প্রসূন গোস্বামী

কবিতা - চোখহীন স্বাধীনতা

প্রসূন গোস্বামী

এই দেশে, দাদা, ভোরবেলা উঠে দেখি
সূর্যটা ঠিক উল্টো দিকে উঠেছে
পুরনো দিনের ক্যালেন্ডারে যেদিকে ছিল পূব
সেদিকে এখন পশ্চিমের উটকো ধুলো ওড়ে।

আমাদের পাড়ায় ক’দিন ধরে একটা লোক
খুব মন দিয়ে রজনীগন্ধার চারা পুঁতছিল।
সে নাকি ভালো লোক, বড়ই নিরীহ
তার একমাত্র অপরাধ, সে বড্ড বেশি নীরব ছিল।

গতকাল রাতে তাকে ধরে নিয়ে গেল রাষ্ট্র
বুট আর বন্দুকের দাপটে কাঁদল ডালিম গাছের পাতা।
হোর্ডিংয়ে ছাপা হলো, ‘আসল জঙ্গি’
দেশদ্রোহী, ঘুমন্ত সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর।

আর যে লোকটা রোজ বিকেলবেলায় বোমা বাঁধত
পাচনকাঠির মতো সরু আঙুলে, টিফিনের ফাঁকে
যে লোকটা বাজারের থলিতে পুরে আনত তাজা বারুদ
আর মুখ টিপে হাসত সিনেমার নায়কের মতো…

সে এখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার ফুল ফোটাচ্ছে
মাইকে তার কণ্ঠস্বর বাজছে গমগম করে
ঘোষণা করছে, ‘আমরাই ভালো, আমরাই মুক্তিদাতা’
তার হাতে এখন ফুল, গলায় চন্দনের মালা।

আসলে স্বাধীনতা একটা পুরোনো ছেঁড়া প্যান্টের মতো
যার এক পকেটে ছিল পাঁচ টাকার নোট আর একটা জিলিপি
অন্য পকেটে ছিল দেশলাই আর কেরোসিনের গন্ধ।
আমরা এখন সেই ছেঁড়া প্যান্ট পরেই দৌড়াই।

চোখ বেঁধে দৌড়াই, মুখ ঢেকে হাসি।
জঙ্গিকে বলি ভালো, ভালোকে বলি জঙ্গি
নইলে এই জঙ্গি দেশে টিকে থাকা বড় দায়।
বড় দায়, স্রেফ বেঁচে থাকার এই নোংরা নাটক।

আর যারা সত্যি ভালো, যারা কেবলই গোলাপ ফুল ফোটায়
তাদের জন্য বরাদ্দ শুধু অন্ধকার জেলখানা
অথবা ফুটপাথের কোনো এক সস্তা কাফন।
এটাই এখন আমাদের নতুন সংবিধানে লেখা।

আমি কেবল চেয়ে দেখি, আমার পুরোনো বাড়ির বারান্দা থেকে
একটা চেনা কাক উল্টো দিকে উড়ে যাচ্ছে
তার ঠোঁটে একটা শুকনো রুটি, আর চোখে রাজ্যের অবিশ্বাস।
এই দৃশ্য দেখতে দেখতেই আমাদের দিন কাটে।
দিন কাটে, দাদা, চোখহীন স্বাধীনতার দিনে।

পরে পড়বো
৩৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন