রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কবিতা - স্বামিলাভ (কথা ও কাহিনী)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

( ভক্তমাল)

একদা তুলসীদাস জাহ্নবীর তীরে
নির্জ্জন শ্মশানে
সন্ধ্যায় আপন মনে একা একা ফিরে
মাতি নিজ গানে।
হেরিলেন মৃত পতি-চরণের তলে
বসিয়াছে সতী;
তারি সনে এক সাথে এক চিতানলে
মরিবারে মতি।
সঙ্গীগণ মাঝে মাঝে আনন্দ চীৎকারে
করে জয়নাদ,
পুরােহিত ব্রাহ্মণেরা ঘেরি চারিধারে
গাহে সাধুবাদ।

সহসা সাধুরে নারী হেরিয়া সম্মুখে
করিয়া প্রণতি
কহিল বিনয়ে—প্রভাে আপন মুখে
দেহ অনুমতি।

তুলসী কহিল, মাতঃ যাবে কোন্‌খানে,
এত আয়ােজন?
সতী কহে—পতিসহ যাব স্বর্গপানে
করিয়াছি মন।
ধরা ছাড়ি কেন নারী স্বর্গ চাহ তুমি?
সাধু হাসি কহে-
হে জননী, স্বর্গ যাঁর, এ ধরণীভূমি
তাঁহারি কি নহে?

বুঝিতে না পারি কথা নারী রহে চাহি
বিস্ময়ে অবাক-
কহে করজোড় করি—স্বামী যদি পাই
স্বর্গ দূরে থাক্।
তুলসী কহিল হাসি—ফিরে চল ঘরে
কহিতেছি আমি
ফিরে পাবে আজ হ’তে মাসেকের পরে
আপনার স্বামী।
রমণী আশার বশে গৃহে ফিরে যায়
শ্মশান তেয়াগি’;
তুলসী জাহ্নবীতীরে নিস্তব্ধ নিশায়
রহিলেন জাগি।

নারী রহে শুদ্ধচিতে নির্জ্জন ভবনে,
তুলসী প্রত্যহ
কি তাহারে মন্ত্র দেয়, নারী একমনে
ধ্যায় অহরহ।
এক মাস পূর্ণ হ’তে প্রতিবেশীদলে
আসি তা’র দ্বারে
শুধাইল, পেলে স্বামী?—নারী হাসি বলে
পেয়েছি তাঁহারে।
শুনি ব্যগ্র কহে তা’রা——কহ তবে কহ
আছে কোন্ ঘরে?
নারী কহে, রয়েছেন প্রভু অহরহ
আমারি অন্তরে।

২৩
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন