নাথু-সংকটে হাঁকে তিব্বতী হাওয়া |
প্রাকৃত তিমিরে মগ্ন চুমলহরি |
ছঙ্গু-সায়রে কার বহিত্র বাওয়া
অপর্ণ বনে দিয়েছে রহস ভরি ||

সুহৃদ আগুন নিবে গেছে গৃহকোণে ;
শ্রান্ত সাথীরা স্বপনে আপনহারা ;
আমি শুধু ব’সে তুষায়িত বাতায়নে
প্রহরে প্রহরে গুণি খাসে কত তারা ||

অঙ্গ তুহিন, তপ্ত আমার মাথা,
ক্লান্ত, তথাপি নিদ্রা আসে না ডাকে ;
বাণীহীন কোন্ অনাদি বিষাদগাথা
গুঞ্জরে বিস্মরণের ফাঁকে ফাঁকে ||

হিমানীবিজন এই দুর্গম দেশে,
মনে হয় যেন, কে আমার অনুগামী ;
হয়তো বা আমি ভুলে গেছি আজ কে সে,
কিন্তু ভোলে নি তারে অন্তর্যামী ||

বিগত জনমে, এই পর্বতশিরে,
এমনই নীরব প্রাগিতিহাসিক রাতে
শিকার সমাপি এসেছিনু ঘরে ফিরে
মৃগের বদলে তাহারে কি ল’য়ে সাথে ?

মিনতি আমার প্রথমে ধরে নি কানে ;
কুটিল ভ্রূকুটি মোছে নি ললাটে ত্বরা ;
তার পরে কেন— তা কেবল সেই জানে—
আযাচিতে হল সহসা স্বয়ংবরা ||

চ্যুত বল্কলে নিবে গেল দীপখানি ;
বাহিরের হিম মুকুরিল দ্রব চোখে ;
হঠাৎ তাহার লঘু, ভাস্বর পাণি
খুঁজিল আমারে প্রাক্তন নিরোলোকে |

আবার কি তার আদিম নিমন্ত্রণী
আহ্বানে মোরে অমৃতের অভিসারে ?
কাঁদে সেদিনের প্রণব প্রতিধ্বনি
প্রতন গিরির গহ্বরকারাগারে ?

পুরাণপুরুষ ছাড়া পাবে নিমেষে কি ?
মাটির মানুষ মিলিবে মাটির সনে ?
বিদগ্ধ প্রাণী, এ কি মরীচিকা দেখি ?
ফিরিব প্রভাতে পরিচিত পরিজনে ||

মৌল আকূতি মরমেই যাবে ম’রে |
জনশূন্যতা সদা মোরে ঘিরে রবে |
সামান্যাদের সোহাগ করিদ ক’রে
চিরন্তনীর অভাব মিটাতে হবে ||

বর্বর বায়ু চিরায়ু অচলচূড়ে
মুছে দিবে মোর অশুচি পায়ের রেখা |
মার্জিতরুচি জনপদে, বহু দূরে,
ভিড়ে মিশে আমি ভেসে যাব একা একা ||

২৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন