সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কবিতা - স্বাধীনতা : স্বপ্ন ভঙ্গ ও নতুন স্বপ্ন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বাবা বলেছিলেন, উনিশ শো সাতচল্লিশের পনেরোই অগাস্ট
ভারত স্বাধীন হল, আর আমরা আমাদের দেশ
হারালাম
স্পষ্ট মনে পড়ে বাবার অপমানিত মুখ আর
ধরা ধরা গলা
আমি তখন তেরো, কথাটার মর্ম ঠিক বুঝিনি
মন ছটফট করছিল বাইরের হুল্লোড়ে গলা মেলাবার জন্য
প্রভাত ফেরীতে বাজছিল বিউগল, পাশের বস্তির বাচ্চারা
কী নিয়ে চেচামেচি করছিল কে জানে
মহাত্মা গান্ধী এই শহরেরই কোথায় খাটিয়ায় শুয়ে আছেন
কে জানি বলছিলেন, তিনি খুব কাঁদছেন
আমার মা-ও ছলছলে চোখে বলে উঠলেন, চাঁপা ফুলের
গাছটা আমি নিজের হাতে লাগিয়েছি
এ বছর সে গাছে ফুল ফুটবে, আমি আর দেখতে পাব না ?
লাহোর না এলাহাবাদ, কোন শহরের হোটেলের ঘরে বসে
গরমে ঘামতে ঘামতে র‍্যাডক্লিফ নামের এক ইংরেজ
কাটাকুটি খেলছেন ভারতের মানচিত্র নিয়ে
তিনি আমার মায়ের চাঁপাফুল গাছের কথা কিছুই জানেন না
ঝড়ে উড়ে যাবার মতন এক একটা গ্রাম চলে যাচ্ছে
সীমান্তের এপারে ওপারে
কারুর রান্নাঘর গিয়ে পড়ল নতুন দেশে, কোন গৃহস্থের গোয়ালঘর রয়ে গেল পুরনো রাজ্যে
অনেক নদীও দু’ভাগ হয়ে গেল
লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন তছনছ হয়ে গেল
স্বাধীনতার মূল্য দিতে গিয়ে পাঞ্জাব ও বাংলা, যেখানকার ছেলেরা জীবন পণ
সবচেয়ে বেশি লড়াই করছে দেশের মুক্তির জন্য
সেই দুটো রাজ্যই কেটে ফেলে বইয়ে দেওয়া হল রক্তগঙ্গা!

পরে পড়বো
১৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন