তারপর কত কৃষ্ণচূড়া ভোর হলো আমি কুষ্ঠ রোগীদের মতো মানুষের কাছে নিগৃহীত হয়ে পালিয়ে যেতে চাইলাম এই পুরনো শহর ছেড়ে, যে শহর আমার জন্মদাতা আর যে শহর জন্মদাত্রী আমার। মানুষ ডাস্টবিনে হাড় ছুড়ে না ফেলে কুকুর ভেবে ছুড়ে দিয়েছিল আমার ৩৬ ইঞ্চি বুক বরাবর। আমি মোটেও অবাক হইনি কারণ পৃথিবীতে এক দল মানুষ ছুড়ে দেবে আর আরেক দল হজম করবে- এরকমই নিয়ম! আমি তো এও দেখেছি- কখনো কখনো ইতিহাস বদলে গেছে এভাবে, যারা ছুড়ে দিত এক সময় তাদের দিকেই ছুড়ে দেয়া হয়েছে নাকশা বরাবর। এ সব ভাবনা আমাকে নতুন কোনো খোরাক দিতে ব্যর্থ হয় বলে আমি নীলাদ্রির বাড়ির সামনে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসি। আমি চলে আসি চৈতি জরি নিরূপমা এমনকি সুদর্শনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও চলে আসি কারণ আমার মনে হয় ওরা আজ সবাই আমাকে তাড়িয়ে দিত! কেন দিত সেই উত্তর আমার কাছে নেই তবে ধারণা করে নিতে পারি যে আমি একটি হাংরি কবিতা লিখে পোস্ট করে দিলে ফেসবুকবাসীদের অ্যাবর্শন হয়ে যায় আর এ কারণেই যেহেতু ওরা বন্ধু আমার, না পারে আনফ্রেন্ড করতে না পারে আমাকে বাধা দিতে কারণ ওরা এত দিনে খুব ভালোভাবেই জেনে গেছে- বাধা মেনে নেয়ার মতো পুরুষ আমি নই আর আমি প্রকৃতই ক্ষুধার্ত যে ক্ষুধা সম্পর্কে শক্তিদা বলেছিলেন সর্বগ্রাসী ক্ষুধা। আসলে এসব আলোচনা এখন স্বস্তিদায়ক কিছু নয় তারচেয়ে বরং আমি ভেবে নিই আমার কোনো বন্ধু নেই সেটাই বরং স্বস্তিদায়ক। বন্ধুরা আমাকে বারবার বুঝতে ভুল করেছে- বহুবার, আর এ থেকে আমার মনে হয়েছে ভুল বোঝাই বুঝি বন্ধুত্বের প্রধান শর্ত আর এ কথা মনে পড়লেই আমি হো হো করে হেসে উঠি; কারণ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু সুদর্শনা একবার আমাকে গঙ্গার পাড়ে নিয়ে বলে ফেলেছিল তার ধারণা আমি নাকি তাকে প্রেমিকার মতো ভালোবাসি। আমি যদিও ওসব গঙ্গা জলটল বিশ্বাস করি না, তবু জল ছুয়ে ওকে বলেছিলাম- আমার এ চোখের তারার দিকে তাকিয়ে দেখো এখানে লেখা আছে সুদর্শনা আমার খুব ভালো বন্ধু, বন্ধুই কেবল আর কিছু নয়। সুদর্শনা সম্ভবত লাল হয়ে গিয়েছিল। তবে সুদর্শনা কি আমাকে বন্ধু ভাবে না আরও বেশি কিছু- এ কথা আমার মনে উদ্রেক হতেই আমি চাকু দিয়ে আমার বুকের বাঁ পাশটা ইনজুর্ড করে ফেলেছিলাম! ছি ছি কি সব ভাবছি আমি! আমাকে এরকম মানায় না কখনোই। আজ আমি এ শহর ছেড়ে সত্যিই সত্যিই পালিয়ে যাচ্ছি। এর আসলে নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। কারণ বড়জোর একটাই- আমি আসলে সুদর্শনার কাছ থেকে পালিয়ে যেতে চাইছি। এর কারণ হতে পারে সুদর্শনা কিংবা অবিনাশ অর্থাৎ আমি নিজেই। কি অদ্ভুত যে প্রেম-ভালোবাসা পবিত্র মানুষকে সেই পবিত্রতা থেকেই পালিয়ে যেতে হয় কখনো শুধু নিজের দৃষ্টিভঙ্গির কাছে পরাজয় থেকে বেঁচে যাওয়ার উদ্দেশে। পালিয়ে যেতে যেতে নিজেকেই প্রশ্ন করি- কোনটা বেশি প্রয়োজন, দৃষ্টিভঙ্গি নাকি ভালোবাসা। নিজের কাছে আমি নিজে কোনো উত্তর খুঁজে পাই না। শুধু মনে পড়ে গঙ্গাজল সত্য বা মিথ্যে হতে পারে: কিন্তু আমি যে সুদর্শনাকে এবং সুদর্শনা আমাকে অন্যভাবে দেখে বা দেখতে চেয়েছিল তা কিন্তু মোটেই মিথ্যে নয়। শুধু এই একটি গোপন সত্যের জন্যই আমার প্রিয়তম শহর থেকে আজ আমাকে পালিয়ে যেতে হচ্ছে দূরে যেখানে গন্তব্য বলে কিছু নেই- আছে কেবল একটি ছেঁড়া স্মৃতি যে স্মৃতির নাম- সুদর্শনা!

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৩৭ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন