Amarendra sen

গল্প - বিবেক আর সভ্যতা

লেখক: Amarendra sen
প্রকাশ - সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫ ধরণ: জীবনবাদী

সভ্যতা : দেখ বিবেক একদিন মানুষ নগ্ন হয়ে বা পশুর চর্ম পরে পাহাড় জঙ্গলের গুহায় বাস করতো। ফল মূল গাছের কন্দ ,কাঁচা মাছ মাংস বা ঝলসে খেত। রোগ ব্যাধির চিকিৎসা ছিলোনা। যখন তখন মানুষের মৃত্যু হতো। কোনো সু শৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা ছিল না।
বিবেক : হাঁ এখন মানুষ সুবিশাল অট্টালিকা গড়েছে , চোখ ধাঁধানো রাস্তা ঘাট শহর বন্দর গড়েছে।
রকমারি খাবার ,পানিও , চিকিৎসার অনেক উন্নতি হয়েছে। মানুষের কষ্টের লাঘব হয়েছে কিন্তু তবুও মানুষ অমর হয় নাই , মানুষের আয়ু মনে হয় কমেছে আর রোগ ব্যাধি অনেক বেড়েছে। শুধু দূষণ আর মরণ ব্যাধিতেই লক্ষ লক্ষ মরে যাচ্ছে। সু শৃঙ্খল সমাজ বলছো কিন্তু সু শৃঙ্খল হয়ে মানুষ আজ আরো বেশি অন্যায় অত্যাচার করছে। ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে সমান ভাবে।যেমন গ্রামে গোটা দেশ যারা শক্তিশালী তারা নিজেদের লিপ্সা পূর্ণ করতে দুর্বলদের ওপর সব স্বকর্মের অন্যায় করছে। সেটা রাষ্ট্র জীবনেও তাই শক্তিশালী দেশ গুলি দুর্বল দেশকে বাধ্য করছে
তাদের অন্যায় নিয়ে মানতে।
সভ্যতা : আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করবো এবং সব রোগের সফল চিকিৎসা আনবে কোনো লোক যেন রোগে মারা না যায় তার ব্যবস্থা করবো। গণতান্ত্রিক উপায়ে যতটা সম্ভব
সমাজ সুশৃঙ্খল এবং আইন মেনে চলছে চলবে, বাকি তা তো লোকের ইচ্ছা।
বিবেক : কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে কোনো রোগের প্রতিষেধক এলেও রোগের জীবাণু নতুন করে অভিযোজিত হয় আবার নতুন প্রতিষেধক খুঁজতে হয়। এটা যেন এক পা এগিয়ে দুই পা পেছানো। আমাদের মুলে গিয়ে দেখা উচিত নয় কি ? আর আইন থাকলেও সদিচ্ছা না থাকলে
মানুষ অত্যাচারিত হবে আইনের দ্বারাই মিথ্যাচার দিয়ে। তাই যদি মুলে গিয়ে দেখা যায় দেখা যাবে
আইন আছে মনে হচ্ছে আইন দ্বারা ন্যায় বিচার দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আসলে লোক দেখি দুর্বলদের ঠকানো হচ্ছে। সব ইচ্ছা আর সমর্থ না হলে কেউ বিচার পায়না নিজের অধিকার পায় না।
সভ্যতা : রোগ হবে প্রতিষেধক আসবে এভাবেই চলবে। কোনো দিন এমন আসবে মনে হয় না যখন কোনো রোগ থাকবে না কিন্তু সব রোগের চিকিৎসা আমরা আনবই। যদিও মূল কারণ টা জেনে এগোলে বেশি ভালো তাহলে সমাধান তারা তারই হবে।
বিবেক : মূল কারণটা কিন্তু আমার মনে হয় মানুষের জীবন যাত্রা। সেটা যদি সঠিক হয় তাহলে
অনেক রোগ ব্যাধি , সামাজিক সমস্যা কমে যাবে অথবা একেবারে সমাধান হয়ে যাবে। আর সেটা করতে গেলে প্রথমে মানুষ কে ভাবতে হবে উন্নতি কি ? বাঁচার লক্ষ্য কি ?
সভ্যতা : উন্নতি মানে তো নতুন নতুন উদ্ভাবন যেটা দিয়ে মানুষের কষ্ট লাঘব করা যায় , মানুষের অনেক আরো সম্পদ বৃদ্ধি করা যায় , জীবন সহজ হয়, মানুষ সুখী হয়। জীবনকে ধন সম্পদ প্রাচুর্যে খেয়ে পরে উপভোগ করে জীবনে সুখী হওয়া। আজকের দিনে মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কত তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে। মহাকাশে যাচ্ছে , অন্তরীক্ষের কত খবর এনে দিচ্ছে। সমস্যার সমাধান কত তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
বিবেক : মানুষের সুখ তো মনে সম্পদের প্রাচুর্যে নয় , কত ভোগ করলাম তার উপরেতো জীবনের সুখ নির্ধারণ হয় না।অনেক প্রাচুর্যে বেশি ভোগ করতে গিয়েও তো মানুষ জীবন বিপর্যস্ত করে তুলছে নিজের।অর্থ আছে সময় নেই ভাবার কোনটা ভালো কোনটা মন্দ। একটা উৎকট ভোগের নেশায় মানুষ ভোগ করতে গিয়ে নেশা , ড্রাগ অথবা অন্য কিছুর মধ্যে পরে জীবন বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। অনেকে মানুসিক ভাবেও রোগগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। আর যাদের প্রাচুর্য আছে তারা যেমন খুশি জীবনের সুখ নিতে গিয়ে সাধারণ মানুকে মিথ্যে মোহের পথ দেখিয়ে তাদের সরল জীবন অসুখী করে তুলছে। সরল গরিব লোকেরা মিথ্যে প্রাচুর্যের লোভে মিথ্যে দৌড়ে জীবনকে আরো কষ্ট কর করে তুলছে। অনেকটা এক মোটা অন্ধ আরেক লিকলিকে অন্ধকে হাতির দর্শন করাচ্ছে।
সভ্যতা : দেখো বাঁচতে গেলে অর্থ চাই , আর যত সুখ চাও ততই অর্থ দরকার। তাই আজকের দিনে মানুষ কে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। দেখছোনা জাপানিরা খাওয়া দাওয়া আরামে যতটা সময় দেয় তার চাইতে অনেক বেশি সময় দেয় কাজে , পয়সা উপার্জনে।
বিবেক :আচ্ছা বলতো বাঁচতে গেলে কি চাই ? আমারতো মনে হয় পেটের অন্ন, শরীরের কাপড় আর বাসস্থান। এর সাথে সঠিক শিক্ষা থাকলেই মানুষ নিজের ভালো মন্দ অনুযায়ী যা দরকার তৈরী করে নেয় । কিন্তু সকলেই যদি বাড়ি গাড়ি বিলাস বহুল জীবনের লক্ষে কাজ করে সেটা কি সবাই পাবে বা পায় ? সারা জীবন খাটার পরেও কেই হয়তো ভালো খাবার প্রতিদিন পায় না ,একটা সুন্দর বাড়ি আর বিলাস বহুলতা অনেক দূরের কথা। তাহলে আমরা কি লোকেদের একটা মিথ্যা জগতে মিথ্যা দৌড়ে ঠেলে দিচ্ছি না ?
সভ্যতা : দ্যাখো মানুষকে যদি বলা যায় কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকি বেশি চেষ্টা করোনা।
দেশের সরকার যদি সবাইকে ন্যূনতম সব কিছু ফ্রি তাই দেয় তবে তো কেউ কাজ করবে না। তাহলে তো লোকের সব উদ্দম হারিয়ে একটা কুঁড়ে সমাজ হয়ে দিনে দিনে শেষ হয়ে যাবে।
বিবেক : না কুঁড়ে কেন হবে মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে যদ্দিন বাঁচবে কিন্তু মিথ্যা ভাবনা নিয়ে নয়। কঠোর পরিশ্রম করলাম একটা মিথ্যা লক্ষ্য তাহলে দিনের শেষে কিন্তু মনে খুব হবে দুঃখ হবে। তার থেকে মানুষ বিভ্রান্ত হবে , ক্ষোভ উগরে দিতে গিয়ে মানুষ সমাজে বিভিন্ন অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানুষের মনকে উত্তেজিত করে সংঘাত সৃষ্টি করছে।
সভ্যতা : প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিন্তু সমাজকে রাষ্ট্রকে উন্নতির চরম শিখায় নিয়ে যায়। তার উদাহরণ অনেক আছে।
বিবেক : প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানুষের উন্নতির এক উপাদান হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি সুকেদ্রিক না হয় , যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা লোকহিতায় না হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু যদি নিজেকে শ্রেষ্ঠ র্প্রতিপন্ন করে দুর্বলকে পদদলিত করে রাখার জন্যে হয়, তাহলে কিন্তু সংঘাত অনিবার্য। আর এই সংঘাত জীবন কে বিপন্ন করে তুলবে। আজকে এতো উন্নতি করেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশগুলি অন্যকে দমিয়ে রেখে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকে পৃথিবীতে জীবনে অস্তিত্বই বিপন্ন করে তুলেছে।
সভ্যতা : না প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে এগিয়ে থাকে সে পৃথিবী ভোগ করবে। সবাই তাকেই সর্বশেষ্ঠ মেনে নেবে। যুদ্ধে কেউ তাকে হারাতে পারবে না।
বিবেক : যুদ্ধে কেউ জয় হয়না। যুদ্ধ করা উচিত শুধু অন্যায়কারীকে বিরত করে শাস্তি দানের জন্যে। যদি আজকে সর্বব্যাপী যুদ্ধ হয় কেউ কি বাঁচবে তোমার মনে হয় ? যার হাজার হাজার এটম বোম্ব আছে সেও যেমন যুদ্ধ শেষে ধ্বংস হবে আবার যার হাতে একটা ছুরিও নেই সেও ধ্বংস হবে। তোমার কি মনে হয় ?

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৫৭ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন