ঘরে ঢোকার পর থেকেই গিরগির শুরু করে দিলো তৃপ্তি। চুপচাপ ফোন নিয়ে গান্ধীজির চতুর্থ বানরের মতো বিছানা শুয়ে পড়লাম ।চতুর্থ বানরের কথা জানান না বুঝি। গান্ধীর গল্প তিনটি বানর ছিলো একটা বোবা একটা কালা আরেকটি অন্ধ। আজ কাল মানুষ গুলো চতুর্থ বানর হয়ে গেছে যে মোবাইল হাতে পেলে এক সাথে বোবা কালা অন্ধ হয়ে যায়।
ও তাই আমার হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে।
বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার কলা ধরে তুলে বললো ” আবুধাবী থেকে আমার জন্য, যে ওসেন ব্লু কালারের শাড়িটা কিনলেন সেটা কোথায়, আর রেড সালোয়ার টা কোথায়??”
আমি আমতা করে বললাম
” তাহলে মা বোধহয় রেখে দিয়েছে ওটা””
তৃপ্তি বললো “জানি তো জানি তো, আপনার মা বলেছে, তৃপ্তি তো শাড়ি পরে না, এটা বাবুর বৌকে দে , ওকে এটা খুব মানাবে , ওরা তোকে কতো ভালোবাসে ওদের কিছু দিলে কতো খুশি হয়। তৃপ্তি মর্ডান মেয়ে ওকে এই চুরিদার মানাবে না এটা বরং টুবাইএর শালিকে দে, ও কলেজ পড়ে যাবে কতো খুশি হবে, অমনি মামাস বয় বলেছেন ঠিক আছে রেখে দাও আমি ওকে কিনে দেবো এমন একটা। তাই তো..’
আমি বললাম “”হুঁ কি করবো যানতো আমি গুছাতে পারি না এলেমেলো ছিল, তোমার জিনিস গুলো ওতে ছিলো।”
তৃপ্তি রেগে বেগুনের মতো হয়ে গিয়ে বলল ” বলেছিলাম তো , আপনাকে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা আমার ফ্ল্যাটে আসবেন তারপর আপনি আপনার বাড়ি যাবেন। আগের বার আপনি আমার বাড়ি এসেছিলেন ওদের একটা জিনিষে আমি হাত দিয়েছি বলুন। আপনি শয়তান, মাকে, ভাইপো না দেখে থাকতে পারে না।”
আমি বললাম ” অনেকটা রাত হয়ে গেছে ছিলো ”
ও বলল” তো কি হয়েছে? আপনার বাড়ির আগে তো আমার বাড়ি পরে।”
আমি বললাম” অতো রাত তোমার কাছে আসার সামাজিক স্বীকৃতি কি তুমি পেতে দিয়েছো?? “”
তৃপ্তি চুপ করে গেলো। একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ” ঐ একটা কথা আছে আপনার কাছে। ঠিক আছে আপনি শুয়ে থাকুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ”
আমি বললাম “তোমার ফোন টা দিয়ে যাও , আমার ফোন চার্জ নেই,”
ও বললো ” আমি পারবো না, আমি তো আপনার বিয়ে করা বউ যখন না, অত হাতে ধরে দিতে পারবো না। বিছানায় আছে খুঁজে নিয়ে নেন”..
ও চলে যেতে ওর ফোন নিয়ে ইউটিউব খুলে ওর ভিডিও গুলোতে আগে আমার আইডি থেকে লাইক মারতে শুরু করলাম।আর কনটেন গুলো দেখে নিলাম, নয়তো আবার এ নিয়ে কুরুক্ষেত্র বাধাবে বলবে আমি তো পুরোনো হয়ে গেছি তাই আমার গুরুত্ব কমে গেছে।ব্যা ব্যা ব্যা””
যান ভালো মেয়ে সবাই ভাবে ও আমাকে মই বানিয়ে সফল হয়েছে। কিন্তু ও অনেক পরিশ্রম করেছে। আমি ওকে একটু সাপোর্ট করেছি।
আপনি বলবেন, ও যদি সুযোগ সন্ধানী না হয় তাহলে ও আপনাকে বিয়ে করলো না কেন??
ও কিছু এ্যাচিপমেন্টে করতে চেয়েছিল , কারো সাহায্য ছাড়া। কিন্তু বিয়ে করলে তো সবাই বলতে সফল পুরুষের টাকায় সফল হয়েছে। যদিও এখনো বলেন বিছানায় না শুলে। কি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পাওয়া যায়। মেয়েরা সফল হলেই এরকম নোংরা কথা গুলো শুনতে হয়।
আপনি বলবেন জানি জানি তুমি তো একা একা ওর মধু খেয়েছো তাই ওর গুনো গান করবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, ও যদি সুযোগ নিতে শুতো তাহলে অনেক বড়লোক সাথী পেয়েছিলো, অনেক আগেই সফল হয়ে যেতো।
তাছাড়া আমার ওর সম্পর্কে শারীরিক ছিলো না প্রথম দিকে।
সত্যি বলতে একটু ভেবে দেখুন যদি আমি ওর শরীরটাই ভালো বাসতাম, ওর ভিডিও গুলো প্রোযোজান করতাম না। সেই টাকায় ব্যেশা বাড়ি গিয়ে ফুর্তি করতাম।
আজকাল কোন মেয়েরা পুরুষের নির্ভরশীল নয়। অতীত থেকে একটা কথা চালু আছে সহধর্মিণী। অতীত থেকে বৌ কোন নির্ভরশীল নয়।
হঠাৎ ওর ফোন হোয়াট অ্যাপস একটা মেসেজ ঢুকলো। ” কিরে ক দান লুড খেল্লি , একটা ছক্কা পুটু ফেলে ক্লান্ত হয়ে গেছে বুড়ো।”
ওর বার্তার বুড়োটা যে সেটা বুঝতে আমার বাকি থাকলো না।ওর মেসেজের রিপ্লাই দিতে আমার রুচিতে বাঁধলো।
কিন্তু ও রিপ্লাই না পেয়েও ক্ষান্ত হলো না। ওর বার্তা সারাংশ করলে দাঁড়ায় , বৌদির সাথে ঝগড়া করে চঞ্চলদা এখন ওর ফ্ল্যাটে আছে। দুই এক পেগ মদ খেয়ে, মাঝে মাঝে দুই এক দান লুডু খেলেই মোষের মতো ঘুমাচ্ছে।ওর এই জীবন আর ভালো লাগছে না। ও একটা লম্বা ইনিংস খেলতে পাও পুরুষ খুঁজছে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি মালানি যে ফ্লাট টা নিজের বলে দাবি করছে সেটা চঞ্চল দা ওকে দিয়েছে। বৌদি আমাকে নিজের ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। তাই এই সম্পর্কটা আমি মেনে নিতে না পারায়। আজ চঞ্চল দার সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখি না।
কিন্তু চঞ্চল দার সাথে মালানির মতো স্টাগেলিং ইউটিউবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো তৃপ্তিই। তাই আমি অপেক্ষ করি তৃপ্তি সাথে চঞ্চলদার পরিচয় করিয়ে দেওয়াটাই আমার ভুল হয়েছিল। কিন্তু আমি তৃপ্তি ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম। ওর ইউটিউব চ্যানেল দাঁড় করানোর জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি ছিলাম।
হুঁ এই জেনরাশন ছেলে মেয়েরা ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখে। অথচ কোন পরিকল্পনা পরিকাঠামো থাকে না। আমার এক জুনিয়র ভাই সান্টু আমার সাথে তৃপ্তির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। তখন আমি জানতাম না য তৃপ্তি আসলে সান্টুর প্রেমিকা।সান্টু বাবা আসলে আমার বন্ধু ছিলেন। বাবা জাহাজ চাকুরী করে অগাধ টাকা পয়সা করেছিলো। সেই পয়সা দিয়ে ও দামি ক্যামেরা কিনেছিলো। মালানি , তৃপ্তিদের মতো স্টাগেলিং ইউটিউবরা ওর সাথে একটু ঘনিষ্ঠতা রাখতে পছন্দ করে কারণ এতে কম খরচে ওরা ওকে দিয়ে ওদের ভিডিও গুলো shoot এবং editing করিয়ে নিতে পারে।
আমি ছোট বেলা থেকেই অভিনেতা হবার স্বপ্ন দেখতাম। কিছুদিন থিয়েটার দলে যোগ দিয়ে, পাড়া নাটক দলে যোগ দিয়ে , লোক জনের হাসির খোরাক হয়ে ক্ষান্ত হয়েছিলাম। সেন্টু সেটা জানতো হঠাৎ আমাকে ওর কিছু ভিডিও এ্যালবাম কাজ করার প্রস্তাব দিলো। ঐ ভিডিও এ্যালবাম কাজ করতে গিয়ে তৃপ্তির সাথে আমার আলাপ।
মধ্যবয়স্ক বেচেলর পুরুষ, বিয়ে জন্য অনেক পাত্রী খুঁজে বাড়ির লোকজন বিয়ে দিতে ব্যার্থ হচ্ছে বারবার।তৃপ্তির দক্ষ অভিনেত্রী ছিলো। তখন ও আমার জীবনে জল না চাইতেই মেঘের মতো।প্রেমে পড়ার অভিনয়টা দারুন করলো ও।এ চিলতে ইশারা,একটু প্রশয় পেয়ে আমি কিন্তু ওকে সৎ ভাবে ভালো বাসতে শুরু করলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই ও আমার কেন সবার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলো। এমন কি ওর ইউটিউব চ্যানেলটাও ভিডিও আপলোড বন্ধ। ও আমাকে বারবার বলতো ওর একটা আইফোন থাকলে ও কিছু নাচের রিলস বানিয়ে ওর ইউটিউব চ্যানেল দাঁড় করিয়ে নিতে পারবে। তাই ওর জন্মদিন ওর জন্য একটা আইফোন কিনে হাজির হলাম ওর ভাড়া করা ফ্লাটে। ফ্লাটে গিয়ে শুনলাম ও ভাড়া উঠে গেছে । শহর ছেড়ে চলে গেছে গ্রামের বাড়িতে।
আমি রাতে বেলাতেই ওর গ্রামে বাড়ি উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলাম। ওখানে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, আসলে সান্টু ওর প্রাক্তন প্রেমিক। সান্টুর পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে। কিন্তু আজ ও সান্টুর দ্বারা প্রতিরিত হয়েছে।ও আর শহরে ফিরবে না। গ্রামের বাড়িতে ছেলেপুলে পড়িয়ে, মেয়েদের নাচ শিখিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেবে।
ওর জীবনে আমি আর অনুপ্রবেশ করলাম। আমার চেনা জানা বন্ধুবান্ধব যারা টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত , তাদের সাহায্যেই আজ ও চলচ্চিত্র ও বিনোদন জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তবে অনেকটা কটা বসন্ত পার হয়ে আমাদের, কিন্তু বিয়েটা করে হয়নি। তবে ওর আমার বয়সের অনেক ফারাক তাই ও এখন অনেকটা যৌবনদীপ্ত। ও চাইলে এখনো নতুন কাউকে খুঁজে নিতে পারে।
সায়ার নিয়ে আসার পর ও আরো বেশি আবেদনময়ী হয়ে ওঠেছে। নানা আঙ্গিভঙি করে আমাকে উত্তেজিত করলেও আমি পাত্তা দিলাম না ওকে। শেষ মেষ ও কিছুটা জোর করে ওকে আদর করতে বাধ্য করলো। আসলে রূপ যৌবন কাছে হয়তো পরাজিত হলো আমার সব অপমান বোধ।
যৌনতা সম্পর্কে শেষের পর, মেয়েরা একটু আবেগ ময়ী হয়ে পড়ে। ও জিজ্ঞেস করলো আমায়” কি হয়েছে আপনার আজ হঠাৎ মুড অফ ছিলো কেন??”
ওর কথা শুনে আমি রাগে তুবড়ি মতো জ্বলে উঠলাম। ফোনটা খুলে মালতির মেসেজ দেখালাম। তার আমার মনের কথার অগ্নি বৃষ্টিতে ওকে পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করলাম। বললাম ” তোমারা এই জেনারেশন মেয়েরা সফল পুরুষের সাথে জীবন কাটানোর সেফ মনে করেন। কিন্তু সফলতা অর্জন তো সহজ কথা নয়। আমরা মধ্যবর্তী ঘরের ছেলে পুলে। পড়াশোনা করে শেষ করে চাকরি পেয়ে গাড়ি বাড়ি করতে গিয়ে একটা দুটো চুল পাকিয়ে ফেলি। তোমরা কিন্তু সেফ জোনে থাকতেই আমাদের বিয়ে করতে চান অথচ মনে এতো তিক্ততা আমাদের জন্য। ও বলছে কচি মেয়েদের সাথে প্রেম করার সখ কেন এই বুড়ো গুলোর। ভালো লাগার কোন বয়স হয় না। আর যদি পুরুষ মানুষ শুধু মাত্র যৌন লালসার জন্য সুন্দরী মেয়েদের পছন্দ করে। তাহলে সেই লালসা সম্মান করা উচিত কারণ পুরুষের এই লালসাকে কেন্দ্র পুরন করতে পৃথিবীতে অনেক ব্যবসা চলছে। পোশাক থেকে প্রশোধন ব্যবসা সব মেয়েদের সাজায় পুরুষের ঐ লালসার চাহিদা মেটাতে।আর লালসা আর ভালবাসার মধ্যে ফারাক তোমার বোঝো না। একটা নারীর কাছে পুরুষ শুধু মাত্র আশ্রয় খোঁজে , যৌনতা খোঁজে না। যৌন সুখ বাজারে অনেক কম দামে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু মানসিক শক্তি পাওয়া যায় না। তবুও আমি যদি বুড়ো হয়ে গেছি বলে তোমার অসুবিধা হয় তাহলে আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছি। আর আমি তোমার কাছে আসবো না।”
কথা গুলো ও চুপচাপ শুনলো। ফোন কি একটা টেপটেপি করলো। তারপর বললো ” ২০২২ নভেম্বর যখন আপনি ছুটি শেষে চাকুরী গেলেন তখন আমার পেটে আপনার সন্তান এসে গেছিলো। কিন্তু আমি জানাই নি কারণ তিন মাস পর আপনি এলে , আমার জন্মদিনে আপনি যখন আমাকে কোন উপহার দেবেন তখন তার রিটার্নিং গিফট আপনাকে আপনার বাবা হবার খুশির খবরটা জানবো। কিন্তু আপনি আমাকে আমাদের সন্তানকে এবোশান করতে বাধ্য করলেন। হয়তো আপনি মনে মনে ভেবেছিলেন কার পাপ আমার নামে দিচ্ছে। একটা মেয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন মা হওয়া। আপনি তা থেকে বঞ্চিত করলেন। অনেক আঘাত পেয়েছি। কিন্তু সেই আঘাতে খবর আপনি পানি। অথচ আপনি নাকি আমাকে ভালো বাসেন। এই এক বছর যে আসতে আসতে আপনাদের মায়াবী এই শহরের থেকে দূরে সরে গেছি সেটার খবর রাখেন নি। বিশ্বাস করুন আপনার দেওয়া কোন উপহার ওপর আমার আর কোন লোভ নেই। আবদার করি অধিকারটা ধরে রাখতে। সম্পর্ক বাঁধন খুলে না যায় তার জন্য। মুক্তি দিতে চাইছেন না মুক্তি পেতে চাইছেন সে বিতর্ক যেতে চাইছি না। আজ তো আমার জন্মদিন তাই শেষ চাওয়াটা পুরণ করুন আজ রাতটা আমার কাছে থেকে যান। পরশু থেকে আমাকে আর আপনার শহরে খুঁজে পাবেন না । একটু আপনার বুক মাথা দিয়ে ঘুমাতে দেন।”
ওর বিনম্র অনুরোধ আমি ফেলতে পারলাম না। কিছু ক্ষনের মধ্যে ও ঘুমিয়ে পরলো। একটা মেসেজ ঢুকলো ওর ফোনে কোলকাতা টু মথুরা একটা টিকট বুক করেছিলো বোধহয় ও । সেটার কনফার্ম হয়ে গেছে। আমি উদ্বেগে চারিদিকে তাকালাম। হঠাৎ ওর সোকেশ দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো আমার চোখ। আমার দেওয়া দামী দামী গিফ্ট গুলো উধাও। তার জায়গায় দখল করে নিয়েছে একটা সাজানো গোছানো গোপালের মুর্তি। সেটার ওপর চোখ পড়তেই সে যেনো মুচকি মুচকি হাসছে।,,,
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন