ঢেউ গুনে গুনে, কেটে যায় বেলা
সিন্ধুতীরে :
জানি পুনরায় ভাসাব না ভেলা
অবাধ, অগাধ, অপার নীরে |
তবে মাঝে মাঝে কেন মনে পড়ে
পালের স্ফূর্তি উদ্দাম ঝড়ে ;
উধাও তারার ইশারায় পথ
আবার নিরুদ্দেশে,
যেথা সর্বতোভদ্র জগৎ
সম্ভাবনার নিখিল নির্বিশেষে ?
অথবা নিবাত, নির্মল, নীল
দ্বিপ্রহরে
পরিণত মায়ামুকুরে সলিল
আকাশে, বাতাসে আলস ভরে :
স্তম্ভিত তরী যেন পটে আঁকা ;
অবাক বলাকা সংবৃতপাখা ;
অনাথ দ্বীপের বৃথা অধিবাস
বিলীন বিস্মরণে ;
অপ্সরীদের নিভৃত বিলাস
মুক্তাবিকচ রক্ত প্রবালবনে ||
কখনও আবার বাদলে ব্যাহত
আলোর গ্লানি
চেতনাচেতনে গনায় নিয়ত
অজাত দিনের অন্ধ হানি |
কিন্তু একদা সন্ধ্যার আগে
মৌসুমী মেঘ ভিন্ন দু ভাগে,
স্নানযাত্রার স্বর্ণ সরণী
মুক্ত মর্ত্যধামে :
দক্ষিণে ডোবে স্মিত দিনমণি ,
পৌর্ণমাসীর চন্দ্রমা জাগে বামে ||
তারপর প্রতি পলের অভেদ :
দিবা ও নিশা
আনে না কালের স্রোতে বিচ্ছেদ ;
এমনকি আয়ু হারায় দিশা |
নিত্য অন্তরীক্ষ ও জল,
অতৃপ্ত তৃষা তথা কুতূহল,
এবং দুরাপ, দূর দিগন্ত—
মূর্ত অসন্ধান ;
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত
সে-যবনিকার প্রতিভাসে ক্ষীয়মাণ ||
তবু এসেছিল সহসা ব্যাঘাত
স্বগত ধ্যানে |
কঠিন মাটির অভিসম্পাত
বর্তেছিল কি অভিজ্ঞানে ?
অন্তত দিতে চেয়েছিল ঘুষ
মণিকাঞ্চন-যোগে প্রত্যুষ ;
প্রশস্তি ব’লে হয়েছিল ভুল
শঙ্খচিলের হাসি ;
মায়াবী পুলিনে লোভের প্রতুল
দেখেই তরণী অবিশ্বাসী ||
অনাত্মীয়ের মুখ চেয়ে আছি
সেদিন থেকে :
উঞ্ছ কুড়িয়ে অগত্যা বাঁচি
নিরুপার্জন নির্বিবেকে |
দৃষ্টির সীমা মাপে হিমগিরি ;
পর্ণকুটীরে দুর্যোগে ফিরি
সৈকতে এসে বসি কদাচিৎ
আমার উপক্রমে ;
মহার্ণবের সাংসংগীত
হয়তো বা শুনি শুক্তির মাধ্যমে ||
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন