(১) নববর্ষ

আজ আমাদের নববর্ষ(!)
এত হাসি, এত হর্ষ
চারিদিকে! এত আয়োজন এত হল্লা
দিকেদিকে! এত সমারোহে বিপুল রঙের মেলা!
পান্তা-ইলিশ মিলনের ড়গড়গে এক প্রতিযোগিতা
এ জমিনময়। চোখে চোখে কত যে কথকতা,
হাওয়ায় হাওয়ায় ভাব বিনিময়!
সবই আজ কেবলই অন্তমিল-শূন্য মনে হয়
আমার কাছে। আমি তাই বলি খুব সহজে-
কেবল বছরের প্রথম দিন এ যে
আর কিছু নয়, আর কিছুই নয় যে

আমার কাছে প্রথম দিন আর শেষ দিনের মাঝে
কেবলই ৩৬৪ দিনের ফারাক
জীবন যেখানে আর এক
নিতান্তই পানসে গল্পের নিরন্তর বাঁকবদল
বড়ই বেরঙ-বেঢং যার আদল
সেখানে খেয়ালীপনার হল্লা করে পান্তা-ইলিশ মিলন
কোন দিন কোন তাৎপর্য বহন
করে না। এ জীবনে এসব আর কোন চমক মারে না
দিব্যি জানি আমাদের সংবৎসর কোন স্বপ্ন বহন করে না;
বড়ই সাদামাঠা চলে। নেই ভুত, নেই ভবিষ্যৎ
কেবলই বাস্তবতা; বড়ই নিষ্ঠুর, নিত্য যমের সাক্ষাৎ
ঘটে, তাইতো আজ নববর্ষের অর্থ বুঝি না
কোনোমতে, তাই পান্তা-ইলিশ মিলনের কোন তাৎপর্যও আর খুঁজি না

আমাদের পার্থিব ইলিশ শুধুই যে জীবনের পণ্য
আমরা ইলিশ ধরি জীবনের জন্য,
শুধুই জীবনের জন্য জীবন বিপন্ন করে বারবার
পান্তার ইলিশ, ইলিশ বিলাসিতার!
কোত্থেকে জুটবে বল আর?
কোথায় নববর্ষ? কোথায় কালচার?
কোথায় শাশ্বত বাঙালিপনা! সাধের জীবনইবা কোথায়!
যেখানে জনসমুদ্রে বন্য আনন্দের পণ্য হয়
কেবলই রমণীর নগ্ন দেহবল্লরী আজ
রমণীর কমণীয় শরীরের ভাঁজ
কেবলই ঝলসে যায় পুরুষের কামনার আগুনে নির্বিচারে
নিমিষে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে
যেখানে নারীর আনন্দ কর্পুরের মতো বিলীন হয়ে যায়
কী লজ্জা! কী লজ্জা! হায়

আরও যখন পাথর মানুষের মতো চেয়ে চেয়ে দেখি-
তা সব নিমিষে হয়ে যায় কেবলই নোংরা মেকি
রাজনীতির এক তর্কযুদ্ধ কেবল
তাহলে, নববর্ষও কী রাজনীতিকীকরণের এক বেজন্মা ফসল?
কোথায় নববর্ষ? কোথায় সংস্কৃতি? কোথায় এর মাধুর্য?
জীবনের সাথে কোথায় এর গভীর সাজুয্য
আছে? মানুষের সাথে এর প্রাসঙ্গিকতা!
তার অর্থের প্রগাঢ়তা!
কে আমায় বলে দেবে? তাই আমার উপলব্ধিতে নববর্ষ-এ তো
বছরের প্রথম দিন মাত্র
কেবলই প্রথম দিন; অতিসাধারণময়
সে আর কিছু নয়
আর কিছুই নয়।
(এপ্রিল ২০১৬, রংপুর)

(২) নববর্ষ ২

সে আসলে এখন আর তার প্রাকৃতিক ‘সে’-এর কিছুই না
সে এখন আমাদের সকল ‘আমি’-এর এক রূপান্তরিত রূপ
সে আমাদের অধিগৃহীত সম্পদ যেন
সত্তার ভিতরে মিশে যায়;
রঙ বদলায়, ঢং বদলায়
সমসত্বে বদলে যায় ভাবে-ভাবনায়-ভাষায়;
যেন শূন‍্য চাঁদের পুনঃ ক্রমরূপায়ন

হিংসা-জিঘাংসার প্রতিকুল সাগরে সকলের এক
বিপরীত সন্তরণ!
আমাদের সমগ্র চেতনার, আনন্দের
খোলসিত যাপনের
রক্তাক্ত দশার প্রগাঢ়তা এক,
যেন বিষাদে হর্ষ!
আর সেটাই বুঝি আমাদের নববর্ষ?
(এপ্রিল ২০২৫, ঢাকা)

(৩) বৈশাখ

হে বৈশাখ, সবটুকু অস্তিত্বে তুমি একান্তই এই বাংলার
যুগযুগ ধরে তুমি যুত্সই সাথী শাশ্বত বাঙালীপনার
বাঙালীত্বের মতো সত্য ও উজ্জ্বল তোমার অস্বিত্ব
ঠিক যেন প্রিয় কাঙ্খিত লোহিত কণিকার মতো
বাঙালীর কিংবদন্তী বীর্যবত্তায়
তুমি একাকার জল ও হাওয়ার মিশেলের ন্যায়
তুমি কোটি কোটি কামনার প্রাণের বসতিতে আজি
যেন মহারাজার প্রাণময় নওরোজ উৎসবরাজি
ঘরে-ঘরে, প্রান্তরে। তুমি গুরুদেবের মঙ্গলগীতে কেবলই বাঙময়
রমনার বটমূলে শ্বেত-পরী আঁচলে-আঁচলে তুমি নিশ্চয়
বড্ড গীতিময়। এ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের আঙিনায়
তুমি মতুয়া-বধূর আল্পনা-কাহিনী যেন বড়বেশি কামনায়, আরাধনায়
বিভাবতী স্বপ্নের মতো কেবলই তুমি আজ বাঙময়
হয়ে ওঠো বাঙালির ঘরেঘরে নিশ্চয়

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো আজি
এই শাশ্বত বাংলায়, নিয়ে তোমার বিধ্বংসী-মাধুরীরাজি
এসো হে নটরাজ, রুদ্রবেশে আজ, এসো এবারে
কাঁপিয়ে দাও আজ যত অপ-দেবতারে
অপ-বাঙালিত্বের নক্সাল-বাড়ী যত
হানা দাও সেখানে আজ বিপ্লবী চে’গুয়েভারার মতো
অনর্গল; মুছে যাক, ঘুঁচে যাক এবার
কেবলই প্রেমহীন মৃত্তিকা-প্রীতির গ্লানি যত তার

সূঁচি হোক, সিদ্ধ হোক এ বাংলাভূমি আবার
এ বাংলায় বাঙালি ও বাঙালিপনা
হয়ে উঠুক সোনার মতো খাঁটি সোনা
বাঙালি ও বাঙালিত্ব
স্বত্তা ও সত্য
নিয়ে তার এ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সংসার
হোক একাকার
আজ হোক একাকার।
(এপ্রিল ২০০৮, ভোলা)

১৩৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন