রেটিনোপ্যাথি

তসলিমা নাসরিন তসলিমা নাসরিন

দুশ্চিন্তা কোরো না,
দুশ্চিন্তা করলে তোমার রক্তচাপ বেড়ে আকাশ ছোবে,
দুশ্চিন্তা করলে তুমি নির্ঘাত মরবে।
চিকিৎসক বারবারই সাবধানবাণী আওড়াচ্ছেন।

কিন্তু কী করে দুশ্চিন্তামুক্ত হবো এই অজ্ঞাতবাসে,
একটা স্বাধীনচেতা মানুষকে জন্তুর মতো তুলে এনে
আচমকা খাঁচায় বন্দি করলে কী করে দুশ্চিন্তামুক্ত হবে সে!
খাঁচা থেকে আদৌ কোনওদিন মুক্তি পাবে কি না,
মানুষের কোলাহলে মানুষের মতো কোনওদিন
জীবনখানি যাপন করতে পারবে কি না,
জানতে না পারলে দুশ্চিন্তামুক্ত কী করে হবে সে!
আলোর মানুষেরা কতদিন পারে অন্ধকারে
অন্ধের মতো সাঁতরাতে!

আমার শরীরে তীরের মতো বিঁধে রয়েছে দুশ্চিন্তা,
যতক্ষণ ওই খাঁচা থেকে মুক্তি নেই, ততক্ষণ তীর থেকেও নেই।
চিকিৎসক আজ গম্ভীর মুখে বলে দিলেন,
দুশ্চিন্তা থাবা দিয়ে ধরেছে আমার দৃষ্টিশক্তি,
দুশ্চিন্তা আমাকে উপহার দিয়েছে দূরারোগ্য রেটিনোপ্যাথি।

তীরন্দাজদের উদ্দেশেবলি,
তোমাদের কালো কুৎসিত অন্ধকার আমার আলো কেড়ে নিয়েছে,
আমার চোখদুটো ফেরত দাও বাবুরা,
আশ্রয় চেয়ে কেঁদেছিলাম বাবুরা, আমি আশ্রয় চাই না,
দেশ ছিনিয়ে নিতে চাও আমার হৃদয় থেকে, নাও।

আমার আলোটুকু আমাকে ফেরত দাও বাবুরা।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৯২ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন