অপূর্ণ ইচ্ছা
অপূর্ণ ইচ্ছা
আতাউর রাহমান

গল্প - অপূর্ণ ইচ্ছা

লেখক: আতাউর রাহমান
প্রকাশ - রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫ ধরণ: জীবনবাদী, বিরহ

আতিক সাহেব আট বছর হলো বিয়ে করেছেন। তার সংসারে রয়েছে দুটি আদরের সন্তান—একটি ছেলে, আদি যার বয়স সাত বছর এবং , এবং একটি মেয়ে, অদিতি, মেয়েটির বয়স ৬ বছর। তিনি ঢাকা শহরের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। জীবনের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূরণ করার আশায় কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। পরিবারের বাকি সবাই থাকে তার গ্রামের বাড়ি। এত পরিশ্রম করার পরেও মাস শেষে তার পরিবার টানাটানির মধ্য দিয়ে চলে, খুব হিমশিম খেয়ে যায় আতিক সাহেব।

এরই মধ্যে গত তিন মাস ধরে তার বেতন বন্ধ। ঈদ আসছে, আর তিনি ভেবেছিলেন এ বছর সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কিনবেন, স্ত্রীকে ভালো একটি শাড়ি উপহার দেবেন, এবং সপরিবারে গ্রামে ঈদ উদযাপন করবেন। প্রতিবারের ঈদ পরিবার ছাড়া তাকে একাই করতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অর্থের অভাবে তার সেই স্বপ্ন গুলো যেন অপূর্ন থেকে গেলো।
অদিতি বাবার কাছে আবদার করে,“বাবা, এবার তুমি আমাদের সাথে ঈদ করবে ,তাই না বলো? তুমি আমার জন্য লাল রঙের একটি জামা আনবে?”
আতিক সাহেব মেয়ের কথা শুনে উত্তরে বলে হাঁ মা, বুকের ভিতর চাপা কষ্ট রেখে হাসেন তিনি । কিন্তু মনে মনে ভাবতে থাকেন কীভাবে এই চাহিদাগুলো পূরণ করবেন। অবশেষে, অনেক চিন্তাভাবনার পর তিনি তার এক সহকর্মীর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ধার নেন। সেই টাকায় তিনি স্ত্রী ও সন্তানের জন্য পোশাক কিনে ফেলেন, এবং অনেক কষ্টে তিনি তিন দিনের ছুটি নিয়েছেন।চাঁদরাতে আনন্দের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। গাড়ির মধ্যে উঠেই নানা রকমের চিন্তা করতে থাকে আতিক সাহেব, ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবে, কি কি খাবে? আরো কত কি?
দেখুন ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস কিন্তু নিয়তি যেন তার স্বপ্নগুলোকে চূর্ণবিচূর্ণ করার জন্য অপেক্ষায় ছিল। পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। ঈদের আনন্দে বাড়ি ফেরার পরিবর্তে, তার নিথর দেহ পড়ে থাকে রাস্তায়। তার অপূর্ণ স্বপ্ন, সন্তানদের আনন্দ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা, সবই ধূলিসাৎ হয়ে যায় নিমিষেই।
গ্রামের বাড়িতে অপেক্ষায় থাকা স্ত্রী ও সন্তানরা বারবার ফোন করে, কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। ঈদের সকালবেলা যখন খবর পৌঁছায়, তখন তাদের ঘরে আনন্দের বদলে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। কে দেখবে স্ত্রীর আহাজারি, দুই সন্তানের অশ্রুসিক্ত কান্নাকাটি। কাউকে যেন কোন ভাবেই থামানো যায় না, এ যেন এক শোকের রোল পড়ে গেল। অদিতি কান্না করে বলে, বাবাকে যদি আমি তোমাকে আসতে না বলতাম হয়তো আজ এমন হতো না।বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও, কতদিন তোমাকে, আমি দেখি না আজ দেখলাম তোমার নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে, আমি যে সইতে পারছি না বাবা। আমাকেও নিয়ে চলো না তোমার সাথে। ছোট্ট মেয়ে অদিতির কথা শুনে উপস্থিত জনতার চোখের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা কারো ছিল না। সবার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়লো।
জীবনের বাস্তবতায় অনেক স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। আতিক সাহেবের মতো কত মানুষ প্রতিনিয়ত এমন পরিস্থিতির শিকার হন, তার হিসাব কেউ রাখে না।

১২৬
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন