নিশাতের চোখে সেই অন্ধকার অতীতের ছায়া তখনও স্পষ্ট ছিল, তবে রাহাত তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে একটু শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। রাহাত জানত, নিশাত এখন অতীতের সেই ভয়ংকর স্মৃতির মুখোমুখি হতে বাধ্য। তার নিজের জীবন এখন শুধু ভালোবাসার নয়, বরং যুদ্ধেরও এক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যুদ্ধে তাদের একসাথে থাকতে হবে, কারণ একে অপরকে ছাড়া তারা জয়ী হতে পারবে না।
নিশাত আর রাহাত সেই নির্জন পাহাড়ে বসে কিছুক্ষণ চুপ ছিল। বাতাসের স্নিগ্ধতা তাদের শরীরের ত্বকে খেলে যাচ্ছিল, তবে মনটা ছিল অস্থির। নিশাতের ভেতর, পুরনো দিনের কষ্ট যেন ফিরে আসছিল। একসময়, সে মুখ খুলল, ‘‘রাহাত, তুমি কি জানো, আমি কখনোই এতটা ভয় পায়নি, যতটা এখন।’’ তার কণ্ঠে এক ধরনের কাঁপুনি ছিল, কিন্তু রাহাত তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, ‘‘ভয় তোমাকে জয়ী হতে দেবে না, নিশাত। আমরা একসাথে আছি, সব কিছু পার হবো।’’
তবে নিশাত জানত, তাদের সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। সেই অজ্ঞাতনামা শত্রু, যে তার পিছনে লুকিয়ে আছে, তা কখনোই দূরে যাবে না। সে তাকে আঘাত করার জন্য একটি সুযোগ খুঁজছে। কিন্তু নিশাত জানত, রাহাতের ভালোবাসা আর সহযোগিতা ছাড়া তার এই বিপদ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই সে এক গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, ‘‘রাহাত, আমার অতীতের শত্রু শুধু আমার একা নয়, এখন তোমাকে আঘাত করতে চাইছে। তার উদ্দেশ্য, আমাদের সম্পর্ককে ভেঙে দেওয়া। তবে জানো, যতটা ভয় আমাদের মধ্যে ছিল, ততটাই আমাদের শক্তি বাড়ছে।’’ নিশাতের চোখে এক অদ্ভুত শক্তি ছিল, যেন সে তার ভেতরের ভয়কে অতিক্রম করতে প্রস্তুত ছিল।
রাহাতের চেহারায় কিছুটা উদ্বেগ ছিল, কিন্তু সে জানত, নিশাতের লুকানো শক্তি এখনও তার মধ্যেই আছে। সে বলল, ‘‘যদি সেই শত্রু আমাদের কাছে আসে, তাহলে তুমি একা না, আমি তোমার পাশে। একসাথে লড়াই করতে হবে, নিশাত।’’
এতক্ষণে নিশাত অনুভব করছিল, রাহাতের বিশ্বাস তার জন্য এক বড় আশীর্বাদ। তবে, তারা জানত, তারা যতই একে অপরকে ভালোবাসুক, অতীতের অন্ধকার ও রহস্য তাদের সাথে থাকে, এবং সেই রহস্য সবার কাছে একে একে প্রকাশ হতে পারে। পরবর্তী পদক্ষেপটা ছিল সেই শত্রুদের খোঁজে, যারা নিশাতের জীবনে গোপনে থাবা বসাতে চাইছিল।
পরবর্তী দিন, নিশাত আর রাহাত শহরের এক প্রান্তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে তাদের শত্রুদের আড়াল হতে পারে। নিশাত জানত, তার অতীতের কিছু বন্ধন একসময় তাকে সেই জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, যেখানে একদিন সে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে আর পালাতে চায়নি। সে জানত, যদি একে একে সত্য প্রকাশ না হয়, তাহলে তার জীবনের শেষ হওয়ার ভয় থাকবে। রাহাতকে সাথে নিয়ে, সে প্রতিজ্ঞা করেছিল, যে কোনো মূল্যে সে তার অতীতের শত্রুদের মুখোমুখি হবে।
তারা শহরের এক কোণে পৌঁছানোর পর, রাহাত নিশাতকে বলল, ‘‘এখানে কিছু মনে হচ্ছে না। নিশাত, তুমি কি কিছু অনুভব করছো?’’ নিশাত চারপাশে তাকিয়ে, চোখে এক রহস্যপূর্ণ দৃষ্টি রেখে বলল, ‘‘হ্যাঁ, আমি জানি। আমাদের আগেই এখানে কাউকে আসতে হবে।’’ তার কথা শেষ হতেই, তাদের সামনে এক অচেনা গাড়ি থামল। গাড়ির দরজা খুলে, একজন অদ্ভুত মুখাবয়বের ব্যক্তি বেরিয়ে এলো। তার মুখে এক অদ্ভুত হাসি ছিল, যেন সে দীর্ঘ সময় ধরে তাদের খুঁজছিল।
রাহাত কিছুটা চমকে গিয়ে নিশাতকে জিজ্ঞেস করল, ‘‘তুমি তাকে চিনো?’’ নিশাত চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘‘হ্যাঁ, আমি তাকে চিনি। এই ব্যক্তি আমার জীবনের সেই লোক, যে আমাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।’’ তার কণ্ঠে এক ভয়ানক দৃঢ়তা ছিল, যেন সে তার শত্রুকে জানিয়ে দিচ্ছিল, এখন আর তার ভয় নেই।
অতীতের সেই ব্যক্তি, যার নাম রায়হান, হাসি হেসে বলল, ‘‘তুমি ভাবছো, নিশাত, তোমার জীবনে আমি এসেছি শুধু তোমার শত্রু হতে? আমি আসলে তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।’’
নিশাত অবাক হয়ে বলল, ‘‘তুমি আমাকে সাহায্য করতে এসেছো? তুমি কী বলছো?’’ রায়হান কিছুটা ঠোঁটে হাসি দিয়ে বলল, ‘‘হ্যাঁ, তোমার জীবনটা যখন আমি ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম, তখন আমি জানতাম, তুমি একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু, তোমার কিছু গোপনীয়তা যদি প্রকাশ পায়, তখন তুমি বুঝবে যে, আমি তোমার বন্ধু ছিলাম, না শত্রু।’’
তবে রাহাত তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ‘‘এটা কি কোনো ধোঁকা, রায়হান? তুমি যদি সত্যিই তাকে সাহায্য করতে চাও, তাহলে আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলো।’’
রায়হান ঠোঁটের কোণে হাসি রেখেই বলল, ‘‘আমার সাহায্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই বিপদজনক। তোমাদের সামনে এক ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। যদি নিশাত সেই সত্যিটা জানে না, তবে আমি তাকে জানাতে এসেছি।’’
রাহাত এবং নিশাত একে অপরকে তাকিয়ে দেখল। তাদের চোখে তখন এক অদ্ভুত অস্থিরতা, তবে নিশাত জানত, এই মুহূর্তে যা কিছু হবে, তা তাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে সোজা দাঁড়িয়ে বলল, ‘‘তুমি বলেছো, আমার জীবনে যে গোপনীয়তা রয়েছে, তা আমি জানি। কিন্তু এখন আমি জানি, তোমার কথাগুলো আর কোনোভাবে আমাকে ভীত করতে পারবে না।’’
রায়হান এক গভীর হাসি দিয়ে বলল, ‘‘তাহলে প্রস্তুত হও, নিশাত, কারণ তোমার সামনে এক অন্ধকারের সত্যি অপেক্ষা করছে।’’
(চলবে…)
তোমার ছোঁয়ায় বেঁচে থাকি ৫


গল্প - তোমার ছোঁয়ায় বেঁচে থাকি ৫
লেখক: আনিসুর রহমান আনসারী
প্রকাশ - শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
ধরণ:
ভালোবাসা
০
০
সেভ বা রিয়েক্ট করার জন্য লগইন করে নিন!
৪০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন