গন্ধের ও লিঙ্গ আছে নাকি? সত্যি আমি জানতাম না।
তুমি ঝগড়া না করলে , জানতে পারতাম না সেটা । আমার মামাতো বোন বললো ” আমার সেন্ট গায়ে দিয়ে গেলে তো ঝগড়া হবেই।” পরে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখেও , বুঝে গেলাম পুরুষের সেন্ট আলাদা। চাকরিটা হঠাৎই চলে গেছে। আমি তোমাকে বড় ভালবাসি । তোমাকে হারিয়ে ফেলতে ভয় পাই। তাই বলি নি চাকরি গেছে যদি বিয়েটা ভেঙে দেয় তোমার বাড়ি থেকে। একে নিচু জাতের ছেলে বলে, তোমার বাবা আমাকে মানে নিতে পারে নি মন থেকে। শেয়ার বাজারে ধস । Ac ঘরে হোয়াইট কলার চাকরি ছেড়ে, ডক বয়ের চাকরি ধরলাম কারণ ভালো চাকরি খুঁজে অনেক টা সময় নষ্ট হয়ে গেছে । সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সারাদিন। গেয়ে ঘামের দুর্গন্ধ । তাই সেন্ট লাগিয়ে , দেখা করতে গেলাম । তুমি ঝগড়া করলে , ভুল বুঝে । বললে আমি নাকি অন্য মেয়ে সাথে সম্পর্ক রেখেছি।
তুমি ভুলে গেলে কিভাবে ? আমাকে সবাই বুকিবয় বলতো। সুজাতা করসিজি না করলে কোনদিন আমি , তোমার প্রেমিক হতে পারতাম না।
কারণ ভুত, পেত্নী, আরশোলার মতোই আমি মেয়েদের ভয় পাই। যদিও আরশোলা কিছুক্ষন ভয় দেখায়, ভুত পেত্নী ও শুনেছি খুব বেশি হলে ঘাড় মটকে দেয়। কিন্তু মেয়েরা ঘাড়ে বসলে সারাজীবন জ্বালাবে। আমি দেখেছি মায়ের শুধু মাত্র ছেলেদের মারে না। বাবাদের চোখে চোখে শাসন করে , তাই নারী জাতি ভয়ঙ্কর। তাই মেয়েদের জন্য মিষ্টি গন্ধ , ঝাঁঝালো চরিত্র লুকিয়ে রাখতে। আর ছেলেদের জন্য গন্ধ আলাদা। তবে জানানো ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী সব গন্ধ ব্যবহার করতে পারে না ছেলেরা। আতর এক মাত্র হালাল মুসলিম দের জন্য।
আতর সম্পর্কে আমি একটু কিছু জানি। আমি ততোটা স্মার্ট না। চাকরির টিকিয়ে রাখতে পারছিলাম না। তাই একজন বুদ্ধি দিয়ে ছিলো আতরের ব্যবসা করতে। আমি আগর গাছ পোঁতার জন্য জমিও কিনেছিলাম বিঘা তিনেক। জানো পৃথিবী বিখ্যাত আতর বাংলাদেশ থেকেই রপ্তানি হয়। আগর শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো উৎকৃষ্ট বা সুগন্ধি বিশিষ্ট কাঠ। শাখা-প্রশাখা নেই সোজা লম্বা গাছ, শাল গাছের মতো দেখতে এবং আকার আকৃতিতে । আগর গাছের পাতা দেখতে অনেকটা লিচু গাছ বা বকুল গাছের পাতার মতো কিছুটা। সাদা রঙের আগর কাঠ খুব নরম হয় , তাই আসবাবপত্র হয় না। এই কাঠ আতর উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ ও জ্বালানি কাঠ হিসেবে গাছ ব্যবহার করা হয়।
বাগান থেকে পূর্ণ বয়স্ক আগর গাছ কেটে এনে প্রথমে লগ, মানে টুকরো টুকরো করে কেটে করা হয়। এ টুকরোগুলোকে দুইভাগে আলাদা করা হয়। এক ভাগে ঘন কালো, হালকা কালো, তামাটে, অল্প তামাটে বর্ণের কাঠের টুকরা এবং অন্য ভাগে ধূসর, প্রায় সাদা বর্ণের কাঠের টুকরা থাকে। হালকা কালো, তামাটে ও অল্প তামাটে রঙের আগর কাঠের লগগুলোকে লম্বালম্বিভাবে চিরে ফালি করা হয়। ফালিগুলো থেকে সাবধানতার সাথে তারকাটাগুলোকে সরানো হয়। ফালিগুলো অত্যন্ত যত্ন করে ও সুনিপুণভাবে সাজানো হয় যেন কালো অংশ বা আগরগুলো আস্ত থাকে। চেরা ফালিগুলোকেই ধুম বলে।ফালিগুলোকে কুচি কুচি করে কাটা হয়।এরপর কুচি কুচি করে কাটা টুকরোগুলো ট্যাঙ্ক, ড্রাম, বড় হাঁড়িতে জলের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখা হয়। ভিজিয়ে রাখা কাটা কাঠগুলো তুলে চালনির সাহায্য জল ঝড়িয়ে ঢেকি দিয়ে গুঁড়া করা হয়। কাঠের গুঁড়া অংশগুলোকে ছুরন বলা হয়। ছুরনগুলোকে আবারও কমপক্ষে আট থেকে দশ দিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। ছুরনগুলো খুব ভালোভাবে পচে গেলে ডেগ থেকে তুলে নিয়ে একটি জল ভর্তি স্টিলের তৈরি বিশেষ এয়ার টাইটের পাত্রের মধ্যে রেখে পরবর্তীতে নিচ থেকে আগুনে তাপ দিতে হয়। এভাবে অনবরত ১০ থেকে ১২ দিন ফোটানো হয়। পাত্রের ওপরের দিকে একটা নল সংযুক্ত করা হয় এবং নলটির অপরপ্রান্ত আরেকটি পাত্রের সাথে সংযুক্ত করা থাকে।আগুনের তাপে ছুরন কাঠ সিদ্ধ হয়ে বাষ্পাকারে ওপরের নলে প্রবেশ করে এবং বাষ্পগুলো ঘনীভূত হয়ে অপর প্রান্তের একটা পাত্রের মধ্যে ফোটায় ফোটায় পড়তে থাকে। ঘনীভূত বাষ্প তরল হয়ে নির্দিষ্ট পাত্রে জমতে থাকে।এটিই আতর।
বিষয়টা অতোটা সহজ নয় তাই ব্যবসাটা আমার দাঁড়া করানো হলো না। বলবে বাঙালি বলেই আতরে ব্যবসাটা আমার হলো না।বলে রাখি ১০০ -১১০ কেজি কাঠ টুকরো থেকে ১০০ গ্রামের কাছাকাছি আতর পাওয়া যায়। আর উৎছিষ্ট কাঠ গুলো দিয়ে ধুপ তৈরি হয় , এই জন্যই বোধহয় আগরবাতি বলা হয়। ধুপ তৈরি কারখানা খোলার পয়সা আমার জোগাড় হলোনা। কোটি কোটি টাকা লোন করে লোপাট হয়ে যায় ধনী ব্যবসায়ীরা। আমরা লোন পাইনা। তুমি বলবে হয়তো “তোমার দ্বারা কিছুই হবেনা। কতো ব্যবসা করলে টিকলো কই।”
আতর ব্যবসার প্রেরণা পেয়েছিলাম আমি কোলকাতা এক বিখ্যাত দোকান থেকে।ইতিহাস বলে ১৮৫৬ সালে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ কলকাতায় এসেছিলেন । তাঁর সঙ্গেই শহর কলকাতায় বাড়তে থাকে আতরের চাহিদা। কিন্তু, আমি তা মানি না। ১৮২৮ সালে নাখদা মসজিদের কাছে এই দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । নিয়মিত বরাত আসত আতরের এই দোকানে ঠাকুরবাড়ি থেকে।ঠাকুরবাড়ির নাকি প্রিয় ছিল গোলাপ এবং জুঁই ফুলের গন্ধ। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শাহিদ সুরাবর্দি, পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান-সহ বহু নেতারা , নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের বংশধর, প্রয়াত রাজ্যপাল নুরুল হাসান এবং গনি খান চৌধুরীর পরিবার সাবেক আতরের একনিষ্ঠ খরিদ্দার। জাকারিয়া স্ট্রিটে থাকাকালীন বিড়লা পরিবারেও নিয়মিত যেত চন্দন সুগন্ধি ।খুদা বক্সের এই দোকান ছিলো আমার প্রেরণা ।বেঙ্গল কেমিক্যালের কাছেই ছিল বিশাল ফুল বাগান। সেই ফুল থেকেই এ শহরে আতর তৈরি হত।
আতর নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে মানুষের। আতর নাকি ইসলাম ধর্মের মানুষেরাই ব্যবহার করেন। এগুলো শুধু মৃত মানুষের প্রসাধন। অনেক এর ধারণা ভারতের মুঘল আমলে আতর ব্যবহার শুরু হয়েছে । এসব গুলো ভুলে ধারণা। ইসলাম ধর্মে প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই আতর ব্যবহার হতো।প্রাচীনকালে মিশরীয়রা সুগন্ধী তৈরীতে প্রসিদ্ধ ছিল। বিভিন্ন গাছপালা এবং ফুল থেকে নির্যাস সংগ্রহ করে বিভিন্ন তেলের সাথে মিশিয়ে আতর তৈরি করতেন।প্রাচীন ভারতেও যে আতর তৈরি করা হত ইতিহাসে তার প্রমাণ মিলেছে। আতর আসলে সুগন্ধি তেল যা বিশেষ পদ্ধতিতে হালকা তরলে পরিণত করা হয়। চরক সংহিতার মতো আয়ুর্বেদিক গ্রন্থে উল্লেখ আছে কীভাবে আতর তৈরি করতে হয়। উত্তরপ্রদেশের কানপুর আতরের জন্য বিখ্যাত। তবে বর্তমানে বিভিন্ন পারফিউম আর ডিওডোরেন্টের চাপে পড়ে ভারতের এই প্রাচীন সুগন্ধি ব্যবহারের প্রথা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।আল-হারামাইন মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় সুগন্ধি। বিস্ময়কর হলো আরবে গন্ধসার তেল, লোবান, আগরের সুগন্ধি তৈরির ইতিহাস বহু প্রাচীন। ক্রুসেডের সময় আরবদের কাছ থেকেই সুগন্ধির ব্যবহার শিখেছে ইউরোপীয়রা।কিন্তু আল-হারামাইন সুগন্ধির প্রবর্তক একজন বাংলাদেশি।
আতর বা ইতর , পারসিয়ান শব্দ। যার অর্থ হল অ্যারোমা বা সুবাস। সাধারণত ডিসটিলড (Destilled) পদ্ধতিতে অর্থাৎ বাষ্পীভূত করে আতর তৈরি করা হয়। কথিত আছে, পার্সিয়ান পদার্থবিদ ইবন সিনা প্রথম এই আতর তৈরি করেন। ফুলের পাপড়ি, চন্দন ও অন্যান্য ভেষজ মিশিয়ে এই সুগন্ধি তৈরি করা হয়।
বুঝলেতো আতর নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা আছে। যেমন আমাকে নিয়ে তোমার অনেক ভুল ধারণা আছে। যখন জীবন যাবনের জন্য নুন্যতম টাকাটা আয় করতে আমি কোঠর সংগ্রাম করছি। তখন তুমি ভাবলে আমি অন্য কোথাও টাকা খরচ করছি। চলে গেলে আমায় ছেড়ে ভুল বুঝে।আজ বছর পাঁচেক তো আমি অর্থের মুখ দেখেছি।তুমি দেখেছো কি অন্য কাউকে আমার সাথে আমার পাশে? আসলে তোমার ভালবাসাটা ছিলো রুচিশীল , মিষ্টি, জনপ্রিয় ডিওডোরেন্টের মতো কিন্তু স্থায়ীত্ব কয়েক ঘণ্টার। আমার ভালোবাসা আতরের মতো স্থায়ীত্ব টা অনেক বেশি।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন