। গ্যারি টেইলর কম্পিউটারের সমর্থন পেয়েছেন। এবং কবিতাটি তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভারসিটি প্রেসের আশু প্রকাশিতব্য সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করতে চান।

অনেক পণ্ডিত যেমন গ্যারি টেইলরের আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তেমনই সংশয় প্রকাশও করেছেন কেউ কেউ। সংশয়বাদীদের আপত্তির কারণ, কবিতাটি হালকা ধরনের, মহাকবির উপযুক্ত নয়।

৯০ লাইনের এই কবিতাটি হালকা ধরনের ঠিকই। এটি প্রেমের উচ্ছ্বাসময় এক গাথা, যা অনায়াসে সংক্ষিপ্ত হতে পারত। একই শব্দ নিয়ে পান করা শেকসপিয়ারের অন্যতম মুদ্রাদোষ। কবিতাটিতে মিল দেবার ঝোঁক অত্যন্ত বেশি, তাতেই মনে হতে পারে, কোনো বড় কবি তাঁর প্রতিভা-উন্মেষের প্রথম দিকে একটা হালকা বিষয় নিয়ে ছন্দ-মিলের পরীক্ষা করছেন। বাংলায় দ্রুত ভাবানুবাদ।

আমি কি প্রাণ দেব? আমি কি উড়ে যাব?
প্রেমের প্রলোভন এবং প্রতারণা
দুঃখ প্রসবিনী?
আমি কি দূরে রবো? আমি কি কাছে যাব?
আমি কি প্রকাশিব না করি অনুতাপ
আমার আচরণ?
সকল দিক ছেয়ে তাহার রূপলেখা
আমাকে বাঁধে যেন অমর ক্রীতদাস।
যদি সে ভ্রূকুটায় আমি যে মরি শোকে
বিষাদে ড়ুবে যাই, ভুলি যে সব সুখ!

তবুও নিরুপায় আমার ভোগতৃষা
দেখাতে হবে খুলে, প্রেমের যন্ত্রণা
বাড়ে যে দিন দিন!
যদি সে হাসি দেয় নির্বাসনে যায়
আমার সব জ্বালা, যদি সে তোলে ভুরু
বিষাদে দুরু দুরু আমার সব সাধ
ওরে ও সন্দেহ, তুই যা দূরে যা
আমাকে জ্বালাপোড়া করিস নিশিদিন
সমূলে সব কিছু নিয়ে যা উড়ে যা
এখন প্রেমে আমি হয়েছি বলীয়ান!

আমার প্রিয়তমা তাকে কী দোষ দেব
দোষেরও দোষ নেই, এবার প্রমাণিব
তাহার প্রীতিকণা
যতন নিতে হবে, দেখি না সে কী বলে
সুখের আশ্বাস, কিংবা মুখ-ফেরা
অথবা পরিহাস
যা হয় হোক তবু সইব সব কিছু
যাতনা দিলে যদি সে পায় কৌতুক,
সেটুকু মেনে নেব
রূপের পাশে থাকে কিছুটা মরুভূমি
কিছুতে মোছে না তা, ভুলের বোঝা বাড়ে
ভুলের ধুলো মেশে।

যেন সে একদিন স্বপ্নে এসেছিল—
যদিও হায় সব স্বপ্ন চলে যায়।
যেমন মরীচিকা
আমার প্রিয়তমা, আমার কবুতরী
কয়েছি কত কথা, হেঁটেছি তার পাশে
নিরালা প্রান্তরে
দুদিকে কী যে গেল, কিছুতে চোখ নেই
অনেক দূর এসে আকাশ যেথা মেশে বসেছি
সেইখানে
নিবিড় পাশাপাশি ওষ্ঠাধরে মিল
বাহুর বন্ধনে বেঁধেছি সেইখানে হৃদয় সম্পদ।

তখন সুপবন পেয়েছে কত খেলা
লোভীর মতো এসে উড়িয়ে দেয় তার
সোনালি কেশরাশি
এমন খেলা যেই দু’চোখ ভরে দেখি
অমনি চোখ যায়, রূপের ঝাপটায়
অবশ অনুভূতি
মায়ায় বাঁধা যেন দৃষ্টি থমকানো
এমন রং কোনো মানবী তনু ধরে
রূপের এই জোর হল রূপান্তর
আমার ভালোবাসা ঊর্ধ্বে উঠে যায়।
অলকদামে ঘেরা ললাটখানি তার
কোমল সমতল যেন বা মখমল
শুভ্র সুন্দর
নিপুণ ভুরুরেখা আকাশে যেন আঁকা
সেখানে জ্বলে দুটি তারকা ঝিকিমিকি
প্রেমের জয়ে জয়ী
কপোল দুটি ছেয়ে সূক্ষ্ম দেখা যায়
দুধে ও আলতায় হয়েছে মেশামেশি রূপের নব বিভা
যতই চেয়ে দেখি, ততই বাড়ে নেশা
যতই নেশা তত তৃষ্ণা জেগে ওঠে।

ওষ্ঠ দুটি রাঙা যেন বা চাঁদ ভাঙা
এমন মধুরিমা মিষ্টতর হয়
পুরুষ ঠোঁটে মিশে
সেখানে বিনিময় সুখের অধীরতা
এবং আরও চাওয়া
চিবুক যায় জিনি একটি লহমায়
বিশ্ব নিখুঁতের সকল রং-রেখা
মরাল গ্রীবা তার মসৃণতা যেন
মূর্তি ধরে আছে এমন সৌষ্ঠব।

বক্ষ উপহার তুলনা নেই তার
সুগোল চূড়া দুটি যদিও কাছাকাছি
তবুও দূর দূর
কভু কি ছোঁয়া যায় এমন সুন্দর
এমন দুর্লভ এ দুটি চুম্বক
পরশে বিস্ময়
প্রকৃতি যেন তার উজাড় করে দেওয়া
সকল গুণ দিয়ে করেছে নির্মাণ;
কোথাও নেই এক বিন্দু মলিনতা
সে যেন পৃথিবীর রূপের মহারানি।

স্বপ্নে যে প্রহর ছিলাম সমাহিত
ছিল না কোনো ক্ষোভ, ছিলাম ভাসমান
সাগরে সুখস্রোতে
চক্ষু মেলে দেখি কোথাও কিছু নেই
কোথায় ধ্রুবতারা, কোথায় সুখ এই
আঁধার নিরাশায়।
বুঝেছি সুতরাং এবারে জেগে উঠে
আমাকে যেতে হবে আমাকে পেতে হবে
হৃদয় যাকে চায়
কিছুতে দেরি নয়, নিমেষও বড় বেশি
সে যদি চলে যায় রইবে বুক ভরে অনল অনুতাপ।

1
Shall I die? Shall I fly
Lovers baits and deceits,
sorry breeding?
Shall I fend? Shall I send?
Shall I shew, and not rue
my proceeding?
In all duty her beauty
Binds me her servant for ever.
If she scorn, I mourn, I
retire to despair, joying never.

2
Yet I must vent my lust
And explain inward pain
by my love breeding.
If she smiles, she exiles
All my moan; if she frown,
all my hopes deceiving
Suspicious doubt, О keep out,
For thou art my tormentor,
Fly away, pack away,
I will love, for hope bids me venter.

3
Twere abuse to accuse
My fair love, ere I prove
her affection.
Therefore try! Her reply
gives thee joy–or annoy,
or affliction.
Yet howe’er, I will bear
Her pleasure with patience, for beauty
Sure will not seem to blot
Her deserts, wronging him
doth her duty.

4
In a dream it did seem
But alas, dreams do pass
as do shadows—
I did walk, I did talk
With my love, with my dove,
through fair meadows.
Still we passed till at last
We sat to repose us for our pleasure.
Being set, lips met,
Arms twined, and did bind
my heart’s treasure.

5
Gentle wing sport did find
Wantonly to make fly
her gold tresses,
As they shook I did look,
But her fair did impair
all my senses.
As amazed, I gazed
On more than a mortal complexion
Them that I love can prove
Such force in beautys inflection.

6
Next her hair, forehead fair,
Smooth and high, next doth lie
without wrinkle,
Her fair brows, under those,
Star-like eyes win loves prize
when they tinkle.
In her cheeks who seeks
Shall find there displayed beauty’s
banner,
Oh admiring desiring,
Breeds as I look still upon her.

7
Thin lips red, fancys fed
With all sweets when he meets,
and is granted
There to trade, and is made
Happy, sure, to endure
still undaunted,
Pretty chin doth win
Of all the world commendations,
Fairest neck, no speak;
All her parts merit high admirations

8
A pretty bare, past compare,
Parts those plots which besots,
Still asunder
It is meet naught but sweet
Should come near that so rare
Its a wonder,
No Mishap, no scape
Inferior to natures perfection,
No blot, no spot
Shes beautys queen in election

9
Whilst I dream, I exempt
From all care, seemed to share
pleasures in plenty,
But awake, care take—
For I find to my mind
pleasures scanty
Therefore I will try
To compass my heart’s chief contenting
To delay, some say,
In such a case causeth repenting.
—–William Shakespeare

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৭০ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন