আজিজুল হক

কবিতা - রেলগাড়ির জানালায় দেশ, আর আমার ভিতরে তুমি

আজিজুল হক

চলে এসেছি বহুদূর,
কোচবিহারের মিঠে ভোর এখন
পেছনের দেশ —
আর সামনে কেবল কাঁপতে থাকা ট্র্যাক,
যার বুক চিরে ছুটছে ভবিষ্যৎ।

এখানে,
প্রতিটি স্টেশনে থামে শুধু শরীর,
মন থামে না…
মন পড়ে থাকে কোথাও—
তোমার ভেজা চোখের কোণে,
শেষ দেখা বিকেলের আলোয়,
সেই অপূর্ণ চুম্বনে।

পথে শুধু ভারতবর্ষ –
হিন্দি, ওড়িয়া, তেলেগু, কন্নড়
ধ্বনির ঢেউয়ে ভেসে যাই।
শাড়ির রঙে, মুখের আদলে,
হাসিতে, খাদ্যে, সাজসজ্জায় –
এতো পার্থক্য,
তবুও কোথাও অনন্ত অদ্ভুত সাদৃশ্য!

এক হাতে বই, অন্য হাতে স্মৃতির কিলবিল আনাগোনা,
হকারের গলায় ঝুলছে চা’য়ের ভার
বাচ্চার হাসি, কান্না, বায়না রকমফের, কিংবা কয়েকজন বুড়ো – বুড়ির গল্প
আনাচে কানাচে,
একই বগিতে বুনে নিচ্ছে ভারত।

উড়িষ্যার আকাশে তখন নেতাজির ডাক ,
কানে বাজে এক গোপন আহ্বান
“জ্বলে ওঠো!
তোমার ভালোবাসাও তো বিদ্রোহ!”

প্রতিটি ভাষা, প্রতিটি মুখ
তোমারই মতো একটু একটু করে
অপরিচিত হয়েও
অদ্ভুতভাবে আপন হয়ে ওঠে।

তোমার অভাবটা তখন ছায়ার মত পড়ে
পায়ের নিচে গড়িয়ে চলা রেলপথে।
মন চায় এক ঝাঁকুনিতে
সমস্ত স্মৃতি উড়িয়ে দিই
ভালোবাসার ভারতে।
আর আমার ভিতরে চলেছে
তোমার সঙ্গে এক অসমাপ্ত সংলাপ।
এত টান, এত দহন,
তবু কেউই কখনও পুরোটা হয়ে ওঠে না।

তোমার অভিমান,
আমার রাগ —
দু’জনেই যেন সেই ভারতবর্ষ,
যেখানে মানায় না একরঙা অনুভব।

এখন সেই উপকূল নেই,
তবু তার ঢেউ উত্তাল,
আমার ট্রেনের গতিতে—
প্রতিটি চাকার ঝঙ্কারে বাজে—
ভালোবাসা, অনুরাগ, অভিমান, বিদ্রোহ,
আর এক অভিমানী ভারতবর্ষ।
….

পরে পড়বো
৪৬
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন