তোমার ছোঁয়ায় বেঁচে থাকি ৪
তোমার ছোঁয়ায় বেঁচে থাকি ৪
আনিসুর রহমান আনসারী

গল্প - তোমার ছোঁয়ায় বেঁচে থাকি ৪

আনিসুর রহমান আনসারী
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫ ভালোবাসা

‎নিশাত আর রাহাত একে অপরকে জানার পর, তাদের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে, তবে কিছু একান্ত অজানা সত্য তাদের মনে অসীম উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। নিশাতের অতীত, যে রহস্য ঘিরে তাকে আজও ঘিরে রেখেছে, তা এখন এক অজানা শত্রু হয়ে উঠেছে। সে জানে, একদিন না একদিন সত্যি বের হয়ে আসবে। কিন্তু, সেই সত্যের সামনে এসে দাঁড়ানোর সময় যেন প্রস্তুত নয় সে। এই পথের শেষ কোথায়, সে নিজেও জানে না। তবে রাহাতের সঙ্গে থাকা তাকে কিছুটা স্বস্তি দেয়—এখনও তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য বন্ধন তৈরি হয়েছে, যা তাদের একে অপরের পাশে রাখতে বাধ্য করছে।

‎একদিন, নিশাত ও রাহাত নির্জন পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছায়, যেখানে তাদের দৃষ্টির বাইরে কোনো মানুষ নেই। রাহাত এখানে এসেছে কারণ সে জানে, এখানে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী কেউই পৌঁছাবে না। নিশাতের ভেতর কিছু একটা গুমোট অনুভূতি ছিল। তার শরীর জড়িয়ে ধরে বসে থাকা বাতাসে সে একটা অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করছিল।

‎‘‘এখানে আসার কারণটা জানো?’’ রাহাত নিশাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল। ‘‘এখানে আসার কারণ, একদিন আমি এখান থেকে পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পালাতে গিয়ে ভয় পেয়েছিলাম, রাহাত। আমি জানতাম, কোথাও না কোথাও একটা ভুল হবে, আর সে ভুলের জন্য আমাকে পিছু টানতে হবে।’’ নিশাত চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলল।

‎রাহাত তার পাশে বসে, নিশাতের হাতটি নিজের হাতে নিয়ে বলল, ‘‘তুমি জানো, নিশাত, আমার জীবনে এমন অনেক কিছু ছিল, যার সঙ্গে আমি জড়িয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এসব কিছুর মধ্যে একটাই কথা বলব, আমি যদি তোমাকে একবার বিশ্বাস না করতাম, তাহলে এই পথ চলা কখনোই শুরু হতে পারত না। তোমার অতীত তোমার জীবনের অংশ, কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি। আর যতদিন না তুমি নিজের অতীতের সাথে একে অপরকে মেলানোর শক্তি পাও, ততদিন আমি এখানে আছি।’’

‎তবে, নিশাত মনে মনে জানত, রাহাত যতই বলুক, তার অতীত তাকে একসময় না একসময় টানতে আসবে। সেই অতীতের ছায়া, যার কারণে একসময় তার সব কিছু তছনছ হতে পারে। কিন্তু রাহাতের কথায় একটু শান্তি পায় সে, হয়তো সময়ই বলে দেবে, তাদের সম্পর্কের এই যাত্রা কোন পথে চলে যাবে।

‎এদিকে, রাহাত নিঃশব্দে ভাবছিল। নিশাতের জীবনের রহস্য আর তার অতীতের সত্য কিছু না কিছু বেরিয়ে আসবেই। কিন্তু তার মন ছিল বিভ্রান্ত—কীভাবে সে নিশাতকে পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে পারবে, যদি সে নিজে জানে না যে, নিশাত কি সম্পূর্ণ সত্য বলছে? তবুও, তার চোখের দিকে তাকিয়ে, রাহাত ঠিক করেছিল—যতক্ষণ না নিশাত তার জীবনের সমস্ত কিছুর মুখোমুখি হয়ে সত্যি প্রকাশ করবে, সে তার পাশে থাকবে।

‎আর ঠিক তখনই, নিশাত এক গা dark ় অন্ধকারে চলে গেল। রাহাত তাকে দেখতে পেল না, কিছু মুহূর্তের জন্য নিশাত অদৃশ্য হয়ে গেল। সে এক অস্পষ্ট ছায়ার মতো অনুভূত হলো, যেন সে আর তার পাশে নেই। কিছুটা সময় পার হওয়ার পর, নিশাত ফিরে আসল। তার চোখে আরেক ধরনের অস্পষ্টতা ছিল। কিন্তু তার চোখে যা ছিল তা রাহাত জানত না। ‘‘তুমি কোথায় গিয়েছিলে?’’ রাহাত তার দিকে তাকিয়ে বলল।

‎‘‘এটা আমার একমাত্র পথ, রাহাত। তোমার চোখে আমি যে, এতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা সত্যি। কিন্তু তুমি যদি জানো, আমার মধ্যে এমন অনেক কিছু আছে যা তোমাকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে। আর আমি জানি, আজ না আজ, সেই ভয় তোমার কাছে চলে আসবে।’’ নিশাত একটু থেমে গেল।

‎‘‘তুমি যা বলছো, তা যদি সত্য হয়, তাহলে তুমি আমাকে আর তোমার মধ্যে ব্যবধান তৈরি করছো।’’ রাহাত নিষ্ঠুরভাবে বলল। নিশাত কাঁপছিল, কিন্তু এক মুহূর্ত পর সে বলল, ‘‘হয়তো আমাকে সত্যি বলতে হবে।’’

‎তারা তখন এক নির্জন স্থানে বসে ছিল। নিশাত এক গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, ‘‘আমি জানি, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো, কিন্তু আমার জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আমি কখনোই তোমাকে বলিনি। আমার জীবনে কিছু মুহূর্ত ছিল, যা আমাকে বদলে দিয়েছিল। একদিন, আমি এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়েছিলাম, যে আমার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। আর সে ব্যক্তিটি এখন আমার প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে।’’ নিশাত একটু থেমে বলল, ‘‘সে যে কারও হতে পারে, এবং আমি জানি, তুমি যদি তাকে জানো, তখন তোমার জন্যও সেটা এক বিপদ হয়ে দাঁড়াবে।’’

‎রাহাত শুনে, এক পলক চোখে চোখ রেখে বলল, ‘‘আমি তোমার পাশে আছি, নিশাত, যতটুকু খারাপ সময়ই আসুক না কেন। কিন্তু তোমাকে একা করতে দেব না। তুমি জানো না, তোমার সেই অন্ধকার অতীতকে একদিন সামনে এনে তোমার সামনে রাখা হবে। সে সময় আমি তোমার পাশে থাকব, আর তোমার কাছ থেকে সত্য বেরিয়ে আসবেই।’’

‎তাদের দুজনের কথা সারা পাহাড়ে অনুরণিত হচ্ছিল, কিন্তু কোনো শব্দ না হওয়ার মতো, যেন একটি নিরবতা ঘিরে রেখেছে তাদের। নিশাত জানত, এই পথে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক বিপদ, কিন্তু এই পথের শেষের দিকে কি তাদের ভালোবাসা জয়ী হবে, নাকি তারা আরও অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে যাবে? সময়ই বলে দেবে।

‎(চলবে…)

১০০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন