চারাগাছ

সুকান্ত ভট্টাচার্য সুকান্ত ভট্টাচার্য | কাব্য - ছাড়পত্র

ভাঙা কুঁড়ে ঘরে থাকি
পাশে এক বিরাট প্রাসাদ
প্রতিদিন চোখে পড়ে ;
সে প্রাসাদ কী দুঃসহ স্পর্ধায় প্রত্যহ
আকাশকে বন্ধুত্ব জানায় ;
আমি তাই চেয়ে চেয়ে দেখি |
চেয়ে চেয়ে দেখি আর মনে মনে ভাবি -----
এ অট্টালিকার প্রতি ইঁটের হৃদয়ে
অন্ক কাহিনী আছে অত্যন্ত গোপনে,
ঘামের, রক্তের আর চোখের জলের |
তবু এই প্রাসাদকে প্রতিদিন হাজারে হাজারে
সেলাম জানায় লোকে, চেয়ে থাকে বিমূঢ় বিস্ময়ে |
আমি তাই এ প্রাসাদে এতকাল ঐশ্বর্য দেখেছি,
দেখেছি উদ্ধত এক বনিয়াদী কীর্তির মহিমা |

হঠাৎ সেদিন
চকিত বিস্ময়ে দেখি
অত্যন্ত প্রাচীন সেই প্রাসাদের কার্নিশের ধারে
অশ্বথ্ব গাছের চারা |

অমনি পৃথিবী
আমার চোখের আর মনের পর্দায়
আসন্ন দিনের ছবি মেলে দিল একটি পলকে |

ছোট ছোট চারাগাছ------
রসহীন খাদ্যহীন কার্নিশের ধারে
বলিষ্ঠ শিশুর মতো বেড়ে ওঠে দুরন্ত উচ্ছাসে |
হঠাৎ চকিতে,
এ শিশুর মধ্যে আমি দেখি এক বৃদ্ধ মহীরুহ
শিকড়ে শিকড়ে আনে অবাধ্য ফাটল
উদ্ধত প্রাচীন সেই বনিয়াদী প্রাসাদের দেহে |

ছোট ছোট চারাগাছ-----
নিঃশব্দে হাওয়ায় দোলে, কান পেতে শোনে
প্রত্যেক ইঁটের নীচে ঢাকা বহু গোপন কাহিনী
রক্তের, ঘামনের আর চোখের জলের |

তাইতো অবাক আমি, দেখি যত অশ্বথ্বচারায়
গোপনে বিদ্রোহ জমে, জমে দেহে শক্তির বারুদ ;
প্রাসাদ-বিদীর্ণ-করা বন্যা আসে শিকড়ে শিকড়ে |

মনে হয়, এইসব অশ্বথ্ব-শিশুর
রক্তের, ঘামের আর চোখের জলের
ধারায় ধারায় জন্ম,
ওরা তাই বিদ্রোহের দূত ||
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ১৫২ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন