মুম্বাই অফসোরে যখন বুবাই চাকরি পেয়েছিলো তখন ও ওর গ্রামে দূর্গা পূজা শুরু করেছিলো। বিদেশে চাকরি পাঠানো ব্যবসাটা তখন ও শুরু করেছিলো। অনেক টাকা। তাই বন্ধু বান্ধবদের সাথে নিয়ে ক্লাবে পূজা শুরু করছিলো ও। ভীষণ আনন্দ হয় ও যে কর্মকর্তা ঐ পূজার। এবছর পূজাটা কুড়ি বছর পড়লো। কিন্তু ও আসতে যেতে পারলো না পূজায়।
বুবাই এই নিয়ে পাঁচ বছর পূজা দেখতে পেলো না। যদিও সেই পাঁচ বছর আগে পূজাটা ওর নিজের জন্য,দেখা হয়নি । ওর সাথে পিউর রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে তখন। ও সেই বছর প্রথম বিদেশে চাকরি তে গেছে। বিয়ে করলে খরচ বাড়বে, বিশেষ করে পিউ মতো মর্ডান মেয়ের স্বামী হতে গেলে অনেক পয়সার মালিক না হলে চলে! পিউ স্বাদ আল্লাদ পুরণ করতেই বিদেশে চাকরি করতে হয়েছে ওকে।
মহালায় দিনেই সাইন অফ করে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছে গেস্ট হাউসে । পিউ ভিডিও কল। খুব খুশিতে ভরে উঠলো বুবাই এর মনটা। পূজায় কোথায় ঘুরতে যাবে সেই নিয়ে প্লানটা করবে বলে মনে করছিলো। ফোন ধরেই পিউ বললো” জার্মান থেকে মাসির ভাইপো আসছে, নীল ও আমার বন্ধু, বিয়ে করছি শুনেই আসছে। বলছে এরপর তো আমার সাথে ঘুরতে পারবে না। তাই ও এই পূজাটা আমার সাথে কাটাবে। তোমাকে নেওয়া যেতো কিন্তু তুমি তো ক্যাবলাকান্ত বলে দেবে আমি কুক। ক্যাটারিং এ কাজ করো শুনেই নাক সিটকাছিলো আমি বলেছি ও প্রজেক্ট ম্যানেজার। তাই সামনাসামনি দেখা না হওয়াই ভালো। তোমাকে দেখলে তো ওয়াটার মনে হবে না। যাইহোক আমার জন্য ঐ হিরা আঙটিটা আনছো তো। ”
বুবাই বললো ” না, পরের বারে নিয়ে যাবো
প্রমিস। ”
পিউ রেগে গিয়ে বললো ” বালের প্রমিম, রাখ। তোর কাছে টাকা শেষ তো। কে ক্লাবের ঠাকুর কেনা টাকা লাইটিং এর টাকা দিতে বলে ছিলো। আমার বেলায় উনার টাকা নেই, মা, বাবা বন্ধু বান্ধব বেলায় টাকা আছে। ভিখারি বাচ্চা একটা। ”
বুবাই শান্ত ভাবে বললো ” মুখ খারাপ করো না প্লিজ। ”
পিউ আরো খারাপ কথা বলতে শুরু করলো। বুবাই ফোন টা কেটে দিলো। সাথে সাথে এইচ আর এর ফোন ঢুকলো ওর ফোনে। স্যার ওকে ডাকলো। একটা লোকেশনে হঠাৎ করে নাইট কুক অসুস্থ হয়ে গেছে দিন সাত করে জন্য ওকে যেতে হবে। এর জন্য উপরি টাকা পাবে। নতুন জয়েন্ট করেছে ও। আর কিছুটা পিউর ওপর রাগ করে ও রাজী হয়ে গেলো কাজে যেতে। সাতদিন বলে দুই মাস হয়ে গেলো। পিউ ভাবলো হিরার আঙটি দেবে না বলে ও ফোন করছে না। আর ও অভিমানে ফোন করলো না। ঝগড়াটা এতোদূর চলে গেলো। ভাসাভাসা খবর এলো পিউ ডিভোর্স দেবে বুবাইকে।
বাড়িতে আর আত্মীয় স্বজনদের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ দেখাতে পারলো না বুবাই। ওদের আলাপ ফেসবুকে। বড়লোক বাপের শহরের মেয়ে পিউ। হাড় ভাঙা পরিশ্রম এর পরেও ওএম , সেফ থেকে অফিসারদের পা টিপে দিয়ে পদন্নোতি করা গ্রামের ছেলে বুবাই । কখনোই ওদের জুটি মানে না। ওদের কুল পুরোহিত তো বলেই দিয়েছিলো। এ মেয়ে সংসার করবে না। তবুও ও আইনি বিয়ে সেরে নিয়েছিলো সবার অমতে। ওর মা খবর পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছিলো ঠাকুর ঘরে ঢুকে, “আমার ছেলের রক্ত জল করা টাকা গুলো সব খরপোশ দিতে চলে যাবে , কি পাপ করেছি যে তুমি এমন সাজ দিচ্ছো আমায় ঠাকুর ..”
ঠাকুর বুবাই এর মায়ের প্রার্থনা শুনে ছিলো। খোরপোষ দিতে হয়নি বুবাইকে একটি টাকাও। তবে সে বছর থেকে বুবাই খুব কম দেশে ফেরে।কোন উৎসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে না,শুধু টাকা পাঠিয়ে দেয়। মোবাইলে ছবি দেখে, উৎসবের দিন গুলো উপভোগ করে। আজ দূর্গাপূজার ছবি দেখতে দেখতে ওর আঙুলটা থেমে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ও। তবে দূর্গা পূজা মিস করছে বলে না, পিউ কে মিস করছে বোঝা গেলো না। পিউ একটা ছবি পোস্ট করেছে। ছবিটা তুলেছে বুবাই চেনা একটা ছেলে সন্টু। নিরাপদ নয় ছেলেটা।
পিউ শেষ বার যখন ফোন করেছিলো তখন বলেছিলো ” আমি তোমার থেকে কোন দিন আর একটা পয়সা নেবো না। তোমাদের পড়া গায়ে একটা প্রবাদ আছে। ঘর ছাড়া ছেলেরা হয় বাদশা। আর মেয়েরা হয় ব্যেশা। আমি তোমার সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ছাড়ালাম। তবে তোমাকে ছাড়বো না। “”
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন