নিশাত ও রাহাতের সম্পর্ক এতদিন শুধুমাত্র এক রহস্যের ফাঁদে জড়িয়ে ছিল। কিন্তু এখন, তারা যে পথে এগিয়ে চলেছে, তা আর কোনো রহস্যের সমাধান নয়, বরং এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে। নিশাতের অতীতের অন্ধকার, যে ছায়ায় সে কখনোই বেরিয়ে আসতে পারেনি, আজ সে শিকার হতে চলেছে। তার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে এমন এক অন্ধকার, যা তাকে শুধু নিজের অতীতই নয়, পুরো পৃথিবীকে নতুন করে দেখা শেখাবে।
একদিন, নিশাত ও রাহাত গভীর রাতে শহরের একটি নির্জন কোণে পৌঁছায়। নিশাত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে, বাতাসের মধ্যে কিছু অদ্ভুত গন্ধ অনুভব করতে পারে। ‘‘তুমি কি জানো, নিশাত, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ কী?’’ রাহাত হঠাৎ বলল। নিশাত তার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। ‘‘কি বলছো তুমি?’’ নিশাত জিজ্ঞেস করল।
রাহাত কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল, ‘‘আমার জীবনেও একসময় এমন ছিল। হয়তো আমি জানতাম না, কিন্তু সত্যিটা কখনো না কখনো বেরিয়ে আসে। তোমার জীবনের একটা অংশ, তোমার অতীত, যা আমি জানি না, সেটা যদি বেরিয়ে আসে, তা-ই হয়তো তোমার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াবে।’’
নিশাত রাহাতের দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত চুপ থাকল। ‘‘তুমি কি ভাবছো, আমি কিছু লুকাচ্ছি?’’ তার গলা কাঁপছিল। ‘‘না, নিশাত, আমি জানি না তোমার অতীত কী, কিন্তু তুমি জানো, আমি তোমার পাশে আছি, যা কিছুই হোক না কেন।’’ রাহাত তার হাত ধরে বলল। নিশাত তার চোখে এক ধরনের অদ্ভুত আশঙ্কা দেখতে পেল। ‘‘তুমি কি বিশ্বাস করো, আমি কখনো তোমাকে আঘাত করতে পারব?’’ নিশাত বলল।
‘‘না, নিশাত। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু জানো, অনেক কিছুই তোমার নিয়ন্ত্রণে নেই। এমন কিছু সত্যি হতে পারে, যা তুমি জানলে হয়তো ভয় পাবে।’’ রাহাত গভীরভাবে নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল। নিশাত চুপ করে রাহাতের হাতটা নিজের হাতে ধরল। তার মনটা অবিশ্বাস্যভাবে উথাল-পাথাল হয়ে উঠছিল।
ঠিক তখনই, নিশাতের মোবাইল ফোনের স্ক্রীনে আবার সেই অচেনা নাম্বারটি আসল। ফোনটি রিসিভ করার আগেই রাহাত নিশাতকে থামিয়ে বলল, ‘‘এটা আবার সেই ফোন নয় তো?’’ নিশাত নীরব হয়ে ফোনটি রিসিভ করল। অপর প্রান্ত থেকে সেই রহস্যময় কণ্ঠ ভেসে উঠল, ‘‘তুমি আমাকে কি বুঝতে পারছো, নিশাত? এবার তোমার সব কিছুই প্রকাশ হয়ে যাবে।’’ নিশাত শিহরিত হয়ে গেল, ‘‘ক-কী চাও তুমি?’’
‘‘আমি চাও, তুমি নিজে থেকে বেরিয়ে এসো। তাতে তোমার এবং রাহাতের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত হবে। তবে মনে রেখো, তোমার জীবন হবে নরক, যদি তুমি এই চক্র থেকে বেরিয়ে না আসো।’’ রহস্যময় কণ্ঠটা আবার জানিয়ে দিল।
ফোনের পর্দা খালি হয়ে গেল। নিশাত আর রাহাত একে অপরের দিকে তাকাল। নিশাতের চোখে এক ধরনের বিভ্রান্তি ও ভয়ের ছাপ ছিল। রাহাত নিশাতকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল, ‘‘তুমি জানো না, কিন্তু আমি তোমাকে কখনোও ছেড়ে দেব না। যদি সত্যিই তোমার জীবনে এমন কিছু থাকে, যা আমাকে জানানো দরকার, আমি সেটা জানব।’’ নিশাত একভাবে তাকিয়ে রাহাতের কথা শুনল।
সেই রাতেই রাহাত এবং নিশাত একত্রে সেই স্থানে চলে গেল, যেখানে প্রথমবার ফোনের মাধ্যমে তাদের সামনে নতুন এক রহস্যের জন্ম হয়েছিল। নিশাতের মনে ছিল এক অদ্ভুত সংশয়—কি সাপোর্ট দিতে পারবে রাহাত তাকে? অথবা তার অতীত তাকে কোথাও ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, যেখানে সে একেবারে হারিয়ে যাবে?
নিশাত জানত, তার অতীতের সুরক্ষা ছিনতাই হওয়া শুরু হয়ে গেছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাহাতকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে হবে, কিন্তু তার মনের মধ্যে আরও এক দুঃস্বপ্ন ছিল—রাহাত সত্যিই তার দিকে আস্থা রাখবে কিনা।
এদিকে, রাহাত বুঝতে পারছিল, নিশাতের অতীত তার কাছে কোন এক রহস্যই। তার সাথে থাকতে থাকতে অনেক কিছুই ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছিল, তবে সে জানত, একসময় তাকে এমন কিছু সত্যি সামনে আনতে হবে, যা তার প্রেমিকার জন্য কোনোভাবেই সহজ হবে না। কিন্তু এই ঘূর্ণির মধ্যে কিছু একটা ছিল—এক ধরনের ঝুঁকি, যা তাকে নিতে হবে, আর সেই ঝুঁকি হয়তো তাদের সম্পর্কের এক নতুন মোড় নিয়ে আসবে।
যখন তারা সেই নির্জন স্থানে পৌঁছাল, নিশাত থেমে গিয়ে বলল, ‘‘রাহাত, আমি জানি, এখন তোমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার দিকটুকু দেখাতে হবে। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, কিন্তু জানো, ভয় আমার মাঝে সবসময় ছিল।’’ রাহাত নিশাতের হাত চেপে ধরে বলল, ‘‘যা কিছুই হোক, নিশাত, আমরা একসাথে আছি, এবং এই যাত্রা একাই তো চলে আসিনি। তুমি আমাকে বলো, আমি তোমার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত।’’
একেবারে গভীর রাতে, তারা উভয়েই জানত, তাদের সামনে যে পথ আছে, তা কোনও এক রহস্যময় পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। আর সেটা কী হবে, তা কেবল সময়ই বলবে।
(চলবে…)
তোমার ছোঁয়ায় বেঁচে থাকি ৩


০
০
সেভ বা রিয়েক্ট করার জন্য লগইন করে নিন!
৯৯
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন