গুডবাই ইন্ডিয়া
তসলিমা নাসরিন
একটা কথা আমার মুখ থেকে শুনবে বলে সবাই বসে আছে।
একটা বাক্য শুনবে বলে বসে আছে,
দুটো শব্দ শুনবে বলে,
দুটো মাত্র শব্দ।
আতঙ্কে,
ভয়ে,
বিবর্ণ হয়ে,
কাঠ হয়ে,
যেন বলে ফেলি একদিন, গুডবাই ইন্ডিয়া।
দিন যাচ্ছে,
সপ্তাহ শেষ হচ্ছে,
মাস পেরোচ্ছে, মাসের পর মাস।
আমার মুখের দিকে কয়েকশ রক্তচক্ষু
কয়েকশ বছর আগে বন্ধ হয়ে থাকা পুরোনো ঘড়ির কাঁটার মতো স্থির,
ডানে বামে ওপরে নিচে সর্বত্র
বাদুরের কানের মতো উৎসুক কান,
জগতের সবচেয়ে মধুর শব্দদ্বয় শুনবে বলে,
গুডবাই ইন্ডিয়া।
আমি এখনও উচ্চারণ করছি না শব্দদুটো,
এখনও বিশ্বাস করছি সত্যে।
সততায়।
বিশ্বাস করছি সৌন্দর্যে।
শিল্পে।
সহমর্মিতায়।
যেদিন আমাকে উচ্চারণ করতে হবে শব্দদুটো,
যদি আমাকে করতেই হয়–
দুচারটে ঘৃণাই যেদিন উথলে উঠে সুনামি ঘটাবে,
যদি ঘটায়ই–
মনুষ্যত্ব পায়ে পিষে ধর্মান্ধতার নিশান
ওড়াবে মানুষ শহর নগর জুড়ে যেদিন–
যেদিন আমারই রক্তের ওপর আমি লাশ হয়ে ভেসে থাকবো,
ঠুকরে খাবে একপাল শকুন আমার ফুসফুস–
যেদিন আমাকে উচ্চারণ করতেই হবে শব্দদুটো,
সেদিন যেন গভীর রাত্তির হয়,
আমাকে যেন দেখতে না হয় দেশটির মুখ,
দেখতে না হয় দুপুরের শান্ত পুকুর,
আমগাছতলা, উঠোনের রোদ্দুর,
যেন ভুলে যাই দেশটির সঙ্গে কখনও আমার
কোনও আত্মীয়তা ছিল।
আমি এখনও উচ্চারণকরছি না শব্দদুটো,
এখনও প্রাণপণে পাথর করে রেখেছি জিভ।
আমি উচ্চারণ করতে চাইছি না
এখনও চাইছি ভালোবাসার জয় হোক।
একটা বাক্য শুনবে বলে বসে আছে,
দুটো শব্দ শুনবে বলে,
দুটো মাত্র শব্দ।
আতঙ্কে,
ভয়ে,
বিবর্ণ হয়ে,
কাঠ হয়ে,
যেন বলে ফেলি একদিন, গুডবাই ইন্ডিয়া।
দিন যাচ্ছে,
সপ্তাহ শেষ হচ্ছে,
মাস পেরোচ্ছে, মাসের পর মাস।
আমার মুখের দিকে কয়েকশ রক্তচক্ষু
কয়েকশ বছর আগে বন্ধ হয়ে থাকা পুরোনো ঘড়ির কাঁটার মতো স্থির,
ডানে বামে ওপরে নিচে সর্বত্র
বাদুরের কানের মতো উৎসুক কান,
জগতের সবচেয়ে মধুর শব্দদ্বয় শুনবে বলে,
গুডবাই ইন্ডিয়া।
আমি এখনও উচ্চারণ করছি না শব্দদুটো,
এখনও বিশ্বাস করছি সত্যে।
সততায়।
বিশ্বাস করছি সৌন্দর্যে।
শিল্পে।
সহমর্মিতায়।
যেদিন আমাকে উচ্চারণ করতে হবে শব্দদুটো,
যদি আমাকে করতেই হয়–
দুচারটে ঘৃণাই যেদিন উথলে উঠে সুনামি ঘটাবে,
যদি ঘটায়ই–
মনুষ্যত্ব পায়ে পিষে ধর্মান্ধতার নিশান
ওড়াবে মানুষ শহর নগর জুড়ে যেদিন–
যেদিন আমারই রক্তের ওপর আমি লাশ হয়ে ভেসে থাকবো,
ঠুকরে খাবে একপাল শকুন আমার ফুসফুস–
যেদিন আমাকে উচ্চারণ করতেই হবে শব্দদুটো,
সেদিন যেন গভীর রাত্তির হয়,
আমাকে যেন দেখতে না হয় দেশটির মুখ,
দেখতে না হয় দুপুরের শান্ত পুকুর,
আমগাছতলা, উঠোনের রোদ্দুর,
যেন ভুলে যাই দেশটির সঙ্গে কখনও আমার
কোনও আত্মীয়তা ছিল।
আমি এখনও উচ্চারণকরছি না শব্দদুটো,
এখনও প্রাণপণে পাথর করে রেখেছি জিভ।
আমি উচ্চারণ করতে চাইছি না
এখনও চাইছি ভালোবাসার জয় হোক।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৭১ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন