আল মাহমুদ

কবিতা - দিগবিজয়ী খঞ্জরাজা

আল মাহমুদ

ঊষার প্রার্থনার উচ্চকিত হাতের আঙুলে শিরশিরানির মত
প্রবেশ করল উদয়কালীন আলোর ঝলকানি। কবিত্ব নয়
বীরত্বই সৃজনরীতির নিয়ামক। ওঠো, আক্রমণ করো
নিশ্চিত জয়ের জন্যে সকালের রোদ্রের মত অশ্বারোহী হও।

একটি ময়দানে অসংখ্য নিষ্প্রাণ মানবদেহের মধ্যে আমার ঘোড়া লাফিয়ে উঠে
জানান দিল আমিই সেই খঞ্জবীর আমীর তৈমুর।
হত্যার তৃপ্তিতে আমার দাড়ি ঘর্মাক্ত। আমার বর্মে
শত্রুদের প্রতিহত তীরের শব্দ। বাহুতে
বীরের সদগতির জন্য মায়ের দোয়াঙ্কিত লোহার বলয়।

ঝাঁক বেঁধে মৃতভোজী শকুনেরা নেমে আসছে পরাজিত লাশের ওপর।
নতুন ব্যুহ রচনা করে বহুদূরে স্থিরপদে দাঁড়িয়ে আছে
আমার অনুগত সৈনিকেরা ইঙ্গিতের অপেক্ষায়। আমার ভায়েরা।

আবার হত্যা হবে। পৃথিবীর ভারসাম্যের জন্যে চাই কিছু প্রাণের উচ্ছেদ।
কবিত্বের কাতরানি আর চোখের পানিতে বাষ্পরুদ্ধ মানচিত্রের ওপর
দ্যাখো গ্রীবা বাঁকিয়ে লাফাচ্ছে তৈমুরের ঘোড়া।
দিগবিজয়ী খঞ্জরাজা আমীর তৈমুর।

কে তোলে সন্ধির প্রস্তাব? কারা করে শান্তির উদ্যোগ?
নিশ্চয়ই সেখানে আছে শেয়ালমুখো বণিক আর গাধার মুখোশ পরা ধূর্ত বাজারীরা।
তারা আরও শতেক বছর তাদের পুঁজির বিচরণ চায়। নির্বিবাদে
মানুষের রক্তের স্বাদ চাখতে শেয়ালের বদনে দ্যাখো হরিণের চোখ
কেমন চকচক করছে।

কেটে ফেল এদের সবগুলো মাথা। কাত্‌লে আম।

আমি খোঁড়া রাজা আমীর তৈমুর।

মানুষের নতুন মানবিক উদ্ভাবনার জন্যে, ছন্দ ও নতুন কবিতার জন্যে চাই
যুদ্ধ। চাই মানবরূপী দানবের উচ্ছেদ।

হত্যা হোক।
মানুষের নতুন সৃজনরীতির জন্য শতবর্ষের নৈশব্দের মধ্যে
কেবল আমি। কেবল একটিমাত্র অশ্বখুরের শব্দ।
শুনতে পাও? অক্ষমতার বিরুদ্ধে একমাত্র ঘোড়সোয়ার কে যায়?
আমি তোমাদেরই খঞ্জবীর আমীর তৈমুর।

১৪৩
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন