কবি ইমদাদ শাহ্

কবিতা - অনিবার্য জুলাই

কবি ইমদাদ শাহ্

আমি প্রতিদিন অস্তিত্বহীন
অস্তিত্বের খোঁজে ছুটে চলি অবিরত
তারপর মুখোমুখি হই
একটা অরাজক দেশের ফ্রন্ট লাইনে
এ নারঙ্গির বাতাসে শার্সিত মুক্তির পথ অবরুদ্ধ
শুধু আহুত কোন গর্জন শুনি
বেদনাভরা অর্তের কান্না শুনি
এখানে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ছিল
তাদের সংগ্রামের ইতিহাস ছিল
তাদের রক্ত ঘাম ও গৌরবের মিথ ছিল
নষ্টদের দখলদারিত্ব তাদের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করে
নিক্ষেপ করা হলো অন্ধকার কোন কোটরে
আমি সেই বিপ্লবী যার কোন বিনাশ নাই
আমি এখনো সেই বিপ্লবী সুবাস পাই
তবু কাতরাই যেন বহুদিন
এখানে অনার্যের পদধ্বনিও শুনতে পাই
কোন বিপ্লবী হাওয়া বয়ে চলে
আমার ফ্রন্ট লাইনে
হয়ত আমি আর ফিরব না ঘরে
তবু অনস্তিত্বের কোন শঙ্কা নেই আমার
আমি বিপ্লবী পথভ্রষ্ট নই
সহসা কোন মুক্তি নেই কারো
শান্তি প্রিয় সেই দিনগুলো আর
৫৬ হাজার বর্গমাইলের শান্তিপ্রিয় দেশটা
কেমন যেন অশান্ত
যেন লাল রক্তের নিশানা বুনেছে ভেতরে ভেতরে
কদমাক্ত পাপ পঙ্কিলতায় পুষ্পমাল্যের আড়ালে
চারিদিকে শোকের মাতম ছড়ানো
বিষন্ন নীরবতা মাখা রক্তাক্ত তৃণভূমি
এ আমার অভাগা দেশ
নিরীহ মানুষগুলোর যন্ত্রদায়ক মিত্যুর পরোয়ানা যেন
আজ এক মিত্যুর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে আমি
নীরব বিপ্লবী কিছু মুখ আমায় ঘিরে ধরে
অন্ধকার বিস্তীর্ণ বধ্যভূমি ঘিরে
আমি দীর্ঘদিন লোকদের
ভালো করে হাসতে বা কথা বলতে দেখিনি
সেই মমতামাখা হাসিমুখগুলো
সেই কোলাহলের সময়টুকু
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তর্কযুদ্ধ
জড়ানো লোকগুলো কোথাও যেন
হারিয়ে যেতে বসেছিল
কোথায় যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল
অনন্ত প্রবাহমান নদীর ধারা যেমন লোকালয়ে
এসে থমকে দাঁড়ায় কোন কালের পরিক্রমায়
যেন রক্ত গঙ্গায় কাতর
মধুময় স্মৃতির মত কাতরায় বহুবার
যন্ত্রণাদগ্ধ মানুষের বিপরীতে
কোথায়ও আনন্দ উল্লাস ত্রাসের রাজত্ব
নিখোঁজ মানুষের সন্ধান মেলেনি
ছিন্ন কাপড়ের রক্তের গাঢ়ো দাগ
পত্রিকার পাতায় ভেসে উঠা অস্পষ্ট ছবি
কী বিভৎস ভয়াবহ চাহনি
চারিদিকে ছড়াছড়ি সংবাদের বায়ানট
রক্তাক্ত ধর্ষিত বোনের বিকৃত মুখাবয়ব
কাতরাই যেন আমি বহুদিন
আমি সেই সব লোকদের থেকে
উঠে এসেছি
আমার পিঠে এখন এক বিপ্লবের বোঝা অনিবার্য এ জুলাই তার পরিক্রমা মাত্র
আমি বিপ্লবীদের মাঝেই ছিলাম
অন্ধকার কোন ঘরে বা তালাবদ্ধ অবচেতন হৃদয়ে
বা অস্তিত্বের মাঝে
তারপর মুখোমুখি হই
বিপ্লবীদের সাথে
যেন অনিবার্য কোন বিপ্লব আমার সম্মুখে এই দেশ এ দেশের সহজ সরল মানুষ
এ জনপদ সূদূর অতীত থেকে
অনেক বিপ্লবী প্রজ্বলিত মুখাবয়ব
ইতিহাসের পাতায় পাতায়
অনেক লাঞ্ছিত মুখ অত্যাচার চাবুকের আঘাত
একদিন তারা তাদের বিপ্লবী অস্তিত্বের
কথা স্বীকার করবে
অস্বীকৃত কোন বাস্তববতায়
ধূলিসাৎ করে দিবে পাষন্ড নরাধমদের
এরা নিরীহ মানুষেরা যেদিন জেগে উঠবে
তখন বিপ্লবী এক ঘূর্ণিঝড়ে কাঁপবে গোটা স্বৈর রেজিম
আমি প্রতিদিন অস্তিত্বহীন
এখানে ছিল যারা প্রতিবাদী ছাত্র জনতা
তারি পরিক্রমা মাত্র
এ আমার অভাগা জাতি
বিপ্লবে মুখিয়ে ছিল দীর্ঘদিন
এই যে দেশ এখানে দু মুঠো আহারের জন্য
মানুষকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় যেখানে
সেখানে এত সংকট নির্যাতন অত্যাচার
একটা দেশের মেরুদন্ড যেখানে রুজ্জু নয়
দলগুলোর মধ্যে নেই কোন
ভ্রাতৃত্বের বন্ধন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যেন হেঁটে চলেছে আমার প্রিয় মাতৃভূমি বয়সের ভারে নূইয়ে পড়ছে গোটা মানচিত্র
যেকোনো সময় খুবলে খাবে বহিঃশত্রু
বেফাঁস বুলির মত বাজিকরদের দুরন্তপনা
থমকে দাঁড়াবে গোটা সময় যেন অন্ধকার কালো ছায়া ঘেরা দেশটাতে সূর্য উঠার মত কোন অমৃত সম্ভাবনা নেই সৌহার্দ্যের বালাই নেই যেখানে আত্মপ্রীতি অহমিকা
যেখানে ক্ষমতার দাপটই চূড়ান্ত মেঘের গর্জন থেকে যেন বৃষ্টি নয়
অদৃশ্য কোন কান্নার শোক নেমে আসে এখানে একটা বিপ্লব অবধারিত
এই মেঘ এক দিন ঘূর্ণিঝড় হয়ে
দমকা বাতাসে প্রতিরোধের সমস্ত দেয়াল ভেঙে
উড়িয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর এই শহর নগর সভ্যতায়
মুখোশের আড়ালে কিছু অসভ্য মানুষ রয়েছে
তাদের অস্তিত্বে অতীতের কোন নির্যাস
আমি প্রতিদিন অস্তিত্বহীন
অস্তিত্বের মাঝে খুঁজে বেড়াই কোন বিপ্লবের আভাস
এই বিপ্লবেই যেন আমার অস্তিত্ব
আমার পুনর্জন্ম হয় কোটি বিপ্লবী প্রানে
সেই নরাধমদের এর প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে আমি অনিবার্য এক জুলাইয়ের মুখোমুখি
এই দুখী দেশের নীরব করুন কান্নার পরিহাসে
এই নিপীড়িতের বিষন্ন মানুষগুলোর মুখাবয়ব আমায় ঘুমাতে দেয় না
তাদের আর্তনাদ আমায় জাগিয়ে রাখে আমি বিপ্লবী মানবতার ফেরিওয়ালা
যার যার অধিকার ফিরিয়ে দেই
কোন কান্নামাখা কন্ঠ আমায় ডেকে বলে আমি যেন সবার অধিকার ফিরেয়ে দেই
এই শোষন ও ত্রাসের রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে
আমি এক বিপ্লবী কবি
যার কোন বিনাশ নাই
আহত গোটা একটা দেশ
প্রতিশোধ নিতে মুখিয়ে থাকা প্রতিটি নিরো ও নারী
ঐকান্তিকতা নিয়ে রুখে দাঁড়ায়

২৫৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন