সাধারণতঃ কোনো নোংরা লোক চোখে পড়লেই আমরা নাক সিঁট্কিয়ে বলি— লোকটা একেবারে “বুনো।” কিন্তু আসল বুনো বল্তে আমরা যাদের বুঝি তাদের মধ্যে অনেকেই যে একেবারে নোংরা ও অসভ্য নয়, তা সাঁওতালদের দেখলেই বেশ বোঝা যায়! খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এরা। বাড়ীঘরগুলি ঝক্ঝ ক্, তক্ তক্, করছে। এক একটি গ্রাম যেন এক একটি ছবি! নীল পাহাড়ের নীচে—নিবিড় জঙ্গলের মাঝে, প্রকৃতিমায়ের কোলে এরা মনের শান্তিতে দিনের পর দিন কাটায়। এদের আচার-ব্যবহারের কথা এখানে বলব না, —আজ এদের কয়েকটি ছড়া আর ছন্দ তোমাদের শোনাব। ছড়াগুলি অবশ্য আমি একেবারে বাংলা করে নিয়েছি— কারণ এদের ভাষা বোঝার সাধ্যি হয়ত তোমাদের নেই। তবে এই বাংলা ছড়া থেকেই তোমরা বেশ বুঝতে পার্বে, আমাদের মতোই এদের কল্পনা কত সুন্দর, কত ভাব মাখানো!
চাঁদ উঠেছে,—বুড়ি দিদিমা তার আদরের নাতিটিকে হাঁটুতে বসিয়ে দোল খাওয়াচ্ছে আর সুর করে বল্ছে—

আমার নাতি—
রাতের বাতি—
চাঁদের সাথী টু—
খোক্ন দাদা—
ছাইয়ের গাদা
আর ছোঁবনা থু।
মা ছেলেকে আদর করে বল্ছে—
খোকা মোদের দারোয়ান,
গরুর গাড়ীর গাড়োয়ান,
না—না, খোকা পালোয়ান্
পীতম্ মাঝির ব্যাটা—
খোকার ভয়ে কাবু হবে যত বাঁদর ঠ্যাঁটা!
ছেলে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে মা গান করে—
ঘুমো রে ঘুমো রে—খো-কা
আস্বে ভূতেরা—বো-কা।
আস্বে পরীরা—নে-মে!
মরবি ভয়েতে—ঘে-মে!
ডালপালা কাঁপিয়ে, শুক্নো পাতা ঝরিয়ে, ঝড় হু-হু শব্দে তাণ্ডব নৃত্য কর্তে কর্তে ছুটে আসে, তখন ওরা গান করে—
ঝড় আসে শালের বনে,
ঝড় আসে বাদল সনে,
ঝড় আসে পলে পলে—
ঘর আসে মাঝির দলে।—
মাঝি মানে নৌকোর মাঝি নয়। এদের পুরুষদের মাঝি বলে।
ওদের মহুয়া কুড়াবার গান—
পাগ্লা ঝড়ে মহুয়া পড়ে
আয় কুড়াতে যাই—
মাঝি গেছে করতে শীকার
ভাব্না কেন ছাই!
বৃষ্টির দিনের ছড়া——
আয় আয় মেঘ-দেবতা
মহুয়া দেব খেতে,
আয় আয় বৃষ্টি জোরে,
আয়-রে দিনে রেতে।
শীত-কালে সন্ধ্যা বেলা—আগুন জ্বেলে চারপাশে এসে বাড়ীর ছেলেমেয়ে সব জড় হয়— গল্প করে আর মধ্যে মধ্যে গান ধরে—
আমার নাতি—
রাতের বাতি—
চাঁদের সাথী টু—
খোক্ন দাদা—
ছাইয়ের গাদা
আর ছোঁবনা থু।
মা ছেলেকে আদর করে বল্ছে—
খোকা মোদের দারোয়ান,
গরুর গাড়ীর গাড়োয়ান,
না—না, খোকা পালোয়ান্
পীতম্ মাঝির ব্যাটা—
খোকার ভয়ে কাবু হবে যত বাঁদর ঠ্যাঁটা!
ছেলে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে মা গান করে—
ঘুমো রে ঘুমো রে—খো-কা
আস্বে ভূতেরা—বো-কা।
আস্বে পরীরা—নে-মে!
মরবি ভয়েতে—ঘে-মে!
ডালপালা কাঁপিয়ে, শুক্নো পাতা ঝরিয়ে, ঝড় হু-হু শব্দে তাণ্ডব নৃত্য কর্তে কর্তে ছুটে আসে, তখন ওরা গান করে—
ঝড় আসে শালের বনে,
ঝড় আসে বাদল সনে,
ঝড় আসে পলে পলে—
ঘর আসে মাঝির দলে।—
মাঝি মানে নৌকোর মাঝি নয়। এদের পুরুষদের মাঝি বলে।
ওদের মহুয়া কুড়াবার গান—
পাগ্লা ঝড়ে মহুয়া পড়ে
আয় কুড়াতে যাই—
মাঝি গেছে করতে শীকার
ভাব্না কেন ছাই!
বৃষ্টির দিনের ছড়া——
আয় আয় মেঘ-দেবতা
মহুয়া দেব খেতে,
আয় আয় বৃষ্টি জোরে,
আয়-রে দিনে রেতে।
শীত-কালে সন্ধ্যা বেলা—আগুন জ্বেলে চারপাশে এসে বাড়ীর ছেলেমেয়ে সব জড় হয়— গল্প করে আর মধ্যে মধ্যে গান ধরে—
শীত শীত—বইছে হাওয়া কন্কনিয়ে রে,
কর্তে গরম জ্বল্ছে আগুন গন্গনিয়ে রে!
হয়তো আকাশ-পথে এক ঝাঁক বক উড়ে গেল। একদল ছেলেমেয়ে হাত্তালি দিয়ে বলে উঠ্লো—
বগামামা বগামামা উড়ে যাবার দাম দে!
বেশী কিছু চাই না মামা চীনিয়া-বাদাম দে!
চরকা ঘুরুতে ঘুরুতে পাড়ার মেয়েরা ছড়া বলছে―
চর্কা কাটি সবাই মিলে
সুতো বেরোয় চটক্দার,
সবার চেয়ে ভালো সুতো
শাশুড়ী আর মাঐমা’র।
ঠান্দি’ বসে’ সঙ্গোপনে
কাট্ছে সুতো আপন মনে,
অবাক্ কাণ্ড, তার সে সুতো
সবার চেয়ে চমৎকার!
আমাদের দেশের মতো ওদের দেশেও অনেক এমন ছড়া আছে—যার না আছে মাথা না আছে মুণ্ডু; কিন্তু তাদের সুন্দর ছন্দের রেশে এমন একটা মাদকতা আছে,যাতে গানগুলি শুন্লে আর ভোলা কঠিন হয়ে ওঠে—মানে তার থাক্ বা না থাক,!—যেমন ওদের ছাতা-উৎসবের গান—
হলুদ্-পাতায় ছেয়ে গেছে সকল জলা-ভূমি,
উপর তলায় থাকি আমি, নীচের তলায় তুমি!
তোমার ঘরে উচ্ছে ফলে, ফুল ফুটেছে তারি;
পাহাড়-তলীর বিজন পথে চলবে আমার গাড়ী।
কিম্বা—
ধেনো রং ধানী,
শ্যাওলা ঢাকা পানি,
কেয়া পাতার সং—
দেখ্বি যদি আয়রে তোরা
কেয়া মজার ঢং।
এগুলি হচ্ছে ইংরাজীতে যাকে বলে Nonsense Rhyme—
আমরা যেমন চড়ুইভাতি করি, ওরাও তেম্নি আমোদ করে’ করে ফুসেলা! নিজেরা জঙ্গলে রান্নাবান্না করে খায়। ওদের চড়ুই ভাতির ছড়া হচ্ছে—
আটার-রুটী নাই পেলাম
ভুট্টা-দানা না-ই খেলাম—
চাইনা মোরা পিঠা রে—
চড়ুই ভাতি মিঠা রে!—
একটা খেলার ছড়া।—এ খেলাটা অনেকটা আমাদের আগ্ডুম বাগ্ডুম্ খেলার মতো— ঘরে বসে’ খেলে।
—“দাদা, মহিষ কিনবি ভাই?”—
“মোষ দিয়ে কি করব ছাই?”
—“করব মোরা মোষের গাড়ী
যাবো চলে শ্বশুরবাড়ী?”—
একদিন আমি সাঁওতালদের গ্রামে বেড়াতে গেছিলাম। আমাকে দেখে একদল ছেলেমেয়ে এসে ঘিরে কাঠি বাজিয়ে গান্ কর্তে লাগ্লো—
দে বাবু পয়সা কড়ি—
সবাই মিলে ক্ষুধায় মরি।
দে বাবু পয়সা-কড়ি—
সবাই মিলে পায়ে ধরি। —ইত্যাদি।
এমন অবস্থায় পয়সা না দিয়ে কে থাকতে পারে বলো!

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন