অচেনা কণ্ঠ
অচেনা কণ্ঠ
আতাউর রাহমান

গল্প - অচেনা কণ্ঠ

আতাউর রাহমান
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ভৌতিক, রহস্য

রাত তখন দুটো। শহরের আলো নিভে গেছে, কেবল রাস্তার ধারে একেকটা বাতি যেন নিঃশব্দ পাহারাদার। শয়নকক্ষে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন তমাল। ঘুম ঠিক আসে না কিছুদিন হলো—অজানা এক অস্থিরতা ঘিরে আছে তাকে।
হঠাৎই ফোন বেজে উঠল।
তমাল ঘড়ির দিকে তাকায়—২:০৫।
“এতো রাতে কে ফোন দেয়?”
মোবাইলে কোনো নাম নেই, অপরিচিত নম্বর। একটু দ্বিধা নিয়ে ধরলো।
“হ্যালো?”
“তুমি কি তমাল বলছো?”
কণ্ঠটা মেয়েলি, কিন্তু অদ্ভুত ঠান্ডা। যেন এক চুম্বকের মতো টান আছে।
“হ্যাঁ, কে আপনি?”
“তুমি আমাকে চেনো না। কিন্তু আমি তোমার খুব কাছের কেউ ছিলাম।”
তমাল ভ্রু কুঁচকে তাকায়, কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলে,
“দেখুন, আমি আপনার কথা কিছুই বুঝছি না। নাম বলুন তো?”
“আমি অনামিকা… মনে নেই তোমার?”
তমালের গলা শুকিয়ে যায়। “অনামিকা” নামটা শুনে মনে পড়ল বছর পাঁচেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত হওয়া এক মেয়ের কথা। মৃদু স্বভাব, গভীর চোখ, অল্প কথায় অনেক কিছু বলা যেত তার সঙ্গে। কিন্তু হঠাৎ একদিন হারিয়ে গিয়েছিল। কারও কোনো খোঁজ ছিল না।
“তুমি… তুমি কোথা থেকে ফোন করছো? এতদিন পরে?”
“তুমি কি জানো আমি কেন চলে গিয়েছিলাম?”
“না… কেউ জানত না। তুমি হঠাৎ—”
“কারণ, তুমি কথা রাখোনি তমাল।”
ফোনের ওপাশে কণ্ঠটা ধীরে ধীরে বদলে গেল—ঠান্ডা আর বিষণ্ণ গলায় যেন এক অভিমান জমেছে বছরের পর বছর।
“তুমি বলেছিলে, কেউ আমাকে কষ্ট দিলে তুমি রক্ষা করবে। অথচ… সেদিন আমি একা ছিলাম, তমাল। একা।”
তমালের হাত কাঁপে। গলা শুকিয়ে আসে।
“তুমি কি ঠিক আছো এখন? তুমি কোথায়?”
“আমি এখন সেখানে, যেখান থেকে ফিরে আসা যায় না। কিন্তু মাঝে মাঝে… কেউ কেউ কেবল কণ্ঠ হয়ে ফিরে আসে। শুধু একটা কথা বলার জন্য।”
“কি কথা?”
“ক্ষমা করে দিও না নিজেকে। কারণ তুমি চেষ্টা করোনি।”
বিকট এক শব্দ!
ফোনটা কেটে গেল। তমাল ছুঁয়ে দেখলো স্ক্রিন—কোনো কল রেকর্ড নেই। লিস্টেও নেই।
সে জানে, এটা কোনো স্বপ্ন ছিল না।
ঘরের বাতিটা জ্বালিয়ে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে তাকাল তমাল। অনেক বছর আগে যা সে ভুলে গিয়েছিল, আজ অচেনা এক কণ্ঠে আবার ফিরিয়ে দিল সেই অপরাধবোধ।

১১৪
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন