আমাকে প্রতীক্ষা করে যেতে হবে
শামসুর রাহমান
আমাকে প্রতীক্ষা করে যেতে হবে এই
একই জায়গায়
দীর্ঘকাল। এখানে কিছুই নেই, যা দেখে আমার
চক্ষুদ্বয় জুড়াবে; অথবা
কেউ নেই, যার সঙ্গে কথা বলে কাটবে সময়
ভালোয় ভালোয়।
সত্যের খাতিরে বলা যায়,-
আছে একজন; কিন্তু সে কখনো ভুলেও খোলে না
মুখ, ঠায় বসে থাকে
দৃষ্টি মেলে, সে দৃষ্টি এমন শূন্য, কখনো কখনো
মনে হয় ওর
দৃষ্টিশক্তি নেই, শুধু আছে চেয়ে থাকা।
কখনো মাটিতে বসে থাকি,
আবার কখনো উঠে দাঁড়াই সহসা, কিছুক্ষণ
পায়চারি করি, ফিরে এসে
বসি আগেকার জায়গায়, উঠে দাঁড়াই খানিক,
পুনরায় বসে পড়ি, এইমতো চলে
সারা বেলা, বলা যায়, এই খেলা আমার নিজেরই সঙ্গে।
আবার এমনও হয়, জুতোর ফিতেটা তাড়াতাড়ি
খুলে ফেলি, আস্তে সুস্থে ফের
বাঁধি, খুলি আর বাঁধি, বাঁধি আর খুলি;
তারপর জুতোটাই ছুঁড়ে
ফেলে দিই দূরে, ভাবি একটি কুকুর
থাকলে ভালোই হতো, কিছুটা জমতো এই জুতো জুতো খেলা।
যে আছে অদূরে একা
ভাবলেশহীন, তার উদ্দেশে কী যেন এলোমেলো
বলি প্রিয় সম্ভাষণ করে; কী আশ্চর্য, আমি নিজে
সে ভাষা বুঝি না, তবু বলে যাই একটানা বেশ
কিছুক্ষণ; স্তব্ধতাকে আঁচড়াই, মাঝে মাঝে নখ
খাই, দিই বাড়িয়ে নিজের গলা লোকটার দিকে।
ধূসর পথের দিকে চেয়ে থাকি মাঝে-মাধ্যে; কারো
আসার তেমন কোনো
আভাস কোথাও নেই। কোনো দূত এসে
এখানে রটাবে বার্তা, এই প্রত্যাশাকে
পাঠিয়ে দিয়েছি বলে অনেক আগেই। শুধু জানি বৃক্ষহীন
নদীহীন, রুক্ষ এ-প্রান্তরে প্রতীক্ষা করাই একমাত্র আশা।
একই জায়গায়
দীর্ঘকাল। এখানে কিছুই নেই, যা দেখে আমার
চক্ষুদ্বয় জুড়াবে; অথবা
কেউ নেই, যার সঙ্গে কথা বলে কাটবে সময়
ভালোয় ভালোয়।
সত্যের খাতিরে বলা যায়,-
আছে একজন; কিন্তু সে কখনো ভুলেও খোলে না
মুখ, ঠায় বসে থাকে
দৃষ্টি মেলে, সে দৃষ্টি এমন শূন্য, কখনো কখনো
মনে হয় ওর
দৃষ্টিশক্তি নেই, শুধু আছে চেয়ে থাকা।
কখনো মাটিতে বসে থাকি,
আবার কখনো উঠে দাঁড়াই সহসা, কিছুক্ষণ
পায়চারি করি, ফিরে এসে
বসি আগেকার জায়গায়, উঠে দাঁড়াই খানিক,
পুনরায় বসে পড়ি, এইমতো চলে
সারা বেলা, বলা যায়, এই খেলা আমার নিজেরই সঙ্গে।
আবার এমনও হয়, জুতোর ফিতেটা তাড়াতাড়ি
খুলে ফেলি, আস্তে সুস্থে ফের
বাঁধি, খুলি আর বাঁধি, বাঁধি আর খুলি;
তারপর জুতোটাই ছুঁড়ে
ফেলে দিই দূরে, ভাবি একটি কুকুর
থাকলে ভালোই হতো, কিছুটা জমতো এই জুতো জুতো খেলা।
যে আছে অদূরে একা
ভাবলেশহীন, তার উদ্দেশে কী যেন এলোমেলো
বলি প্রিয় সম্ভাষণ করে; কী আশ্চর্য, আমি নিজে
সে ভাষা বুঝি না, তবু বলে যাই একটানা বেশ
কিছুক্ষণ; স্তব্ধতাকে আঁচড়াই, মাঝে মাঝে নখ
খাই, দিই বাড়িয়ে নিজের গলা লোকটার দিকে।
ধূসর পথের দিকে চেয়ে থাকি মাঝে-মাধ্যে; কারো
আসার তেমন কোনো
আভাস কোথাও নেই। কোনো দূত এসে
এখানে রটাবে বার্তা, এই প্রত্যাশাকে
পাঠিয়ে দিয়েছি বলে অনেক আগেই। শুধু জানি বৃক্ষহীন
নদীহীন, রুক্ষ এ-প্রান্তরে প্রতীক্ষা করাই একমাত্র আশা।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৬০ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন