হ্যাঙওভার
শামসুর রাহমান
(মাহমুদুল হক প্রিয়বরেষু)
কিছুই খাবো না আজ, যে-কোনো আহার্যে ভয়ানক
অরুচি আমার।
কাল সারারাত আমি তারাস্রোত আর এক একর অন্ধকার
আকণ্ঠ করেছি পান, রাত্রিকে নিয়েছি শুষে; আজ
আমাকে বিরক্ত করবার কোনো মানে নেই, দ্যাখো
স্বস্তিতে কোথাও ব’সে থাকা দায়। একটি রাত্তির
স্মৃতিতে কেবলি দিচ্ছে হানা, যে-সৌন্দর্য চেতনাকে
নিমেষে ঝলসে দেয়, তাকে পান ক’রে সংজ্ঞা প্রায়
লুপ্ত হয়েছিলো,
মনে পড়ে। মনে পড়ে কার শরীরের স্মিত অববাহিকায়
চাঁদ উঠেছিলো আমি কিরণ করেছি পান কাল সারারাত।
রাত্রি
গ্রীবা
চোখ
হাত
চুল
একটি কাচের পাত্রে তরলিত কেমন সোনালি, মনে পড়ে-
একটি চুমুকে সব পান ক’রে কোথায় দাঁড়িয়ে এলেবেলে
কি-যে
কাকে
সামনে
রেখে আস্তে
উচ্চারণ ক’রে আরেকটু জ্যোৎস্না, গাছগাছালির
সবুজাভ রেশমি ধারা পান করেছিলাম রাত্তিরে,
পুরোপুরি নয়, শুধু একটু একটু মনে পড়ে, মনে পড়ে।
কাল রাত বড়ো বেশি খাপছাড়া ছিলো নাকি? দাঁড়াও ইয়ার,
স্মরণ করতে দাও, এই তো পড়ছে মনে, চিত্রিত দেয়ালে
পিঠ রেখে
কাঁদ ছিলো কেউ, তাকে নারী ব’লে শনাক্ত করাটা
ছিলো না মুশকিল;
শুধু নারীরাই
অমন কাঁদতে জানে, তার
গভীর চোখের জল ঝর্নার মতন নেমে গেলো তৃষাতুর
মসৃণ আমার কণ্ঠনালী বেয়ে। দেখি ভীষণ কর্কশ
একদল লোক
গালমন্দ দিতে দিতে, খিন্তির প্রচুর থুতু ছিটোতে ছিটোতে
কবরে শুইয়ে দিলো হেলায় তাদের,
যাদের আস্তানা ছিলো আমার নিজের
হৃদয়ের কাছে।
নিমেষে সেসব সদ্য কবর চৌচির, লাশগুলি গুচ্ছ গুচ্ছ
নীল মুক্তো হ’য়ে ফের কেমন মদিরা হ’য়ে যায়,
পান করে বুঁদ হয়ে যাই।
পূর্বপুরুষের কিছু স্মৃতির অস্পষ্ট ঝোপঝাড়ে
নিঃসঙ্গতা বোধ বাড়ে। একটি রাত্তির
এখনো বুকের মধ্যে থরথর করে। একজন, তার মুখ
বিষণ্ণ সুন্দর,
আমাকে এড়িয়ে যেতে চেয়ে মোমবাতির মতন গ’লে যায়-
নিশীথসমেত
গলিত মোমের বিন্দু পান ক’রে বুঁদ হয়ে যাই, বিন্দুগুলি
এখনো বুকের মধ্যে থরথর করে। গ্লাস থেকে
শূন্যতা উপচে পড়ে, বুঁদ হয়ে থাকি, তার বসে-থাকা, তার
আসা-যাওয়া পান ক’রে বারবার বড়ো বেশি বুঁদ হয়ে যাই;
টলে পড়ে যেতে যেতে আবার সামলে নিই বিব্রত অস্তিত্ব।
রক্তিম কাদায় ক্রল করতে করতে হাঁটু আর
কনুই আহত, অবসন্ন;
বিশ শতকের প্রায় অন্তিম গোধূলি পান ক’রে
ক্ষয়ের ভাটিতে ভেসে যাচ্ছি ক্রমাগত বুঁদ হয়ে, নিরুপায়।
কিছুই খাবো না আজ, যে-কোনো আহার্যে ভারি অরুচি আমার।
কিছুই খাবো না আজ, যে-কোনো আহার্যে ভয়ানক
অরুচি আমার।
কাল সারারাত আমি তারাস্রোত আর এক একর অন্ধকার
আকণ্ঠ করেছি পান, রাত্রিকে নিয়েছি শুষে; আজ
আমাকে বিরক্ত করবার কোনো মানে নেই, দ্যাখো
স্বস্তিতে কোথাও ব’সে থাকা দায়। একটি রাত্তির
স্মৃতিতে কেবলি দিচ্ছে হানা, যে-সৌন্দর্য চেতনাকে
নিমেষে ঝলসে দেয়, তাকে পান ক’রে সংজ্ঞা প্রায়
লুপ্ত হয়েছিলো,
মনে পড়ে। মনে পড়ে কার শরীরের স্মিত অববাহিকায়
চাঁদ উঠেছিলো আমি কিরণ করেছি পান কাল সারারাত।
রাত্রি
গ্রীবা
চোখ
হাত
চুল
একটি কাচের পাত্রে তরলিত কেমন সোনালি, মনে পড়ে-
একটি চুমুকে সব পান ক’রে কোথায় দাঁড়িয়ে এলেবেলে
কি-যে
কাকে
সামনে
রেখে আস্তে
উচ্চারণ ক’রে আরেকটু জ্যোৎস্না, গাছগাছালির
সবুজাভ রেশমি ধারা পান করেছিলাম রাত্তিরে,
পুরোপুরি নয়, শুধু একটু একটু মনে পড়ে, মনে পড়ে।
কাল রাত বড়ো বেশি খাপছাড়া ছিলো নাকি? দাঁড়াও ইয়ার,
স্মরণ করতে দাও, এই তো পড়ছে মনে, চিত্রিত দেয়ালে
পিঠ রেখে
কাঁদ ছিলো কেউ, তাকে নারী ব’লে শনাক্ত করাটা
ছিলো না মুশকিল;
শুধু নারীরাই
অমন কাঁদতে জানে, তার
গভীর চোখের জল ঝর্নার মতন নেমে গেলো তৃষাতুর
মসৃণ আমার কণ্ঠনালী বেয়ে। দেখি ভীষণ কর্কশ
একদল লোক
গালমন্দ দিতে দিতে, খিন্তির প্রচুর থুতু ছিটোতে ছিটোতে
কবরে শুইয়ে দিলো হেলায় তাদের,
যাদের আস্তানা ছিলো আমার নিজের
হৃদয়ের কাছে।
নিমেষে সেসব সদ্য কবর চৌচির, লাশগুলি গুচ্ছ গুচ্ছ
নীল মুক্তো হ’য়ে ফের কেমন মদিরা হ’য়ে যায়,
পান করে বুঁদ হয়ে যাই।
পূর্বপুরুষের কিছু স্মৃতির অস্পষ্ট ঝোপঝাড়ে
নিঃসঙ্গতা বোধ বাড়ে। একটি রাত্তির
এখনো বুকের মধ্যে থরথর করে। একজন, তার মুখ
বিষণ্ণ সুন্দর,
আমাকে এড়িয়ে যেতে চেয়ে মোমবাতির মতন গ’লে যায়-
নিশীথসমেত
গলিত মোমের বিন্দু পান ক’রে বুঁদ হয়ে যাই, বিন্দুগুলি
এখনো বুকের মধ্যে থরথর করে। গ্লাস থেকে
শূন্যতা উপচে পড়ে, বুঁদ হয়ে থাকি, তার বসে-থাকা, তার
আসা-যাওয়া পান ক’রে বারবার বড়ো বেশি বুঁদ হয়ে যাই;
টলে পড়ে যেতে যেতে আবার সামলে নিই বিব্রত অস্তিত্ব।
রক্তিম কাদায় ক্রল করতে করতে হাঁটু আর
কনুই আহত, অবসন্ন;
বিশ শতকের প্রায় অন্তিম গোধূলি পান ক’রে
ক্ষয়ের ভাটিতে ভেসে যাচ্ছি ক্রমাগত বুঁদ হয়ে, নিরুপায়।
কিছুই খাবো না আজ, যে-কোনো আহার্যে ভারি অরুচি আমার।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৭৪ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন